সাংবাদিকরা ভালো আছেন!
৩১ জানুয়ারি ২০১৩বুধবার বিশ্বের কোন দেশ ২০১২ সালে সাংবাদিকদের কতটা নির্ভয়ে, নিরাপদে কাজ করার সুযোগ দিতে পেরেছে তা হিসেব করে একটা তালিকা প্রকাশ করেছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স৷ সেখানে বিশেষ প্রশংসা পেয়েছে মিয়ানমার৷ রোহিঙ্গাদের ওপর কী যাচ্ছে সে কথা ভেবে এশিয়ার এ দেশের সাংবাদিকরা এখন যে ভালো আছেন, তা অনেকের কাছেই হয়ত বিশেষ কোনো অর্থ বহন করবে না৷ তারপরও প্যারিস ভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের প্রতিবেদনের গুরুত্ব থাকছেই৷ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে মিয়ানমার, যেখানে কিছুদিন আগেও সামরিক সরকারের সমালোচনা করে কিছু লিখলে বা টেলিভিশনে এমন কোনো প্রতিবেদন প্রচার করলে সাংবাদিককে যেতে হতো জেলখানায়, সেই দেশের কারাগারে এখন একজনও সাংবাদিক নেই৷ সে কারণেই মিয়ানমার মুক্ত সাংবাদিকতার অভয়ারণ্য হয়ে ওঠার পথে যাত্রা শুরু করার প্রশংসা পেয়েছে৷ রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের তালিকায় এর আগে দেশটি ছিল ১৭৯ নাম্বারে, ২০১২ সালে পরিস্থিতি অনেক বদলে যাওয়ায় তারাই উঠে এসেছে ১৫১ নাম্বারে৷
উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই এশিয়ার তিনটি দেশ উত্তর কোরিয়া (১৭৮), চীন (১৭৩) এবং ভিয়েতনামের (১৭২)৷ দক্ষিণ এশিয়ায় সাংবাদিকদের অবস্থারও উন্নতি না হয়ে অবনতি হয়েছে৷ বাংলাদেশ, ভারত আর পাকিস্তানের ভয়াবহ এক চিত্রই ফুটে উঠেছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের প্রতিবেদনে৷ সেখানে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্তের এখনো যে কোনো সুরাহা হয়নি – সে বিষয়টির উল্লেখ করে জানানো হয়েছে যে গত বছর সাংবাদিকরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পাননি, এ কারণে বাংলাদেশ নেমে গেছে ১৪৪ নাম্বারে৷ ভারতের অবস্থাও খারাপ৷ হওয়ারই কথা, কেননা, প্রতিবেদনেই জানানো হয়েছে গত বছর বাংলাদেশ ও ভারতে সব মিলিয়ে অনাকাঙ্খিতভাবে মারা গেছেন চারজন সাংবাদিক৷ আর পাকিস্তানে ক'জন ওভাবে মৃত্যু বরণ করেছেন তার কোনো হিসেব নেই৷ তবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে তাদের অবস্থাই সবচেয়ে খারাপ৷ রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের তালিকায় পাকিস্তান আছে ১৫৯ নাম্বারে৷
গত কিছু দিনে আফগানিস্তান থেকে বড় কোনো দুঃসংবাদ আসেনি৷ তাই মিয়ানমারের মতো তারাও পেয়েছে জঘন্য থেকে উন্নততর অবস্থায় উঠে আসার স্বীকৃতি৷ প্রতিবেদনে ২২ ধাপ এগিয়ে আফগানিস্তান এখন ১২৮তম স্থানে৷
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের তালিকায় ‘সবচেয়ে ভালো'-র স্বীকৃতি পেয়েছে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো৷ ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও নরওয়ের যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে থাকা তারই প্রমাণ৷ সেখানে জার্মানি আছে ১ তম স্থানে৷ ব্রিটেন (২৯) এবং যুক্তরাষ্ট্র (৩২) তারও পেছনে৷ রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স যে দেশ থেকে কাজ করছে সেই ফ্রান্স আছে আরো পেছনে, ৩৭তম স্থানে৷ এর বাইরে বেশ নজরে পড়েছে মিশর, ইরান, রাশিয়া এবং সিরিয়া৷ এই দেশগুলোতেও সাংবাদিকরা ভালো নেই৷ রাশিয়া ১৪৮, ইরান ১৭৪, মিশর ১৫৮ এবং সিরিয়া তাদেরও অনেক পেছনে, ১৭৬তম স্থানে আছে যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশটি৷
ইরিত্রিয়া থেকে সেরকম কোনো হানাহানির খবর আসছে না৷ তারপরও রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের প্রকাশ করা তালিকায় এ দেশটিই সবার নীচে৷ ফিনল্যান্ডের তুলনায় দেশটির সাংবাদিকরা কত খারাপ অবস্থায় আছেন, তা অনুমান করার জন্য শুধু তালিকায় তাদের অবস্থানটাই যথেষ্ট৷ ফিনল্যান্ড যে তালিকায় প্রথম, ইরিত্রিয়া সেখানেই ১৭৯তম হয়ে সবার নীচে৷
এসিবি/ডিজি (এএফপি)