যুদ্ধাপরাধী আজহারের ফাঁসি আপিলেও বহাল
৩১ অক্টোবর ২০১৯প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের আপিল বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এক মিনিটে রায়ের সংক্ষিপ্তসার জানিয়ে দেয়৷ আপিল আংশিক মঞ্জুর হলেও তাতে সংখ্যাগরিষ্ঠের রায়ে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া সর্বোচ্চ সাজা বহাল থাকে৷
সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ের ফলে মুক্তিযুদ্ধকালীন রংপুর অঞ্চলের ত্রাস আজহারকে ফাঁসিকাষ্ঠেই যেতে হবে৷ সে সময় তার নেতৃত্বেই বৃহত্তর রংপুরে গণহত্যা চালিয়ে ১৪ শ'র বেশি মানুষকে হত্যা, বহু নারীকে ধর্ষণ ও অপহরণ, নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছিল বলে এ মামলার বিচারে উঠে আসে৷
প্রায় পাঁচ বছর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে তিনটি অভিযোগে আজহারের মৃত্যুদণ্ড এবং দুই অভিযোগে মোট ৩০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল৷ আপিলের রায়েও রংপুর অঞ্চলে গণহত্যা ও হত্যার তিন ঘটনায় তার মৃত্যুদণ্ড সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মতের ভিত্তিতে বহাল থাকে৷
অপহরণ ও আটকে রেখে নির্যাতনের আরেকটি ঘটনায় ট্রাইব্যুনালের দেওয়া পাঁচ বছরের সাজাও সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মতের ভিত্তিতে বহাল রাখা হয়৷ আর বহু নারীকে রংপুর টাউন হলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্যাতন কেন্দ্রে ধর্ষণের জন্য তুলে দেওয়ায় ঘটনায় ট্রাইব্যুনালের রায়ে আজহারের ২৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হলেও এ অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দিয়েছে আপিল বিভাগ৷
২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার শুরুর পর আপিলে আসা এটি অষ্টম মামলা, যার ওপর চূড়ান্ত রায় হলো৷ নিয়ম অনুযায়ী আসামি এই রায় পর্যালোচনার আবেদন করতে পারবেন৷ তাতে সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত না বদলালে আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন৷ তাতেও তিনি বিফল হলে সরকার সাজা কার্যকরের পদক্ষেপ নেবে৷
রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আসামির প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘চারজন জাজের ভেতরে তিনজন জাজ একমত হয়ে ফাঁসি বহাল রেখেছেন, আরেকজন দ্বিমত পোষণ করেছেন৷ এরপর আমরা পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে রিভিউ করব, আমরা আশাবাদী যে রিভিউতে অন্তত ফাঁসির আদেশটা থাকবে না৷''
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘‘এসব (যুদ্ধাপরাধ) মামলার আসামিরা সবাই একই কথা বলেছে যে তাদের রেসপনসিবিলিটি নাই, ইত্যাদি ইত্যাদি৷ কিন্তু এই মামলায় প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষীর ওপর ভিত্তি করেই তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে৷ যুদ্ধাপরাধী এটিএম আজহারুল ইসলামকে যে তিনটি চার্জে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, তার তিনটি চার্জই বহাল আছে এবং তার ফাঁসির রায়ও বহাল আছে৷''
একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ২২ আগস্ট মগবাজারের বাসা থেকে আজহারকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ পরের বছর ১২ নভেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার যুদ্ধাপরাধের বিচার৷ বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগে রায় ঘোষণার সময় আজাহার গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে ছিলেন৷
এসআই/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)