1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খালেদার সঙ্গে স্বেচ্ছায় কারাবরণ!

২৮ জানুয়ারি ২০১৮

আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা হবে৷ রায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিপক্ষে গেলে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি তাঁর সঙ্গে স্বেচ্ছায় কারাবরণেও প্রস্তুত সিনিয়র নেতারা!

https://p.dw.com/p/2resf
Bangladesch Dhaka Khaleda Zia
ছবি: picture-alliance/Photoshot/M. M. Kamal

রায়কে ঘিরে উত্তাপ এরই মধ্যে উত্তাপ ছড়িয়েছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে৷ খালেদা জিয়াকে জেলে যেতে হবে কি হবে না, তার ওপর ভবিষ্যৎ কর্মসূচি নির্ভর করছে দুই বড় রাজনৈতিক দলেরই৷

 

উদ্বিগ্ন বিএনপি

বিএনপি এরই মধ্যে রায় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷

শুক্রবার রাতে খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে দলটির স্থায়ী কমিটির জরুরি বেঠক হয়েছে৷ সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, তাঁরা রায় দেখে কর্মসূচি দেবেন৷ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কী কর্মসূচি হতে পারে তা স্পষ্ট করেননি৷

তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘‘খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানো হলে বিএনপির সিনিয়র নেতারা স্বেচ্ছায় কারাবরণ করবে৷''

Bangladesch Begum Khaleda Zia
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াছবি: Getty Images/M. Uz Zaman

স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘হঠাৎ করেই খালেদা জিয়ার রায় আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করার বিষয়টি শুধু অপ্রত্যাশিতই নয়, রহস্যজনকও৷ স্থায়ী কমিটি মনে করে, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি ও খালেদা জিয়াকে নির্বাচন প্রক্রিয়ার বাইরে রাখার জন্য দ্রুত রায় ঘোষণা সরকারের অপচেষ্টার অংশ৷''

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘স্থায়ী কমিটি মনে করে, জাল-জালিয়াতি করে বিচারের নামে প্রহসন এবং বিরোধীদলকে দমন করতেই আদালতকে ব্যবহার করার আরেকটি নোংরা দৃষ্টান্ত স্থাপিত হতে যাচ্ছে৷ বিচার বিভাগ ও আইনের শাসন নিয়ে উদ্বিগ্ন, ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ তারা৷''

তিনি সবাইকে এই বিচারের বিরুদ্ধে সেচ্চার হবার আহ্বান জানান৷

দুর্নীতির এই মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড৷

 

প্রস্তুত সরকার ও আওয়ামী লীগ

মামলার রায়ে খালেদা জিয়ার যদি শাস্তি হয়, তাহলে বিএনপি কী প্রতিক্রিয়া দেখাবে তা নিয়ে এরই মধ্যে ভাবতে শুরু করেছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ৷

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল শুক্রবার সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার রায়কে ঘিরে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷'' 

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে খবর আছে, রায়ের দিন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা হতে পারে৷ আইন সবার জন্য সমান৷ অপরাধ যে-ই করুক না কেন তার শাস্তি হবে৷''

জানা গেছে, পুলিশ এরই মধ্যে আগাম গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে৷ বিএনপি রায়ের দিন কী ধরনের তৎপরতা চালাতে পারে, সে সম্পর্কে জেনে ঢাকাসহ সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যবস্থা নেয়া হবে৷

এদিকে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রবিবার বলেছেন, ‘‘কেউ যদি রায়কে ঘিরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে জনগণ তা প্রতিহত করবে৷''

জানা গেছে, রায়ের দিনতো বটেই, রায়ের আগে থেকেই আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মাঠে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে৷

এদিকে, খালেদা জিয়ার শাস্তি হলে তাকে কারাগারে যেতে হবে কিনা তা নিয়ে আইনগতভাবেও ভাবছে বিএনপি৷  তাৎক্ষনিক আপিল আবেদনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার জামিনে থাকা নিয়ে ভাবছেন তারা৷

 

‘এক বছরের বেশি কারাদণ্ড হলে কারাগারে পাঠানো ছাড়া আর কোনো পথ নেই’

কারাগারের প্রস্তুতি

কারাসূত্র জানিয়েছে, ওই মামলার রায়কে ঘিরে কারাগারে এখনো আলাদা কোনো প্রস্তুতি নেই৷ কোনো ভবনকে সাবজেল করা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে একজন উর্ধ্বতন কারা কর্মকর্তা জানান, ‘‘আমাদের কাছে এখনো এরকম কোনো নির্দেশনা নেই৷''

 

নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন খালেদা?

বাংলাদেশের সংবিধনের ৬৬(১) অনুচ্ছেদে সংসদ নির্বাচনে অযোগ্যতার ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘‘তিনি যদি নৈতিক স্খলনজনিত কোন ফৌজদারী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অন্যূন দুই বৎসরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তাঁহার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বৎসরকাল অতিবাহিত না হইয়া থাকে''৷

তবে বিচারিক আদালতের রায় যদি আপিল আদালত স্থগিত করে আপিলের জন্য গ্রহণ করে তাহলে নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্য এই অনুচ্ছেদ বাধা নয়৷  তাই খালেদা জিয়ার যদি শাস্তি হয়ও, তারপরও আপিলের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবন সচল রাখায় আশাবাদী বিএনপি নেতারা৷  

 

সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন!

এই মামলাটি দণ্ডবিধির ৪০৯ ও ১০৯, এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় করা৷

এ নিয়ে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল সময়ের অভাবে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেননি৷ কিন্তু সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে ধারায় মামলা তা প্রমাণ হলে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং সর্বনিম্ন ১৪ বছরের জেল৷’’ 

রেজাউল আরো বলেন, ‘‘আইন অনুযায়ী, কোনো মামলায় এক বছর বা তার কম সময়ের শাস্তি হলে আপিল করার শর্তে জামিন পাওয়ার সুযোগ আছে৷ কিন্ত এক বছরের বেশি কারাদণ্ড হলে কারাগারে পাঠানো ছাড়া বিচারিক আদালতের আর কোনো পথ নেই৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘অপরাধ প্রমাণ সাপেক্ষে আদালত ভিন্ন মেয়াদেও শাস্তি দিতে পারেন৷ তাই রায়ের আগে ঠিক কী হবে তাতো বলা যায়না৷''

খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দুর্নীতির মামলার যে ধারা আছে তাতে সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছরে জেল৷ সর্বনিম্ন জরিমানা৷ আর দণ্ডবিধির যে ৪০৯ ধারা আছে, তাতে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন৷ সর্বনিম্ন ১৪ বছরের জেল৷ কিন্তু আদালতে এই ধারা প্রমাণিত হয়নি৷ রাষ্ট্রপক্ষ দুর্নীতিও প্রমাণ করতে পারেনি৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘শাস্তি তো হয়নি৷ হবেও না আশা করি৷ তারপরও যদি শাস্তি হয় তাহলে আপিল করে খালেদা জিয়ার তাৎক্ষনিক জামিন পাওয়ার সুযোগ আছে৷ আমরা সব ধরনের প্রস্তুতিই নিয়ে রেখেছি৷"

‘যদি শাস্তি হয় তাহলে আপিল করে খালেদা জিয়ার তাৎক্ষনিক জামিন পাওয়ার সুযোগ আছে’

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে বিদেশ থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ঢাকা রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)৷

২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন অর রশীদ৷ ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালত৷

মামলায় খালেদা জিয়া ও তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমান ছাড়া বাকি আসামিরা হলেন মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান৷

এই মামলায় ৩২ জনের সাক্ষী এবং উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত বৃহস্পতিবার মামলার রায়ের দিন ৮ ফেব্রুয়ারি ধার্য করেন ঢাকার বকশি বাজারে বিশেষ আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামান৷

এ সময় খালেদা জিয়া এজলাসে উপস্থিত ছিলেন৷ এই মামলায় তিনি স্থায়ী জামিনে আছেন৷

দু'বছর পর ২০১০ সালের ৮ আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা করে দুদক৷ অভিযোগ, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকার অবৈধ লেনদেন৷ এ মামলাটিও বর্তমানে বিচারাধীন৷

এছাড়া, খালেদা জিয়ার বিরদ্ধে আরো ১৪টি মামলার বিচার শুরুর জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়েছে৷

 

বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় কোনো ধাক্কা আসছে কি? মন্তব্য লিখুন নিচের ঘরে৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য