প্রাচীরের পতন হলেও ভেদাভেদ রয়ে গেছে
১১ জুন ২০০৯তবে এই উন্নতি সত্ত্বেও জার্মানির পূর্ব এবং পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে ভেদাভেদ রয়েই গেছে৷
জার্মানির পুনরেকত্রীকরণের দুই দশক পরেও দেশের পূর্ব আর পশ্চিমের মধ্যে ফারাক অবশ্য এখনও বেশ বড়৷ তবুও জার্মান ঐক্য সংক্রান্ত বার্ষিক সরকারি রিপোর্টে আশাবাদী মনোভাবেরই প্রকাশ ঘটেছে৷ জার্মানির পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর উন্নয়নের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ভল্ফগাং টিফেনজে বলেছেন, বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পূর্বাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া রাজ্যগুলো ক্রমাগত পশ্চিমি রাজ্যগুলোর পর্যায়ে চলে আসছে৷ এমনকি বিশ্ব মন্দার এই সময়েও পূর্বের রাজ্যগুলো পশ্চিমি রাজ্যগুলোর চেয়ে অর্থনৈতিকভাবে অধিকতর ভালো অবস্থায় রয়েছে৷ মন্ত্রী ভল্ফগাং টিফেনজে বলেছেন, আমি এ কথাটা বলতে পারি যে, গত তিন চার বছরে আমরা জার্মানির পূর্বাঞ্চলে খুবই ভাল এক পথ ধরে চলেছি৷
টিফেনজে বুধবার সংসদে এই বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর সাংবাদিকদের বলেন, শান্তিপূর্ণ বিপ্লব এবং ঐতিহাসিক প্রাচীর পতনের বিশ বছর পর জার্মানির পূর্বাঞ্চলের অর্জনের স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে৷ তাঁর মতে, জার্মানির পশ্চিমাঞ্চল যতটা অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি, পূর্বাঞ্চল ততটা নয়৷ তিনি বলেন, গত বছর যখন পশ্চিমাঞ্চল অর্থনৈতিক মন্দায় জর্জরিত, সেসময়ে পূর্বাঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান স্থিতিশীল হয়েছে৷ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এই বছর পূর্বাঞ্চলে মাথা পিছু গড় জাতীয় উৎপাদন – জিডিপি ৭১ শতাংশে পৌঁছেছে যা ২০০০ সালে ছিল ৬৭ শতাংশ৷ এছাড়া, গত তিন বছরে পূর্বাঞ্চলে শিল্প-কারখানার প্রবৃদ্ধি ঘটেছে ৭.৫ শতাংশ যখন পশ্চিমাঞ্চলে ঘটেছে মাত্র ৪.৩ শতাংশ৷ টিফেনজে পূর্বাঞ্চলের এই উন্নয়নের পেছনে ১৯৯০ সাল থেকে দেয়া এক ট্রিলিয়ন ইউরোরও বেশি পরিমাণ ‘সংহতি কর' এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন৷ উল্লেখ্য, শুধুমাত্র ২০০৬ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যেই পূর্বাঞ্চলের অর্থনীতি এবং অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য জার্মান সরকার ভরতুকি দিয়েছে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন ইউরো৷
তবে বর্তমানে পূর্বাঞ্চলে বেকারত্বের হার ১৩.৩ শতাংশ যা পশ্চিমের চেয়ে দ্বিগুণ৷ যে কারণে কর্মহীন অবস্থায় থাকা তরুণ ও উদ্যমী জনগোষ্ঠী কাজের আশায় পশ্চিমের দিকে পাড়ি জমাচ্ছে৷ এক্ষেত্রে মেয়েদের সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি৷ এই প্রবণতা এতটাই বেশি যে, প্রতি বছর পূর্ব থেকে পশ্চিমে পাড়ি জমায় প্রায় ৯০ হাজার মানুষ৷ উল্টোদিকে, পূর্বাঞ্চলে যায় প্রায় ৪০ হাজার৷ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূর্বে বসবাসকারী জার্মান নাগরিকদের তিন ভাগের দুই ভাগ মনে করে, কমিউনিজম শাসনামলের চেয়ে তারা অনেক বেশি উন্নতি করছে৷ তবে সেখানে এখনও অধিকাংশ মানুষের অভিযোগ, তাদেরকে পুনরেকত্রিত জার্মানির দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বলে গন্য করা হয়৷
টিফেনজের মতে, পূর্বাঞ্চলে বসবাসরত মানুষদের পূর্ণাঙ্গ জাতীয় পরিচয় অর্জনের জন্য প্রথমত সেখানে বেকারত্বের হার কমাতে হবে৷ দ্বিতীয়ত কর্মীদের বেতন-ভাতার ক্ষেত্রে পশ্চিমের সাথে সমতা আনতে হবে৷ টিফেনজে সংসদে বলেন, পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য এখনও অনেক কিছু করা বাকি৷ তাই তিনি ২০১৯ সাল পর্যন্ত ঐ অঞ্চলের জন্য ‘সংহতি কর' প্রদান অব্যাহত রাখার সুপারিশ করেন৷ উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালের নভেম্বরে বার্লিন প্রাচীরের পতন হলেও পূর্ব এবং পশ্চিম জার্মানির আনুষ্ঠানিক পুনরেকত্রীকরণ ঘটে ১৯৯০ সালের অক্টোবরে৷
প্রতিবেদক: হোসাইন আব্দুল হাই, সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক