যে কারণে অন্যদের চেয়ে আলাদা ‘ড্রিমলাইনার’
৫ ডিসেম্বর ২০১১দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে যাত্রা শুরু করল বোয়িং ৭৮৭ ড্রিম লাইনার৷ মার্কিন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং এই ড্রিমলাইনারের পেছনে খরচ করেছে কয়েক বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ বিভিন্ন রকম গবেষণা, পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ৭৮৭ এবার যাত্রী সেবায় নিয়োজিত৷ কয়েকটি বিমান সংস্থা ইতিমধ্যে ড্রিমলাইনারকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার শুরু করেছে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমান যাত্রায় নতুন এক যুগের সূচনা করেছে বোয়িং৷ প্রশ্ন জাগতে পারে, কী আছে ড্রিমলাইনারে যা অন্য সবার চেয়ে এটিকে আলাদা করেছে? চলুন তাহলে বোয়িং'এর এই নব সংযোজনের বিশেষত্বগুলোর দিকে নজর দেওয়া যাক:
প্লাস্টিক বিমান (একধরনের)
ড্রিমলাইনার তৈরিতে ৫০ শতাংশ যৌগিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়েছে৷ ফলে গতানুগতিক অন্যান্য বিমানের চেয়ে এটি হালকা৷ সাধারণ বিমানে অ্যালুমিনিয়ামের ব্যবহার অনেক বেশি করা হয়, তাই ওজনও বেশি হয়৷ অবশ্য বিমানে আগেও যৌগিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়েছে, কিন্তু তার পরিমাণ খুব বেশি ছিল না৷ ড্রিমলাইনার চলতি বাজারের অন্যান্য বিমানের চেয়ে হালকা, কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী৷
ভেতরের পরিবেশ
অন্যান্য বিমানের তুলনায় ড্রিমলাইনারে কেবিন প্রেশার এবং আর্দ্রতা বেশি৷ ফলে এই বিমানের যাত্রীদের কাছে মনে হবে, তাঁরা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ছয় হাজার ফুট উপরে আছেন৷ অন্যান্য যাত্রীবাহী বিমানের কেবিনে সাধারণত ৮ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থানের মত পরিবেশ তৈরি করা হয়৷ বোয়িং জানিয়েছে, কেবিনের এই পরিবেশ বিমানযাত্রীদের কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যা থেকে রেহাই দেবে৷ দীর্ঘযাত্রায় আরোহীরা আগের মতো ক্লান্তি অনুভব করবেন না৷ চোখ শুকিয়ে যাওয়া কিংবা মাথাব্যথার হারও আগের তুলনায় কমে যাবে৷
স্বাচ্ছন্দ্যে অবস্থান
বিমানে চড়লে শুরুতেই অনেকের চোখে একটি বিষয় ধরা পড়ে৷ আসনগুলো একটি অপরটির খুব কাছে চাপানো৷ বসার পর সামনের দিকে একেবারেই জায়গা থাকে না৷ বোয়িং-এর প্রধান পাইলট ব়্যান্ডি নেভিল জানালেন, ড্রিমলাইনারে আরোহীরা স্থানস্বল্পতা একেবারের অনুভব করবেন না৷ আরোহীদের মনে হবে না, যে তারা বোধহয় একটি টিউবের মধ্যে চাপাচাপি করে ঢুকে পড়েছেন৷ ড্রিমলাইনারের আসনে পর্যাপ্ত জায়গার পাশাপাশি মাথার উপরে লাগেজ রাখার তাকটিও অন্য যেকোন বিমানের তুলনায় বড়৷
জ্বালানি সাশ্রয়ী
বোয়িং ৭৮৭ একই আকৃতির অন্য বিমানের চেয়ে ২০ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয়ী৷ এই সুবিধার কারণে উড়াল সংস্থাগুলোর খরচ অনেক কমবে এবং অপেক্ষাকৃত বেশি দূরত্বের গন্তব্যে বিরতিহীনভাবে ড্রিমলাইনার ব্যবহার সম্ভব হবে৷ বোয়িং কর্মকর্তা পল শেরিড্যান এই প্রসঙ্গে বলেন, বোয়েং ৭৮৭ এর আকারের একটি বিমান সামান্য জ্বালানি সাশ্রয়ী হলেই তা সামগ্রিক খরচের উপর বড় প্রভাব ফেলতে সক্ষম৷ এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের মতে, বিরতিহীন দীর্ঘভ্রমণের সুবিধা অনেক যাত্রীই নিতে চাইবেন৷ কেননা এটি সময়সাশ্রয়ীও বটে৷
ককপিটের বিশেষত্ব
বিমানের পাইলটদের জন্যও বিশেষ কিছু সুবিধা যোগ হয়েছে ড্রিমলাইনারে৷ নেভিল জানান, এই বিমান নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সহজ৷ তাছাড়া আগে যেসব তথ্য দেখতে পাইলটদেরকে উপরের দিকে তাকাতে হত, সেগুলো এই বিমানে পাওয়া যাবে সামনের গ্লাসেই৷ ফলে বাইরের দিকে নজর রাখতে রাখতেই অন্যান্য তথ্যও চোখের সামনে ভেসে উঠবে৷
বড় জানালা
ড্রিমলাইনের জানালাগুলো ১৯ ইঞ্চি লম্বা৷ একই আকারের অন্যান্য বিমানের তুলনায় এটির জানালা ত্রিশ শতাংশ বড়৷ মজার বিষয় হচ্ছে, এসব জানালায় গতানুগতিক সেই প্লাস্টিক শেডের দেখা মিলবে না৷ বরং এটি অনেক আধুনিক৷ ইলেকট্রনিক বোতাম চেপেই জানালা বন্ধ করা যাবে কিংবা প্রয়োজন অনুযায়ী ছায়া তৈরি করা যাবে৷ বিমান ক্রুরাও জানালাগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন দূর থেকে৷ ফলে আগের মতো, হঠাৎ সূর্যের আলোয় আরোহীর ঘুম ভাঙার সুযোগ থাকছে না ড্রিমলাইনারে৷
সর্বশেষ যে বিষয়টি উল্লেখযোগ্য সেটি হচ্ছে, ড্রিমলাইন ৭৮৭ এর সকল বিমানকেই একইধরনের রাখার চেষ্টা করা হয়েছে৷ উড়াল সংস্থাগুলো চাইলে কেবিনে পরিবর্তন আনতে পারেন, কিন্তু সেই পরিবর্তন সীমিত পর্যায়ে রাখতে চেষ্টা করেছে বোয়িং৷
ও হ্যাঁ, ড্রিমলাইনারে চড়লে কথা একটু আস্তে বলতে হবে৷ অন্য বিমানের চেয়ে এটি শব্দ করে কম৷ কেবিনে আপনার কথা তাই সহজেই একটু দূরের কেউ শুনে ফেলতে পারেন৷
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক