প্রতিশ্রুতি ছিল কিন্তু সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই মিয়ানমারে
২০ সেপ্টেম্বর ২০১১গণতান্ত্রিক সংস্কারের কথা বলা হয়েছিল সর্বশেষ নির্বাচনের আগে থেকে৷ শোনা গিয়েছিল, সামরিক শাসন প্রকারান্তরে বহাল থাকলেও সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকের স্বাধীনতা, যা কিনা গণতন্ত্রের প্রধান দুই স্তম্ভ, তা বজায় রাখা হবে৷ অথচ কাজের বেলায় দেখায় যাচ্ছে, সেসব কেবলই কথার কথা ছিল৷ কাজ হয়নি প্রায় কিছুই৷ এ তথ্য জানাচ্ছে দ্য কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্ট্স, তাদের সর্বশেষ সমীক্ষা রিপোর্টে৷ রিপোর্ট বলছে, মিয়ানমার এমন একটি দেশ, যেখানে সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকের প্রায় কোনরকমের স্বাধীনতাই নেই৷ প্রতিটি সাংবাদিকের প্রত্যেকটি টেলিফোন কল থেকে শুরু করে, তাঁদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার প্রতিটি নড়াচড়া মিয়ানমারে নজরদারি চালানো হয়ে থাকে৷ এখানেই শেষ নয়, যে সমস্ত সংবাদমাধ্যম বা মিডিয়া সেদেশে রয়েছে, তাদের যাবতীয় সংবাদ এক বিশেষ সরকারি নজরদারি আর সম্পাদনার মধ্য দিয়ে যায়৷ এবং সেই পদ্ধতি অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ৷ যার ফলে বহুক্ষেত্রেই সংবাদপত্রগুলি দৈনিক তাদের সংস্করণ প্রকাশ করতে পারেনা৷ লেগে যায় একটা গোটা সপ্তাহ৷
অথচ দীর্ঘ প্রায় অর্দ্ধশতাব্দীর সামরিক শাসনের পর গত বছরের শেষদিকে মিয়ানমারের সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়৷ সেই নির্বাচনে জনপ্রতিনিধিদের সরকার গঠিত হওয়ার পর নতুন প্রেসিডেন্ট তাইন সেন তাঁর প্রথম ভাষণেই সংবাদপত্র এবং বার্তা মাধ্যমের স্বাধীনতার মাধ্যমে এক নতুন দেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন৷ অথচ কার্যক্ষেত্রে যে সেসব হচ্ছে না, তার প্রমাণ দাখিল করেছে দ্য কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্ট্স, তাদের রিপোর্টে৷
রিপোর্টে সিপিজে আরও জানাচ্ছে, প্রেসিডেন্ট তাইন সেনের নতুন শাসনব্যবস্থায় বরং সাংবাদিকদের ওপর অত্যাচার, তাদের জেলে ভরা এবং তাদের ওপর নজরদারির পরিমাণ আগের তুলনায় বেড়ে গেছে৷ আর এসব খবর সিপিজে জানতে পেরেছে, মিয়ানমারের থেকে পালিয়ে যাওয়া বেশ কিছু সংবাদকর্মীর কাছ থেকে৷ পাশপাশি, দেশের অভ্যন্তরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু সাংবাদিকও সিপিজে'কে তাঁদের চরম পরিস্থিতির কথা জানিয়েছেন গোপনে৷
সিপিজে আরও জানাচ্ছে, গত নির্বাচনে মিয়ানমারের নোবেলজয়ী গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি'কে অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়নি৷ যে নির্বাচন হয়েছিল, তাকে কোনভাবেই অবাধ ও মুক্ত বলা যায়না৷ আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী৷ কিন্তু তারপর থেকে সাংবাদপত্রের স্বাধীনতার যেটুকু অবশিষ্ট ছিল, এখন তাও আর নেই৷ পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগজনক এবং অগ্রহণযোগ্য বলেই মনে করছে এই আন্তর্জাতিক সংগঠনটি৷
প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক