1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
ব্যবসা-বাণিজ্যবাংলাদেশ

মূল্যস্ফীতি নিয়ে মানুষকে আশ্বস্ত করতে ব্যর্থ বাজেট

সমীর কুমার দে ঢাকা
৭ জুন ২০২৪

এবারের বাজেটে মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর খরচের বোঝা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা৷ বাজেটে আবারও কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার তীব্র সমালোচনা হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/4gnOP
বাংলাদেশ টাকা
নতুন বাজেটে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন খরচের ওপর নতুন করে নানান রকম করারোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী৷ এর ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের মানুষের ওপর চাপ আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছেছবি: MD Mehedi Hasan/ZUMA Press/picture alliance

মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার যে কথা বলা হয়েছে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট রূপরেখা নেই৷ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আগামী ৬ মাস সময় চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবু হাসান মাহমুদ আলী৷

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সার্বিকভাবে আর্থিক খাতের জন্য এ সময়ে কিছু শক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার দরকার ছিল৷ ব্যাংক খাতের সংস্কার জরুরি৷ অপ্রিয় কিছু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে লোকজন খুশি হতো৷ মানুষের আস্থা বাড়ত৷ তবে কোনো সংস্কারের উদ্যোগ নেই, শক্ত ব্যবস্থার কথা নেই৷ কর্মসংস্থানে সবচেয়ে ভালো ভূমিকা রাখে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত৷ এখন এ খাত ঋণ না পেলে কর্মসংস্থান হবে কী করে? আর ব্যবসা-বাণিজ্য না হলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর আদায় করবে কীভাবে? ব্যবসা করতে না পারলে মানুষ কর, ভ্যাট দেবে কোত্থেকে৷ এর মানে মূল্যস্ফীতি কমবে না, আবার কর্মসংস্থানও বাড়বে না৷ ফলে শুধু আশ্বাসে তো আর স্বস্তি মিলবে না৷ দৃশ্যমান পদক্ষেপ দরকার ছিল৷''

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য অর্থমন্ত্রী ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট উপস্থাপন করেন৷

অপ্রিয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে লোকজন খুশি হতো: সালেহউদ্দিন

আরও চাপে পড়বে মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষ

নতুন বাজেটে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন খরচের ওপর নতুন করে নানান রকম করারোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী৷ এর ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের মানুষের ওপর চাপ আরও বাড়বে৷ প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারে খরচও বাড়বে৷ শুক্রবার রাত ১২টা থেকেই কার্যকর হচ্ছে নতুন কল রেট৷ যদিও মোবাইল ফোন এখন আর বিলাসিতা নয়, বরং জরুরি প্রয়োজন৷ সব শ্রেণির মানুষই এর ব্যবহারকারী৷ শুধু মোবাইল ফোন নয়, আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আয় বাড়াতে তিনি মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের অতি প্রয়োজনীয় অনেক পণ্য ও সেবায় শুল্ক-কর বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন৷ তিনি সাধারণ মানুষের মেট্টোরেলের ভাড়ায় মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) মওকুফের ঘোষণা দেননি৷ ফলে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হলে পরের দিন অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে মেট্টোরেলে চড়তে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে যাত্রীদের৷

অবশ্য ধান, চাল, গম, আটা, ময়দাসহ নিত্যপণের ওপর উৎসে কর ২ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করার কারণে মধ্যবিত্তের জন্য খানিকটা স্বস্তি হয়তো আসবে, কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে ঠিকই বাড়বে করের চাপ৷ ব্যবসায়ীরা এসব পণ্যের দাম কমাবে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে৷

সরকার এবার করের সর্বোচ্চ হার ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করেছে৷ ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, নতুন করে করারোপ ও কর ছাড়ের বিবেচনায় এটা মধ্যবিত্তের ওপর চাপ বাড়ানোর বাজেট৷ ভ্যাটের মতো পরোক্ষ কর মানে এর বোঝা সাধারণ মানুষের ওপরই পড়বে৷

অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বাজেট প্রণয়ন করতে গিয়ে মূল্যস্ফীতির চাপ, সবার জন্য উপযুক্ত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য নিরাপত্তা, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ, এলডিসি থেকে উত্তরণ, ব্যবসা প্রক্রিয়া সহজ করা, বিনিয়োগ ও শিল্পের প্রসার, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন প্রেক্ষাপট বিবেচনা করা হয়েছে৷ সামাজিক নিরাপত্তার ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা বিশেষ অগ্রাধিকার পেয়েছে৷ নতুন অর্থবছরে অনেক আশার কথা শুনিয়েছেন অর্থমন্ত্রী৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ নাইমুল ওয়াদুদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই বাজেটে আমি সাধারণ মানুষের জন্য কোনো স্বস্তির জায়গা দেখিনি৷ বরং পরোক্ষ যে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে সেটা সাধারণ মানুষের উপরেই যাবে৷ এতে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বেড়ে যাবে৷ অর্থমন্ত্রী মূল্যস্ফীতি কমানোর কথা বলেছেন, অথচ এসব দেখে মনে হচ্ছে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যেতে পারে৷ চাপে পড়তে পারেন সাধারণ মানুষ৷''

সমালোচনার মুখে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ

বাজেটে আবারও কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার সমালোচনা করেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)৷ এছাড়া সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা এর সমালোচনা করেছেন৷

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘‘আয়করের সর্বোচ্চ হার যেখানে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হলো, সেখানে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে৷ আবার তাদের কেউ প্রশ্ন করতে পারবে না৷ এটা নৈতিক ও অর্থনৈতিক কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ যারা নিয়মিত কর দেন, এর মধ্য দিয়ে তাদের তিরস্কৃত করা হচ্ছে৷''

কালো টাকা উৎপাদন খাতে বিনিয়োগ করতে হবে: হাতেম

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে টিআইবি৷ টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মাত্র ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার এমন সুবিধা সৎ ও বৈধ আয়ের করদাতাকে নিরুৎসাহিত করার সংস্কৃতি গড়ে তোলার পাশাপাশি এর আওতায় ঘোষিত অর্থ ও সম্পদের ব্যাপারে কোনো কর্তৃপক্ষের প্রশ্ন করার সুযোগ না রাখা দেশে দুর্নীতি সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে ভূমিকা রাখবে৷ একইসঙ্গে, এই সুযোগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন দলের নির্বাচনি ইশতেহারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার যে অঙ্গীকার, যা প্রায়শই সরকার প্রধানসহ দলের শীর্ষ নেতারা পুনরাবৃত্তি করে থাকেন, সেই অঙ্গীকারকে প্রহসনে পরিণত করেছে৷ এছাড়া এই সুযোগ আমাদের বিদ্যমান সংবিধানের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক৷''

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি এম এ হাতেম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা এই সুযোগ দেওয়ার পক্ষে না৷ কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে আমরা দেখছি, সরকার এই সুযোগ দিচ্ছে, কিন্তু কেউ সুযোগ নেয় না৷ কারণ যারা কালো টাকার মালিক তারা তো টাকা বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে৷ তারপরও যেহেতু সরকার সুযোগটি দিয়েছে, তাতে যদি কোন কালো টাকার মালিক এই সুযোগ নিয়ে তাদের টাকাটা বৈধ চ্যানেলে আনেন৷ এ কারণে আমরা আপত্তি করিনি৷ কিন্তু আমরা বলেছি, কেউ কালো টাকা সাদা করলে সেই টাকা উৎপাদন খাতে বিনিয়োগ করতে হবে৷''

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা নেই

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশে আনার ঘোষণা দিয়েছেন৷ অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অর্থমন্ত্রী এই ঘোষণা দিলেও এখানে তিনি কোনো সুনির্দিষ্ট রূপরেখা ঘোষণা করেননি৷ ফলে এটা নিয়েন্ত্রণে আনার সুযোগ কম৷

যদিও বাজেটের পরদিন শুক্রবার বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার ফলাফল পেতে আরও ৬ মাস অপেক্ষা করতে হবে৷ চলতি বছরের শেষের দিকে মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করবে৷''

মূল্যস্ফীতি নিয়ে ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘‘বাজেটে এনবিআরের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা, মূল্যস্ফীতি ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করা হয়েছে, সেগুলো অর্জন করা সম্ভব হবে না৷ বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা-ও অর্জন করা সম্ভব হবে না৷ এই বাজেট উচ্চাভিলাষী৷''

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘বাজেটে কিছু কর ছাড়ের কথা বলা হয়েছে৷ তবে এতে মূল্যস্ফীতি কমবে না৷ কেননা আয় হোক বা না হোক, ব্যয় তো ঠিকই হবে৷ বিশেষ করে প্রশাসনিকসহ নানা ব্যয় তো কমবে না৷ অর্থমন্ত্রী এ বাজেটকে সুখী, সমৃদ্ধ, বিনিয়োগ বিনির্মাণের বাজেট বলেছেন৷ তবে মানুষকে সুখী, সমৃদ্ধ করার জন্য মূল্যস্ফীতি কমানোর সুনির্দিষ্ট কোনো কার্যক্রম এতে নেই৷ শুধু মুখের কথায় তো আর মূল্যস্ফীতি কমবে না৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান