খালেদাকে কি নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হবে?
৪ নভেম্বর ২০১৭সরকারের উচ্চমহলের কার্যকলাপ, তৎপরতা এবং বক্তব্য বিবৃতিতে বিষয়টি স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় বলে মনে করছেন বাংলাদেশের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, ‘‘মামলার রায়ে আমার সাজা হবে এবং আমাকে কাশিমপুর কারাগারে রাখা হবে বলে ইতিমধ্যে কোনো কোনো মন্ত্রী প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন৷ কোনো কোনো মন্ত্রী এবং শাসক দলের কোনো কোনো নেতা প্রায় নিয়মিত হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন, আমাকে রাজনীতির অঙ্গন থেকে বিদায় করে দেওয়া হবে৷''
খালেদা জিয়ার এমন শঙ্কার বিষয়ে জানতেই চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিচারকে নিজের গতিতে চলতে দেয়া উচিৎ৷ আমরা বিশ্বাস করি আদালতে তিনি ন্যায় বিচার পাবেন৷ আদালত তাঁর অপরাধ বিবেচনা করে রায় দেবেন৷ এ নিয়ে খালেদা জিয়ার শঙ্কা প্রকাশ করার কিছু নেই৷ উনি আসলে রাজনৈতিকভাবে জনমতকে পক্ষে নিতে এমন বক্তব্য দিয়েছেন৷''
প্রসঙ্গত, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে ধরনের মামলা চলছে, সেই একই ধরনের মামলা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও ছিল৷ কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সেই মামলা প্রত্যাহার করা হয়৷ এই বিষয়ে জানতে চাইলে জনাব হোসেন বলেন, ‘‘আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি, মামলা আদালতের মাধ্যমেই নিষ্পত্তি হওয়া উচিৎ৷ ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বিরুদ্ধে যে মামলা ছিল তা রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহার করা ঠিক হয়নি বলেই আমি মনে করি৷''
গত বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে বিএনপি চেয়ারপারসন আদালতে বক্তব্য তুলে ধরেন৷ পরে তাঁর সময় আবেদনের প্রেক্ষিতে আত্মপক্ষ সমর্থনে অসমাপ্ত বক্তব্য রাখার জন্য ৯ নভেম্বর দিন ধার্য করে দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান৷ তবে এই মামলায় স্থায়ী জামিন চেয়ে খালেদা জিয়ার করা আবেদন না-মঞ্জুর করেছে আদালত৷
খালেদা জিয়ার শঙ্কার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল-আলম হানিফ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘উনারতো আদালতের প্রতি আস্থা নেই৷ উনি আইন মানতে চান না৷ একটি মামলায় উনি ১৪৩ বার সময় নিয়েছেন৷ ৯ বছর ধরে একটি মামলা চলছে৷ আর কতবছর চলবে? উনি কি এই মামলা সারাজীবন চালাতে চান৷''
হানিফ বলেন, ‘‘আসলে উনি অপরাধ করেছেন বলেই ভয় পাচ্ছেন, তাঁর শাস্তি হতে পারে? অপরাধ না করলেতো তাঁর এত সময়ের দরকার ছিল না৷ নানা তালবাহানায় খালি সময় বাড়াচ্ছেন৷ এখন আদালত কিছু বললেই উনি বলেন, সরকার তড়িঘড়ি করছে৷ এগুলো আসলে ঠিক নয়৷''
তবে হানিফের এই বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ নেতারা বললেইতো আর হবে না৷ সারাদেশের মানুষ কি ভাবছে? বেগম খালেদা জিয়া যে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাঁর যৌক্তিক ভিত্তি রয়েছে৷ তিনি তাঁর বক্তব্যের সমর্থনে তথ্য উপাত্তও উপস্থাপন করেছেন৷''
আসলে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় কি হতে যাচ্ছে? এমন আলোচনা এখন সাধারণ মানুষের মধ্যে৷ এই মামলায় যদি খালেদা জিয়ার সত্যি শাস্তি দেয়া হয় তাহলে কি হবে? উনি কি সামনের নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন? সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কোন মামলায় যদি কারো দুই বছরের বেশি শাস্তি হয় তাহলে তিনি নির্বাচনে অযোগ্য হবেন৷ আমাদের আইন তাই বলে৷''
সুনির্দিষ্টভাবে খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘একইভাবে উনার যদি দুই বছরের বেশি শাস্তি হয় তাহলে সামনের নির্বাচনে তিনি অংশ নিতে পারবেন না৷'' উচ্চ আদালতে আপিল করা হলেও কি অযোগ্য থাকবেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আদালত কী বলে সেটার উপর নির্ভর করবে৷ আমি মনে করি যদি এই মামলায় তাঁর শাস্তি হয় তাহলে তিনি আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না৷''
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷