1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দলের নেতৃত্বে খালেদা জিয়াই থাকবেন

৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

যে কোনো পরিস্থতিতে বিএনপির নেতৃত্ব খালেদা জিয়ার হাতেই থাকবে৷ দুর্নীতির মামলায় তাঁকে যদি কারাগারেও যেতে হয়, তিনি সেখানে বসেই দলের নেতৃত্ব দেবেন৷ রায়ের দিন কঠোর প্রতিবাদ জানাতে মাঠে থাকার প্রস্ততি রয়েছে তাদের৷

https://p.dw.com/p/2s86K
Bangladesch  Khaleda Zia  Dhaka  Politik
ছবি: bdnews24.com

সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবদী দল বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার রায় ৮ ফেব্রুয়ারি৷ ঐ দিন কী রায় হবে, তা নিয়ে সারাদেশেই এখন নানা আলোচনা চলছে৷ রায়ের দিন বিএনপির নেতা-কর্মীরা যাতে মাঠে না থাকতে পারে, তার জন্য সরকারের দিক থেকে প্রস্তুতি আছে৷ চলছে গ্রেপ্তার অভিযানও৷ বিপরীতে বিএনপিও প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ এরইমধ্যে ঢাকায় শনিবার নির্বাহী কমিটির বৈঠক এবং রবিবার রাতে স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক করেছেন খালোদা জিয়া৷ তারপর সোমবার সকালে তিনি সিলেট সফরে যান৷

খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ নেতারা রয়েছেন৷ তাঁদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সিলেট সফরের উদ্দেশ্য রাজনীতি নয়৷  খালেদা জিয়া হজরত শাহজালাল ও শাহ পরাণের মাজার জিয়ারত করবেন৷ মাজার জিয়ারত শেষে রাতেই ঢাকায় ফেরার আছে তাঁর৷''

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে বিদেশ থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই ঢাকার রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)৷

‘যেখানে রাজনৈতিক রায় হবে সেখানে বিচারের কোনো প্রত্যাশা নাই’

মামলায় ২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়সহ ছ'জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদক-এর উপ-পরিচালক হারুন অর রশীদ৷ ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালত৷ মামলায় খালেদা জিয়া ও তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমান ছাড়া বাকি আসামিরা হলেন মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান৷

মামলায় ৩২ জনের সাক্ষী এবং উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি মামলার রায়ের দিন ধার্য করেছেন ঢাকার বকশি বজারে অবস্থিত বিশেষ আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামান৷ বিএনপি নেতারা জানান, রায়ের দিন খালেদা জিয়া আদালতে উপস্থিত থাকবেন৷

মামলাটি দণ্ডবিধির ৪০৯ এবং ১০৯ ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধরায় করা৷ দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারার অপরাধ প্রমাণ হলে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান আছে৷ আর দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধরায় সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ডের বিধান আছে৷

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘এই মামলায় বিচারিক রায় হবে না, রাজনৈতিক রায় হবে৷ দেশের মানুষ জানে কী রায় হবে৷ তাই রায় কী হবে তা নিয়ে কোনো টেনশন মানুষের মধ্যে নাই৷ যেখানে রাজনৈতিক রায় হবে সেখানে বিচারের কোনো প্রত্যাশা নাই৷''

৮ ফেব্রুয়ারি রায়ের দিন বিএনপির প্রস্তুতি কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘টেনশন তো সরকারের মধ্যে৷ তারা আমাদের নেতা-কর্মীদের ঘেষণা দিয়ে আটক করছে৷ রাজনৈতিক মামলার রাজনৈতিক রায় হবে৷ দেশের মানুষ গণতন্ত্রের জন্য প্রতিরোধ গড়ে তুলবে৷''

‘খালেদা জিয়ার জেল হলে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করবে এমন কোনো ইঙ্গিত এখনো নেই’

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘খালেদা জিয়া যেখানেই থাকুন না কেন সেখান থেকেই দলের নেতৃত্ব দেবেন৷ বিএনপিও একইসঙ্গে আন্দোলন এবং নির্বাচন করবে৷ তবে সেই নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে৷''

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ওয়ান ইলেভেনের সময়ও ম্যাডাম খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেয়া হয়েছিল৷ তিনি তখন কারাগারে বসেই দলকে পরিচালনা করেছেন, দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন৷ দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চেয়ারপার্সন যদি কারাগারে যান, সেখান থেকেই তিনি দল পরিচালনা করতে পারেন৷ তবে তখন মহাসচিবের দয়িত্ব একটু বেড়ে যায়৷ তবে এখনো ৮ তারিখ আসেনি, রায় হয়নি৷ রায় কী হয় তা না দেখে এখই দলের নেতৃত্ব নিয়ে কথা বলা যায় না৷ তবে চেয়ারপার্সন আগেও জেলে গেছেন৷ জেলে গেলে দল পরিচালনায় কোনো বাধা হয় না৷ এবারো হবে না৷''

তিনি বলেন, ‘‘আমরা আশা করি সরকারের একটি সাজানো মামলার রায়ে নেগেটিভ রায় আসবে না৷ কিন্তু এরপরও যদি সেরকম কিছু হয়, তাহলে আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি আছে৷ সিদ্ধান্ত নেয়া আছে৷ আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সেটা মোকাবেলা করব৷ রাজনৈতিক প্রতিরোধ গড়ে তুলব৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘ খালেদা জিয়াসহ জোট নেতা-কর্মীদের ওপর যেভাবে মিথ্যা মামলা আর নির্যাতন হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে সরকার বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে চায়৷ কিন্তু এবার সেটা পারবে বলে মনে হয় না৷''

এদিকে অনলাইন লাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের রাজনৈতিক প্রতিবেদক সালমান তারেক শাকিল বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকান্ডের খোঁজ রাখছেন৷ তিনি খবর সংগ্রতে খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরের সঙ্গেই সিলেট গেছেন৷ তিনি সেখান থেকে ডয়চে ভেলেকে টেলিফোনে জানান, ‘‘বিএনপির সব তৎপরতাই এখন ৮ ফেব্রুয়ারির রায়কে সামনে রেখে৷ নির্বাহী কমিটি এবং স্থায়ী কমিটির বৈঠক এই বিষয় নিয়েই হয়েছে৷ আমরা জানতে পেরেছি যে খালেদা জিয়াকে কারাগারে যেতে হলে দলের স্থায়ী কামিটি যৌথভাবে দল চালাবে৷ গঠনতন্ত্র অনুয়ায়ী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান যেহেতু সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান (তিনি দীর্ঘদিন ধরে লান্ডনে আছেন), তাই তিনি হবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান৷ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা তাঁর সঙ্গে কথা বলেই আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবেন৷''

‘রায় কী হয় তা না দেখে এখই দলের নেতৃত্ব নিয়ে কথা বলা যায় না’

শাকিল জানান, ‘‘বিএনপির সব ইউনিটকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তারা যেন সর্বশক্তি নিয়ে রায়ের দিন ৮ ফেব্রুয়ারি মাঠে থাকেন৷ খালেদা জিয়া আদালতে হাজিরার সময় নেতা-কর্মী নিয়ে যান৷ তবে রায় খালেদা জিয়ার বিপক্ষে গেলে প্রতিবাদের ধরনটি কেমন হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘খালেদা জিয়ার জেল হলে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করবে এমন কোনো ইঙ্গিত এখনো নেই৷ বরং খালেদা জিয়া নির্বাচনের ওপরই জোর দিচ্ছেন৷ তবে নির্বাচনের জন্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে তিনি এখনো অনঢ়৷''

খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড হলেই যে তিনি নির্বাচনের অযোগ্য হবেন, তা নয়৷ বাংলাদেশের সংবিধনের ৬৬(১) অনুচ্ছেদে সংসদ নির্বাচনে অযোগ্যতার ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অন্যূন দুই বৎসরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তাঁহার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বৎসরকাল অতিবাহিত না হইয়া থাকে...৷'

কিন্তু বিচারিক আদালতের রায় যদি আপিল আদালত স্থগিত করে আপিলের জন্য গ্রহণ করে, তাহলে নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্য এই অনুচ্ছেদ বাধা নয়৷ তাই খালেদা জিয়ার যদি শাস্তি হয়ও, তারপরও আপিলের মাধ্যমে তাঁর রাজনৈতি জীবন সচল রাখায় আশাবাদী বিএনপি নেতারা৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান