তদন্তের অপেক্ষায় যুদ্ধাপরাধের ৬৭০ অভিযোগ
৩১ অক্টোবর ২০১৯আপিল বিভাগে বৃহস্পতিবার জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার মধ্য দিয়ে বলা যায় অষ্টম মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হলো৷ যদিও তিনি এখন রিভিউ এবং রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সুযোগ পাবেন৷
এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে ছয়টি মামলা৷ এর মধ্যে জামায়াতের সাবেক আমীর মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সাবেক দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সাবেক সদস্য মীর কাসেম আলী এবং বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে৷ ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের সাবেক নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড দিলেও আপিল ও রিভিউয়ে তার আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল আছে৷
আপিল শুনানি চলার মধ্যেই জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের মৃত্যু হয়েছে৷ ২৮টি আপিল এখনো নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে৷
ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা থেকে জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৭৪ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ হয়েছে৷ ট্রাইব্যুনালে রায় হওয়া ৪১ টি মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যা ৮৬ জন৷ তাদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে ৫৫ জনকে৷
ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এখন আমরা আরো ২৩টি অভিযোগের তদন্ত করছি৷ আর আমাদের কাছে তদন্ত করার মত ৬৭০টি অভিযোগ আছে তিন হাজার ৭১২ জনের বিরুদ্ধে৷ আমাদের কাছে এ পর্যন্ত চার হাজার ২১ জনের বিরুদ্ধে মোট অভিযোগ জমা পড়েছে সাত হাজার ৪৯০টি৷''
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, ‘‘আপিল নিষ্পত্তি হতেই অনেক সময় লাগছে৷ আজকে (বৃহস্পতিবার) যে মামলাটির আপিল নিষ্পত্তি হলো তাতে প্রায় তিন বছর লাগল৷ এভাবে প্রতিটি আপিল নিষ্পত্তিতে যদি সময় লাগে তাহলে অনেকেতো আপিল নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই মারা যাবেন৷ আমার বিবেচনায় যুদ্ধাপরাধের মামলার আপিল নিষ্পত্তির জন্য আলাদা বেঞ্চ করা প্রয়োজন৷''
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ প্রথম ট্রাইব্যুনালটি গঠন করা হয়৷ একটি ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচার কাজ শুরু হলেও ২০১২ সালের ২২ মার্চ আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়৷ দুইটি ট্রাইব্যুনাল একযোগে আড়াই বছর কাজ করে৷ ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দুইটি ট্রাইব্যুনালকে একিভূত করা হয়৷ এখন একটি ট্রাইব্যুনালই বিচার কাজ করছে৷ তুরিন আফরোজ মনে করেন, ‘‘ট্রাইব্যুনাল একটি হওয়ায় এখন বিচারে কিছুটা দেরি হচ্ছে৷ তবে মামলা তদন্তের গতি বাড়াতে হবে৷ তা না বাড়লে আপাতত আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করলে অর্থের অপচয় হবে৷ এজন্য তদন্ত সংস্থার জনবল এবং কাজের গতি বাড়াতে হবে৷''
তবে হান্নান খান বলেন, ‘‘ট্রাইব্যুনালে জনবল বাড়লে আমাদের তদন্তের গতি বাড়বে সত্য, কিন্তু তাতে ট্রাইব্যুনাল আরো বাড়াতে হবে৷ ট্রাইব্যুনাল বছরে সর্বোচ্চ পাঁচ-ছয়টি মামলার রায় দিতে পারে৷ আমরা তার চেয়ে অনেক বেশি মামলা এখন ট্রাইব্যুনালে তদন্ত শেষে পাঠাচ্ছি৷''