শৌখিন পণ্য হিসেবে সর্বাধিক বিক্রির তালিকায় বার্লিন প্রাচীর
২৫ মে ২০০৯১০৬ কিলোমিটার দীর্ঘ বার্লিন প্রাচীর ১৯৬১ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল৷ ১৯৮৯ সালের ৯ নভেম্বর প্রাচীর ভাঙার মধ্য দিয়ে পূর্ব এবং পশ্চিম জার্মানির একত্রিকরণ ঘটে৷ প্রাচীরটির পশ্চিম পাশে নানা রং ও বাহারের বিভিন্ন চিত্র আঁকা ছিল৷ প্রাচীরটি ভেঙ্গে ফেলার রাতে জার্মানির নির্মাণ শ্রমিক পাওলোস্কি পশ্চিম দেয়ালের খুব কাছেই ছিলেন৷ ফলে প্রাচীরটি ভেঙ্গে ফেলার পর সেসব বৈচিত্র্যময় টুকরা সংগ্রহ করাটা পাওলোস্কির জন্য খুব সহজ হয়েছিল৷ কম্যুনিস্ট আমলে বার্লিনকে বিভাজনকারী এই প্রাচীর পতনের ২০ বছর পর আজও পাওলোস্কি স্মৃতিময় টুকরাগুলোকে বাঁচিয়ে রেখেছেন৷
তিনি এখন সেসব টুকরা স্মৃতি ফলক হিসেবে বিক্রির জন্য বিপণিকেন্দ্রগুলোতে সরবরাহ করে থাকেন৷ ৫২ বছর বয়স্ক পাওলোস্কি বলেন, তিনি একদিন দেখেন যে প্রাচীরের টুকরাগুলো পুরনো জিনিস-পত্রের খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে৷ তখন তিনি ভাবলেন যে, তিনি বরং এগুলোকে আরও উন্নত মানের বিপণি বিতানে শৌখিন সামগ্রী হিসেবে সরবরাহ করতে পারেন৷ এরপর থেকেই তিনি এগুলোর ব্যবসা শুরু করেন৷ পাওলোস্কির সাথে তাঁর স্ত্রী এবং পুত্রও একই ব্যবসায় জড়িত৷ তাঁর সংগ্রহে এখনও এতো বেশি পরিমাণ প্রাচীরের টুকরো রয়েছে যে, কমপক্ষে কয়েক দশক তারা এই স্মারক পণ্যের রমরমা ব্যবসা করতে পারবে৷ এখন এগুলোর ৯০ শতাংশই সরবরাহ করেন পাওলোস্কি৷
পাওলোস্কির কাছে বার্লিন প্রাচীরের অর্থ এবং আবেদন ভিন্ন রকম৷ বার্লিন প্রাচীরের কারুকার্য খচিত হাজার হাজার ছোট ছোট টুকরোর দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, এই প্রাচীরটি আমার কাছে অন্যান্য পণ্যের মতো একটি পণ্য৷ এটা ব্যবসা৷ তিনি বলেন, ক্রেতারা এখন আর শুধু সাদামাটা প্রাচীরের টুকরো পছন্দ করে না৷ বরং তারা আরো নান্দনিক মোড়কে এসব টুকরো পেতে চায়৷ এছাড়া প্রাচীরের পশ্চিম অংশে থাকা রঙিন চিত্রকলা এখন কিছুটা মলিন হয়ে গেছে৷ কিন্তু পাওলোস্কি ধূসর হয়ে যাওয়া এসব টুকরোকে নতুন করে রঙ করার মধ্যে তেমন অন্যায় দেখেন না৷ তাঁর মতে, নতুনভাবে রঙ করা টুকরোগুলো ধূসরগুলোর চেয়ে বেশি বিক্রি হয়৷ জার্মানবাসী এ বছর ৯ নভেম্বর যখন বার্লিন প্রাচীর পতনের ২০তম বার্ষিকী উদযাপন করবে তখন পাওলোস্কি স্ব-উদ্যোগে এক বিশেষ ভোজ আয়োজন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন৷
বার্লিনের ব্রান্ডেনবুর্গ তোরণের কাছে পর্যটন সামগ্রীর ব্যবসায়ী ভিলান্ড গিবেল বলেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানের পণ্যগুলোর মধ্যে বার্লিন প্রাচীরের শৌখিন টুকরোগুলো সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়৷ তাঁর মতে, পর্যটক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সবাই এই টুকরোগুলো ঐতিহাসিক স্নায়ু যুদ্ধ এবং বিভক্ত বার্লিনের স্মৃতি হিসেবে সংগ্রহে রাখতে চায়৷
পূর্ব জার্মানির আমদানি-রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান লিমেক্স সবচেয়ে সুন্দর টুকরোগুলো বাজারজাত করেছে৷ ১৯৯০ সালের দিকে বার্লিন, প্যারিস এবং মোনাকো শহরে প্রাচীরের বিভিন্ন অংশ নিলামে বিক্রি করে হাজার হাজার জার্মান মার্ক আয় করেছে অনেকে৷
প্রতিবেদক: হোসাইন আব্দুল হাই, সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক