বার্লিন প্রাচীর নির্মাণের ৪৮তম বর্ষপূর্তি পালন
১৩ আগস্ট ২০০৯১৯৮৯ সালের ৯ই নভেম্বর খুলে দিতে হয় প্রাচীর৷ বার্লিন এবং অবশেষে গোটা জার্মানি হয় আবার একত্রিত৷
এক সময়কার বিভাজন পয়েন্ট ব্যার্নাউয়ার স্ট্রিট-এ অবস্থিত প্রাচীর স্মৃতি কেন্দ্রে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বার্লিন নগর রাজ্যের শাসক মেয়র ক্লাউস ভোভেরাইট ও সাবেক কমিউনিস্ট পূর্ব জার্মানির গোয়েন্দা দপ্তর স্টাসির গোপন নথিপত্রের তত্ত্বাবধায়ক কর্মকর্তা মারিয়ানে বির্থলার৷ সংলগ্ন গির্জার চ্যাপেলে মৃতদের উদ্দেশে অনুষ্ঠিত হয় প্রার্থনা সভা৷ পুনরএকত্রিত জার্মানিতে এর নাম এখন চ্যাপেল অফ রিকনসিলিয়েশন৷
ঠিক ৪৮ বছর আগে ১৯৬১ সালের ১৩ই আগস্ট তখনকার পূর্ব জার্মান কমিউনিস্ট নেতৃত্ব বার্লিন শহরের মধ্য দিয়ে প্রাচীর নির্মাণ করতে শুরু করে৷ ইতিহাসবিদদের সাম্প্রতিকতম তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬১ থেকে ১৯৮৯ সালের মধ্যে বার্লিন প্রাচীর দিয়ে পূর্ব বার্লিন থেকে পশ্চিম বার্লিনে পালিয়ে আসতে গিয়ে মারা যান অন্তত ১৩৬ জন৷ ব্যার্নাউয়ার স্ট্রিট-এ অবস্থিত গির্জার ছোট্ট চ্যাপেলে আজ তিল ধারণের জায়গা ছিলনা আর৷ উপস্থিত সকলের উদ্দেশে যাজক মানফ্রেড ফিশার বলেন, ‘ শহরের একেবারে হৃৎপিন্ড ভেদ করে চলে গিয়েছিল এই দেয়াল৷ বিভক্ত করেছিল এই শহরকে, জার্মানিকে, ইউরোপকে৷'
যাজক ফিশার আরো বলেন, 'ব্যার্নাউয়ার স্ট্রিট হয়ে উঠেছিল পালিয়ে যাওয়ার নাটকীয় সব চেষ্টার জায়গা৷ তার কিছু সফল হয়েছিল, কিছু ব্যর্থ৷ এই দিন এবং এই স্থান সেই স্মৃতির উদ্দেশেই নিবেদিত৷'
প্রাচীর টপকাতে গিয়ে পূর্ব জার্মান সীমান্ত সেনাদের সহিংসতার শিকার হয়েছিল যারা, মানফ্রেড ফিশার তাদেরই একজনের কাহিনী শোনান৷ ১৯৬২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ডরিট শ্মিল নামের এক তরুণী তাঁর বন্ধু ডেট লেফ-এর সঙ্গে পূর্ব বার্লিন থেকে পালিয়ে আসার চেষ্টা করেন৷ গভীর রাতে সীমান্ত রেখা অতিক্রমের চেষ্টা করার সময় রক্ষীদের চোখে পড়ে যায় তারা৷ ডরিট পেটে গুলি খেয়ে পরে হাসপাতালে মারা যায়৷ আহত ডেটলেফকে যেতে হয় কারাগারে৷
এই কুখ্যাত প্রাচীরের প্রথম বলি একজন মহিলা৷ ১৯৬১ সালের ২২শে আগস্ট ইডা জিকমান তাঁর ৫৯তম জন্মদিনের ঠিক একদিন আগে ৪৮ নং ব্যার্নাউয়ার স্ট্রিটে একটি বাড়ির চার তলায় তাঁর অ্যাপার্টমেন্ট থেকে লাফ দিয়ে নীচে পড়েন৷ প্রাণে বাঁচেননি৷ প্রাচীর তাঁর বোন-এর কাছ থেকে তাঁকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল৷ বোন-এর বাড়ি পড়েছিল মাত্র কয়েক বিল্ডিং দূরে বার্লিনের পশ্চিমাংশে৷ সেই বিচ্ছিন্নতার যন্ত্রণা তিনি সহ্য করতে পারেননি৷
এই সব স্মৃতি ভুলবার নয়৷ মেয়র ভোভেরাইট তাই বলেছেন, ভুলতে আমরা পারিনা৷ ধরে রাখতে চাই আমাদের স্মৃতিতে, যারা শিকার হয়েছিলেন মনে রাখতে চাই৷ তবে ভবিষ্যতের জন্যও সতর্ক করে দিতে চাই আমরা৷'
প্রতিবেদক: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক
সম্পাদনা: আবদুস সাত্তার