1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌পাহাড়ে রণমূর্তি মমতার

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
৮ জুন ২০১৭

এক মাস পর গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের নির্বাচন৷ তাই পাহাড়ে গিয়ে শিবির গাড়লেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি৷

https://p.dw.com/p/2eIIM
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে এমন রণচণ্ডী মূর্তিতে মমতা ব্যানার্জিকে সচরাচর দেখা যায় না৷ কিন্তু দার্জিলিং পাহাড়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নিজের এলাকায় লড়াইটা নিয়ে গিয়ে ফেলেছেন মমতা ব্যানার্জি৷ এবং একেবারে রণং দেহী মূর্তিতে৷ মোর্চা নেতা বিমল গুরুংকে স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছেন, হাঙ্গামা করতে গেলে পাল্টা মার পড়বে৷ পাহাড় অচল করার হুমকিতে ভয় পাচ্ছে না তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার৷ অশান্তি হলে আইনি রাস্তায় তার মোকাবিলা হবে৷ মমতা ব্যানার্জি এতটাই লড়াইয়ের মেজাজে আছেন যে, মঙ্গলবার মিরিকের সিংমারি এলাকার রাস্তায় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার এক বিক্ষোভ মিছিলের প্রস্তুতি দেখে সটান মিছিলকারীদের সামনে চলে যান মমতা৷ প্রশ্ন করেন, ভালোর জন্য মিছিল করছেন, না খারাপের জন্য মিছিল?‌ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে সামনাসামনি দেখে মিছিলকারীরা তখন হতবাক৷ যার বিরুদ্ধে মিছিল, তিনিই সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন৷ বিক্ষোভের কালো পতাকা হাতেই থেকে যায়, এমনকি স্লোগান দিতেও ভুলে যান মোর্চার কর্মী-সমর্থকরা৷

সম্প্রতি পুরভোটে দার্জিলিং, কার্শিয়াং জিততে না পারলেও মিরিক দখলে এনেছে তৃণমূল৷ এবার সামনে গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, বা জিটিএ'র নির্বাচন৷

মমতা মিরিকে, কার্শিয়াংয়ে সভা করে বলেছেন, দার্জিলিং হাতে এলে উন্নয়ন কাকে বলে দেখিয়ে দেবেন৷ ওদিকে মোর্চা নেতা বিমল গুরুং এত সহজে পাহাড়ের দখল ছাড়তে রাজি নন৷ অবশ্য গুরুং এখন রাজনৈতিকভাবে বেশ বেকায়দায়৷ একদিকে গোর্খা লিগ নেতা মদন তামাংয়ের হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে তাঁর নামে শমন জারি করেছে সিবিআই, অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ অর্থ নয়-ছয়ের অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে৷ এ কারণে মু্খ্যমন্ত্রী এবার পাহাড়ে গিয়েই হুমকি দিয়েছেন, জিটিএ তহবিল নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ আছে৷ তাই রাজ্য সরকার জিটিএ'র সব খরচের হিসেব অডিট করাবে৷ কোনও গরমিলের প্রমাণ পেলে, যে বা যারা দোষী, তাদের শাস্তি পেতে হবে৷

মুখ্যমন্ত্রীর হুমকি শুনে বিমল গুরুং অবশ্য বলছেন, মমতা আগে তাঁর নারদা-সারদা দুর্নীতির তদন্ত করুন, তারপর না হয় মোর্চার দুর্নীতি ধরতে আসবেন৷ কিন্তু গুরুং যে স্বস্তিতে নেই, এটা স্পষ্ট৷ তার আরও একটা কারণ, পাহাড়ের লোককে খেপিয়ে দিয়ে জঙ্গি আন্দোলন আর করা সম্ভব হচ্ছে না৷ দার্জিলিং মূলত পর্যটন-নির্ভর জেলা৷ বিক্ষোভ আন্দোলনের জেরে সেই পর্যটন মার খাবে, এটা আর হতে দিতে চাইছেন না স্থানীয় হোটেল মালিক এবং পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্তরা৷ ফলে কর্মসূচি ঘোষণা করেও পিছিয়ে আসতে হয়েছে মোর্চাকে৷ এমনকি এক সন্ধে গোটা দার্জিলিং পাহাড়ে আলো না জ্বালিয়ে, অন্ধকার রেখে প্রতিবাদ জানানোর কর্মসূচিও বাতিল করতে হয়েছে পর্যটকদের অসুবিধার কথা ভেবে৷

যে কারণে এখন রাজ্য সরকারের সদ্য ঘোষিত ভাষা নীতি নিয়ে বিক্ষোভ তৈরি করতে চাইছেন৷ মমতা ব্যানার্জির সরকারবলেছে, পশ্চিমবঙ্গের সব স্কুলে বাংলা পড়াতেই হবে৷ তা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন বিমল গুরুং৷ বলছেন, পাহাড় অন্য ভাষা-সংস্কৃতির অনুসারী, এখানে জোর করে বাংলা চাপিয়ে দেওয়া যাবে না৷ প্রতিবাদে দার্জিলিংয়ের বিভিন্ন জায়গায় প্রচার, মিছিল, মিটিং শুরু করে দেয় মোর্চা৷ মমতা ব্যানার্জি তৎক্ষণাৎ জানিয়ে দেন, দার্জিলিংয়ের মতো জায়গায় বাংলা ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে থাকবে৷ কোনও কিছুই চাপিয়ে দেওয়া হবে না৷ কিন্তু তার পরেও বিমল গুরুং ভাষার ইস্যুতে নতুন করে গোর্খা জাতিসত্তার আন্দোলন খুঁচিয়ে তুলছেন খবর পেয়েই কার্যত সপার্ষদ পাহাড়ে গিয়ে শিবির ফেলেছেন মমতা৷ লড়াইটাকে নিয়ে গেছেন একেবারে বিমল গুরুংয়ের দরজায়৷ এবং পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে৷ কিন্তু মমতা ব্যানার্জি বুঝিয়ে দিচ্ছেন, বিনা যুদ্ধে তিনিও সূচ্যাগ্র মেদিনী ছাড়বেন না৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য