আল্লামা শফীর ছেলে আউট, বাবুনগরী ইন?
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০হাটহাজারী মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রণ কার হাতে তা-ই নির্ধারণ করে দেয় হেফাজতের নিয়ন্ত্রণ কোন দিকে থাকবে৷ হেফাজতের আমীর আল্লামা আহমদ শফীর পুত্র আনাস মাদানীকে নিয়েই এখন সংকট তৈরি হয়েছে৷ তিনি তার বাবার মাদ্রাসা এবং হেফাজতের নিয়ন্ত্রণ নিজের কাছে রাখতে গিয়ে নানা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠছে৷ তার প্রভাবে গত জুন মাসে বাবুনগরীকে মাদ্রাসার সহযোগী পরিচালকের (মুঈনে মুহতামিম) দায়িত্ব থেকে বাদ দেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে৷ বাবুনগরী অবশ্য এখনো হেফাজতের মহাসচিব পদে আছেন৷
মাওলানা শফীর ছেলে আনাস মাদানী হেফাজতের প্রচার সম্পাদক৷ তিনি একই সঙ্গে হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষক৷ কিন্তু অভিযোগ আছে, তার পিতা অসুস্থ হওয়ায় তিনি মাদ্রাসা এবং হেফাজতের মধ্যে তার প্রভাব বাড়াতে থাকেন৷ বাবুনগরীকে মাদ্রাসা থেকে বাদ দেয়ার পর তিনি কয়েকজন শিক্ষককে মাদ্রাসা থেকে বাদ দেন এবং তার বিরোধী ছাত্রদের নানাভাবে কোণঠাসা করেন৷
হাটহাজারী মাদ্রাসায় প্রায় ২০ হাজার ছাত্র আছে৷ তারাও শিক্ষকদের অনুসারী হিসেবে নানা ভাগে বিভক্ত৷ গত ৯ জুলাই অবশ্য মাওলানা আহমেদ শফি তার ছেলে এবং বাবুনগরীকে নিয়ে এক টেবিলে বসে তাদের মিলিয়ে দেন৷ কিন্তু বাবুনগরী মাদ্রাসায় তার পদ ফিরে পাননি৷
এই সময়ে আনাস মাদানীর বিরুদ্ধে ক্ষমতা অপব্যবহারের নানা অভিযোগ ওঠে, যার শিকার হন মাদ্রাসার ছাত্ররাও৷ তারাই বুধবার মাদ্রাসায় ব্যাপক বিক্ষোভ দেখায়৷ তারা ভাঙচুরও করে৷ আনাস মাদানীর অনুসারী এক শিক্ষক তাদের হাতে প্রহৃতও হন৷ বিক্ষোভের এক পর্যায়ে সুরা সদস্যরা বৈঠক করে আনাস মাদানীকে মাদ্রাসার শিক্ষক পদ থেকে বহিষ্কার করেন৷
ছাত্ররা মোট পাঁচ দফা দাবি দিয়েছে৷ দাবিগুলো হলো: মাওলানা আনাস মাদানীকে অনতিবিলম্বে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করতে হবে, ছাত্রদের প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান ও সবধরনের হয়রানি বন্ধ করতে হবে, আল্লামা আহমদ শফী অক্ষম হওয়ায় মহাপরিচালকের পদ থেকে সম্মানজনকভাবে অব্যাহতি দিয়ে উপদেষ্টা বানাতে হবে, উস্তাদদের পূর্ণ অধিকার ও নিয়োগ-বিয়োগকে শূরার কাছে পূর্ণ ন্যাস্ত করতে হবে, বিগত শূরার হাক্কানি আলেমদেরকে পুনর্বহাল ও বিতর্কিত সদস্যদের পদচ্যূত করতে হবে৷ এর মধ্যে প্রথম দাবি আনাস মাদানীকে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করে ছাত্রদের শান্ত রাখা হয়েছে৷ কিন্তু অন্যান্য দাবির ব্যাপারেও তারা অনড় রয়েছে বলে জানা গেছে৷
বিভিন্ন পক্ষের সাথে কথা বলে জানা গেছে এখন মাওলানা বাবুনগরীর অনুসারীরাই মাদ্রাসা এবং হেফাজতে প্রাধান্য বিস্তার করছে৷
হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ‘‘আনাস মাদানী কিছু ছাত্রের ভর্তি প্রক্রিয়ায় বাধা দিয়ে আসছিলেন৷ তাদের ভর্তি ফর্ম আটকে রেখেছিলেন৷ কয়েকজন শিক্ষককে অন্যায়ভাবে অব্যাহতিও দেন৷ তার এই ভূমিকাকে কেউ ভালো চোখে দেখছে না৷’’ তিনি বলেন, ‘‘ছাত্ররা যে পাঁচ দফা দাবি দিয়েছে তা যৌক্তিক এ কারণেই আনাস মাদানীকে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে৷’’
তার মতে, আনাস মাদানী শফী হুজুরের ছেলে হলেও মাদ্রাসা চলে মাদ্রাসার নিয়মে৷ তারপরও তিনি শিক্ষতায় অনেক জুনিয়র হয়েও এমন কাজ করেছেন, যাতে শিক্ষক, ছাত্র এবং এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ৷
তাকে বহিষ্কারের পিছনে মাওলামা বাবুনগরীর কোনো হাত আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘না তার কোনো ভূমিকা নেই৷’’
বুধবারের ছাত্র বিক্ষোভের পর মাদ্রাসার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলে জানান মাদ্রাসার মজলিশে শূরার সদস্য আল্লামা নোমান ফয়েজি৷ তিনি বলেন, ‘‘আনাস মাদানীকে নানা সমস্যার কারণে সর্বসম্মতিক্রমে বহিস্কার করা হয়েছে৷গত জুন মাসে মাওলানা বাবুনগরীকেও শফি হুজুরের মতামতের ভিত্তিতে বাদ দেয়া হয়েছিল৷” তিনি দাবি করেন, হেফাজতের কোনো বিষয় এর ভিতরে নেই৷’’
এ নিয়ে কথা বলার জন্য মাওলানা বাবুনগরী ও আনাস মাদানীর সঙ্গে যোগাযোগর চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি৷
গতবছর জুনের ছবিঘরটি দেখুন...