‘বিজেপির উত্থানে মমতাই দায়ী'
১৯ জুলাই ২০১৭বসিরহাট কাণ্ডের পর আর বিজেপিকে খালি জমি ছেড়ে রাখার ঝুঁকি নিতে চাইছেন না পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি৷ সম্প্রতি ভারতের নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য ভোট দিতে যখন বিধানসভায় জড়ো হয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী বামফ্রন্ট ও জাতীয় কংগ্রেসের বিধায়করা, স্পিকারের ঘরে তাঁদের বৈঠকে ডাকেন মুখ্যমন্ত্রী৷ সরাসরিই বলেন, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে আটকাতে হবে৷ আর তার জন্যে দরকার ঐক্যবদ্ধ লড়াই৷ সব বিজেপি-বিরোধী দলকে সঙ্গে নিয়ে চলতে যে তিনি আগ্রহী, বিনা ভনিতায় সেকথা জানান মমতা৷
কিন্তু বিরোধীরা তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রীর এই ডাকে সেভাবে সাড়া দিচ্ছেন না৷ বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা, সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী কিছুটা শ্লেষের সুরেই বললেন, মমতা যে বিরোধীদের মতকেও গুরুত্ব দেবেন, দিচ্ছেন, তা কিন্তু তাঁর শরীরের ভাষায় বোঝা যাচ্ছে না! তাছাড়া সাম্প্রতিক অতীতেও মমতা ব্যানার্জি এবং তাঁর দল নানা সময়, দরকারে-অদরকারে বিজেপির পাশে দাঁড়িয়েছে, বিশেষত জাতীয় স্তরে৷ এই অবস্থায় তিনি যদি ঐক্যবদ্ধ বিজেপি-বিরোধী আন্দোলনের ডাক দেন, তা বিশ্বাসযোগ্য হয় না৷
উলটোদিকে অনেকেই বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির অতিমাত্রায় মুসলিম তোষণই পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির উত্থানের কারণ হয়েছে৷ সে অভিযোগেও প্রকারান্তরে সায় জানালেন সুজন চক্রবর্তী৷ বললেন, ‘‘ইনশাল্লাহ দিয়ে ভাষণ শুরু করার অকারণ রাজনীতির একটা ক্ষতিকর প্রভাব তো পড়েইছে৷ এটা পুরোপুরিই ভোটের রাজনীতি, সুবিধাবাদী রাজনীতি যা এই তোষণের অভিযোগ তুলতে লোককে বাধ্য করেছে৷''
বসিরহাটে সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামার পর রাজ্যের অনেক মানুষ এ কথাও বলছেন যে, বামফ্রন্ট আমলে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিভাজন এত প্রকট ছিল না৷ এভাবে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ কখনও ছড়ায়নি রাজ্যে৷ সেক্ষেত্রে চলতি পরিস্থিতি কি বামেদের আরও সদর্থক এবং সক্রিয় ভূমিকা নিতে বলছে না? সুজন চক্রবর্তী জানালেন, তাঁরা দলের নেতা এবং সাংসদ মহম্মদ সেলিমের উদ্যোগে, নেতৃত্বে বাদুড়িয়া, বসিরহাট যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন৷ কিন্তু প্রশাসন ও পুলিশ তাঁদের রাস্তা আটকায়৷ ঐক্যবদ্ধ মিছিলের প্রস্তাবও তাঁরা দিয়েছিলেন৷ তাতেও ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস কোনো সাড়া দেয়নি৷ তবে তার মধ্যেও একটা ব্যাপার ঘটেছে, যা সংবাদমাধ্যমে সেভাবে প্রচার পায়নি৷ বসিরহাট ও সংলগ্ন এলাকায় যেকটি পঞ্চায়েত বামেদের দখলে আছে, সেখানে দুই ধর্মের মানুষকে নিয়ে বৈঠক হয়েছে, শান্তি মিছিল হয়েছে৷ সেসব জায়গায় অশান্তি ছড়াতে দেওয়া হয়নি৷
আর মমতা ব্যানার্জির যৌথ বিজেপি-বিরোধী আন্দোলনের ডাক সম্পর্কে কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া, তৃণমূল কংগ্রেসের পথ নিষ্কণ্টক রাখতে গিয়ে, বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে দুর্বল থেকে দুর্বলতর করতে গিয়ে সবথেকে বড় ক্ষতিটা উনিই করেছেন৷ গত কয়েক বছরে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় কংগ্রেস থেকে নেতা-কর্মীরা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন৷ এ ব্যাপারে তৃণমূল নেত্রীর অজুহাত, কেউ যদি স্বেচ্ছায় দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন, তা হলে তাঁর কী-ই বা করার থাকতে পারে! কিন্তু ঘটনা হলো, প্রতিপক্ষ দলকে দুর্বল করতে গিয়ে মমতা এভাবেই বিজেপির আসার রাস্তা বানিয়ে দিয়েছেন৷ এখন ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক দিলে কী হবে!