বিএনপি এমপিদের আসন শূন্য, ৯০ দিনের মধ্যে উপ-নির্বাচন
১১ ডিসেম্বর ২০২২আর গেজেট হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন শূন্য আসনগুলোতে ৯০ দিনের মধ্যে উপ-নির্বাচনের কথা বলেছে।
দুইজন এমপি সশরীরে গিয়ে পদত্যাগ না করায়তাদের ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দেননি স্পিকার। তাদের পদত্যাগপত্র পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। তাদের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উকিল আবদুস সাত্তার অসুস্থ থাকায় এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের হারুন অর রশীদ বিদেশে থাকায় স্পিকারের কাছে যেতে পারেননি। তাদের স্বাক্ষরসংবলিত পদত্যাগপত্র স্পিকারের কাছে জমা দেন দলীয় হুইপ রুমিন ফারহানা।
সকাল সাড়ে ১১টার দিকে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে সাত জনেরই পদত্যাগ পত্র জমা দেয়া হয়। যে পাচঁজন সশরীরে পদত্যাগপত্র নিয়ে যান তাদেরটা গ্রহণ করেন স্পিকার। পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে তিনি সাংবদিকদের বলেন,"সংবিধানের ৬৭(২) অনুযায়ী পাঁচ জনের শূন্য হয়ে গেছে। বাকি দুজনের আবেদন যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।''
সংবিধানের ৬৭(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- কোনো সংসদ-সদস্য স্পিকারের নিকট স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারবেন এবং স্পিকার কিংবা স্পিকারের পদ শূন্য থাকলে বা অন্য কোনো কারণে স্পিকার স্বীয় দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে ডেপুটি স্পিকার- যখন উক্ত পত্র প্রাপ্ত হন, তখন হতে উক্ত সদস্যের আসন শূন্য হবে।
স্পিকার জানান, ‘‘আসন শূন্য হওয়ার গেজেট প্রকাশের পর তাদের কাছে পাঠানো হবে। সেই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হবে।”
আসন শূন্য হলে ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন হবে জানিয়ে স্পিকার বলেন, ‘‘আসন শূন্যের এখন গেজেট হবে। পরে অধিবেশন যখন বসবে, সেখানেও জানানো হবে।''
যাদের আসন শূন্য হয়েছে তারা হলেন: বগুড়া-৭ আসনের জিএম সিরাজ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের আমিনুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাহিদুর রহমান, বগুড়া-৪ আসনের মোশাররফ হোসেন এবং সংরক্ষিত নারী আসনের রুমিন ফারহানা।
৯০ দিনের মধ্যে উপ-নির্বাচন:
এদিকে বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের গেজেটের পর ৯০ দিনের মধ্যে শূন্য আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রোববার রাজধানীর আগারগাঁও ইসি ভবনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন," সংসদ সচিবালয় থেকে গেজেট হলে আমাদের কাজ শুরু হবে। গেজেট হওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের কিছু করার সুযোগ নাই।” তিনি সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন," আমরা সবার প্রতি সমান আচরণ করছি, কি করছিনা সেটি দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন আমরা নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ কি নিরপেক্ষ না। এখন একটি রাজনৈতিক দল আরেকটি রাজনৈতিক দলের কাছে তাদের চাওয়া পাওয়ার কারণে যদি নির্বাচন কমিশনকে টার্গেট করে সেটাতো গ্রহণযোগ্য নয়।”
"এই সংসদ অবৈধ”
এদিকে পদত্যাগের পর বিএনপির সংসদ সদস্যরা বর্তমান সংসদকে অবৈধ অভিহিত করে দ্রুত সংসদ ভেঙে দেয়ার দাবি জানান। বগুড়া-৭ আসনের পদত্যাগী সংসদ সদস্য জিএম সিরাজ বলেন," পার্লামেন্ট এখন হান্ড্রেডে হান্ড্রেড পার্সেন্ট অবৈধ। কারণ আমরা যে কয়জন ইলেক্টেড ছিলাম তারা সবাই পদত্যাগ করেছি। আমরা তো এখন আর পার্লামেন্টে নেই। আর যারা আছেন, ইচ অ্যান্ড এভরি বডি আনইলেক্টেড। তারা ভোটে হয়নি। পার্লামেন্টে এখন আছে সরকার ও তার পেট, পোষা বিরোধী দল জাতীয় পার্টি।”
আর সংরক্ষিত আসনের পদত্যাগী সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন," আমাদের আন্দোলন অলরেডি বেগবান এবং আমাদের পদত্যাগ নিশ্চয়ই সেই আন্দোলনে আরেকটি পালক যুক্ত করেছে।”
তিনি জানান," মাননীয় স্পিকার একটু হেসে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন যে আমরা কেন পদত্যাগ করছি।”
এর বিপরীতে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সচিবালয়ে বলেছেন," তারা (বিএনপি) সরকারের পদত্যাগ চাইতে এসে এখন নিজেরাই পদত্যাগ করলেন। ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের মাধ্যমে সরকার হটাতে চেয়ে এখন বিএনপি নিজেরাই হটল।” তার কথা," পদত্যাগের মাধ্যমে বিএনপি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত করতে চাইছে। এতে সরকারের কোনো ক্ষতি হবে না। নিয়ম অনুযায়ী, আসনগুলোতে উপনির্বাচন হবে।৩৫০ জন সংসদ সদস্যের বিপরীতে বিএনপির সাত জনের পদত্যাগে সরকারের কিছুই যায়-আসে না। তারা সংসদে কথা বলতে পারতেন। তাদের লাভই হতো। কিন্তু পদত্যাগের মাধ্যমে তাদের ক্ষতি হলো।”
এটাই প্রথম নয়:
সংসদ থেকে পদত্যাগের প্রথম ঘটনা ঘটে ১৯৯৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর। তখন ক্ষমতায় ছিলো বিএনপি । ওই বছরের ২০ মার্চ মাগুরা উপ-নির্বাচনে কারচুপির প্রতিবাদে ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগের ৮৮ জন এমপিসহ জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামি ও অন্যান্য দলের মোট ১৪৭ জন এমপি পদত্যাগ করেন। তবে তখন স্পিকার তাদের পদত্যাগ গ্রহণ না করে তাদের ৯০ কার্যদিবস অনুপস্থিত দেখিয়ে আসন শূন্য ঘোষণা করে উপ-নির্বাচনের উদ্যোগ নেন। তবে সে উপ-নির্বাচন আর তারা করতে পারেননি।