বিলুপ্ত কমিটির নেতাদের নিয়ে হেফাজতের নতুন কমিটি আসছে
২৯ আগস্ট ২০২৩হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক মুফতি কেফায়েতুল্লাহ আজহারি ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘গত ৫ আগস্ট শীর্ষ নেতাদের এক বৈঠকে বিলুপ্ত কমিটির সবাইকে বর্তমান কমিটিতে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ তবে তাদের পদবিন্যাস বা নির্ধারণের জন্য ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়৷’’
ওই কমিটির সদস্যরা ১৬ আগস্ট একটি বৈঠক করেছেন৷ পদবিন্যাস কমিটির সদস্য এবং হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানি জানিয়েছেন, ‘‘কাকে কোন পদ দিয়ে কমিটি পুনর্বিন্যাস করা হবে তার একটা খসড়া প্রস্তাব আমরা মহাসচিবের কাছে দিয়েছি৷ এখন হোফাজতের আমির চূড়ান্ত অনুমোদন দিলেই তা সংবাদ সম্মেলনের মাধমে প্রকাশ করা হবে৷’’
বিলুপ্ত কমিটির প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়েজি বলেন,‘‘মাওলানা মামুনুল হকসহ চার-পাঁচ জন এখন কারাগারে আছেন৷ যারা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন তাদের মধ্যে জোনায়েদ আল হাবিবসহ কয়েকজনকে এরইমধ্যে বিভিন্ন পদে দেয়া হয়েছে৷ আশা করা যায় সব পদবিন্যাস চূড়ান্ত করে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই জানানো হবে৷’’
হেফাজতের বর্তমান কমিটিতে আছেন ৬৫ জন৷ বিলুপ্ত কমিটিতে ছিলেন ২০১ জন৷ এবার সবাইকে নিয়েই কমিটি হচ্ছে৷ বর্তমান কমিটি বা বিলুপ্ত কমিটির কাউকে বাদ দেয়া হবে না৷ যারা কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছেন, এখনও কারাগারে আছেন সবাই কমিটিতে থাকছেন৷
২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর মাওলানা শাহ আহমদ শফী মারা যাওয়ার পর থেকেই হেফাজতের মধ্যে নানা ধরনের দ্বন্দ্ব শুরু হয়৷ তার মৃত্যুর পর মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী হেফাজতের আমীর হন এবং মাওলানা আহমদ শফী পন্থীরা কোনঠাসা হয়ে পড়েন৷ জুনায়েদ বাবুনগরী সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত ছিলেন৷ তার কমিটি ছিলো ২০১ সদস্যের৷ ২০২১ সালের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঢাকার সফরের বিরুদ্ধে হেফাজতের কর্মসূচিকে ঘিরে ঢাকাসহ সারাদেশে ব্যাপব সহিংসতা হয়৷ ওই বছরের ২৫ এপ্রিল হেফাজদের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন বাবুনগরী৷ তিনি আহ্বায়ক থেকে ৩৫ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন৷ ২০২১ সালের ১৯ আগস্ট জুনায়েদ বাবুনগরী মারা যান৷
এরপর শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী হেফাজতের আমির হন৷ কমিটি হয় ৬৫ সদস্যের৷ বিলুপ্ত কমিটির কেউ এই কমিটিতে জায়গা পাননি তখন৷
হেফাজতের একাধিক নেতা জানিয়েছেন সরকারঘেঁষা অবস্থানের কারণে হেফাজতের বর্তমান কমিটির নেতারা অনেক দিন ধরেই চাপে ছিলেন৷ তারপরও গ্রেপ্তার হওয়া সব নেতা মুক্তি না পাওয়ায় হেফাজতের তৃণমূলের ক্ষোভ বাড়ছিলো৷ এমনকি হেফাজত ভেঙে গিয়ে আলাদা কমিটি গঠনের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল৷ তাই সবকিছু সামাল দিতে বিলুপ্ত কমিটির সবাইকে কমিটিতে ফিরিয়ে নিয়ে কমিটি পুনর্বিন্যসের সিদ্ধান্ত হয়৷
হেফাজতের বিলুপ্ত কমিটির প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়েজি বলেন, ‘‘হেফাজতের তৃণমূল থেকে অনেক দিন ধরেই চাপ ছিল৷ বর্তমান কমিটি তেমন কোনো কাজ করতে পারছিল না৷ আর কিছু নেতা সরকারঘেঁষা বলে অভিযোগ আচে৷ তারা গ্রেপ্তারকৃত নেতাদের দ্রুত মুক্তির ব্যাপারেও তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারেননি৷ ফলে কমিটিতে বিলুপ্ত কমিটির সবাইকে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ হেফাজত কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়৷ তাই আমরা সরকারঘেঁষা বা সরকারবিরোধী কোনোটাই হতে পারি না৷’’
আর বর্তমান প্রচার সম্পাদক মুফতি কেফায়েতুল্লাহ আজহারি বলেন,"আগের কমিটির বিলুপ্ত করা হয়েছিলো৷ কাউকে বহিষ্কার করা হয়নি৷ ফলে তাদের কমিটিতে ফিরয়ে নেয়ায় কোনো বাধা ছিল না৷ তাই এখন সবাইকে কমিটিতে নিয়ে হেফাজতকে আরো শক্তিশালী করা হচ্ছে৷ বিলুপ্ত কমিটির সবাইকেই নতুন কমিটিতে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে৷ এখন শুধু পদ বিন্যাস করা হচ্ছে৷’’
তার কথা,"একটা পরিস্থিতির কারণে কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছিল। অনেক নেতারা জেলে ছিলেন। একটা পরিস্থিতির কারণে আমাদের অনেক ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এখন আমরা হেফাজতকে হেফাজতের মতো এগিয়ে নিতে চাই।”
তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘একটি বিশেষ পরিস্থিতির কারণে হেফাজতের ভিতরে অনেক প্রশ্ন উঠেছে৷ বিভিন্ন ঘটনা বিভিন্নভাবে মূল্যায়ন হয়েছে৷ এগুলো ব্যক্তি কেন্দ্রিক মূল্যায়ন ও সমালোচনা৷ এর কোনো ভিত্তি নেই৷’’
হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিক মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানি বলেন, ‘‘বিলুপ্ত কমিটির সবাইকে কেন ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে তা আসলে সংগঠনের মহাসচিব বলতে পারবেন৷ আমাদের দায়িত্ব দেয়া দেয়া হয়েছিলো পদবিন্যাসের৷ আমরা তা করেছি৷ এখন বাকিটা আমিরের ওপর নির্ভর করে৷’’