বাবুনগরীর ওপর শাপলা চত্বরের দায়
১৭ ডিসেম্বর ২০২০আর হেফাজতের সাবেক আামির মাওলানা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর প্রায় তিন মাস পর হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে৷
আহমদ শফী মারা যান গত ১৮ সেপ্টেম্বর৷ চট্টগ্রামের আদালতে দায়ের করা ওই মামলায় হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়ার হুমকিদাতা মাওলানা মামুনুল হকসহ ৩৬ জনকে আসামি করা হয়েছে৷ মামলাটি দায়ের করেছেন মাওলানা আহমদ শফীর শ্যালক মোহাম্মদ মাঈনুদ্দিন৷ আদালত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে৷ তার ছেলেরা মামলা না করে শ্যালক হয়ে কেন মামলা করলেন এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন আল্লামা শফীর পুত্ররা হুমকির মুখে আছেন৷ তারা মামলা করতে যেতে পারছেন না৷ এ কারণেই তিনি মামলা করেছেন৷ আর মৃত্যুর পর মামলা না করে তিন মাস পরে কেন মামলা করা হলো তার জবাবে তিনি বলেন, তখনো তারা হুমকির কারণে মামলা করতে পারেননি৷ এমনকি মাওলানা শাহ আহমদ শফীর এক ছেলে আনাস মাদানীকে তার পিতার জানাজাও পড়তে দেয়া হয়নি৷ তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘তিন দিন ধরে হাটহাজারী মাদ্রাসায় হামলা ও ভাঙচুর চালিয়ে কৌশলে আহমদ শফীকে হত্যা করা হয়৷'' তিনি এজাহারে অভিযোগ করেছেন, এটা একটি পরিকল্পিত হত্যা৷ আহমদ শফী ওই হামলার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে তাকে হাসপাতালে নিতে বাধা দেয়৷ অ্যাম্বুলেন্স ফিরিয়ে দেয়া হয়৷ হাসপাতালে নেয়ার পথে তার অক্সিজেন মাস্ক খুলে এবং মানসিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়৷’’
এর জবাবে মামলার আসামি হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘‘মাওলানা আহমদ শফীর মৃত্যু স্বাভাবিকভাবেই হয়েছে৷ তার মৃত্যুর পর তার বড় ছেলে মোহাম্মদ ইউসুফ এবং মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ যে বিবৃতি দিয়েছে তাতে স্বাভাবিক মৃত্যুর কথাই বলা হয়েছে৷ আর আমি তো এই ঘটনার পুরোটা সময়ই ঢাকায় ছিলাম৷ ‘‘তিনি দাবি করেন, ‘‘মাওলানা আহমদ শফী বেঁচে থাকতে যারা তার ইমেজকে ব্যবহার করে নানা সুবিধা নিয়েছে তারাই এখন আমাদের প্রতিপক্ষ মনে করে এসব মিথ্যা মামলা করছে৷’’
এদিকে চট্টগ্রামে বুধবার শাহ আহমদ শফীর ওপর এক আলোচনা সভায় হেফাজতের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব সলিমুল্লাহ দাবি করেন, ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরের ঘটনার দায় বর্তমান আমির জুনাইদ বাবুনগরীর৷ তিনি তখন হেফাজতের মহাসচিব ছিলেন৷ শাপলা চত্বরে রাতে অবস্থানের কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না৷ রাতে থাকলে সেনাবাহিনী নামবে বলে তিনি একক সিদ্ধান্তে রাতে অবস্থানের নিদেশ দেন৷ সাবেক হেফাজত নেতা সলিমুল্লাহ বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘আমি নিজে যা দেখেছি তাই বলেছি৷ তিনি কী উদ্দেশ্যে এটা করেছেন৷ কাদের সাথে যোগাযোগ করেছেন তা তিনিই ভাল বলতে পারবেন৷’’
তিনি বলেন, ‘‘মাওলানা আহমদ শফী ও মাওলানা কাসেমী বলেছিলেন সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সমাবেশ শেষ করে যে যার মত চলে যাবেন৷ কাসেমী এবং মুফতি ওয়াক্কাস তাকে বার বার সমাবেশ শেষ করার জন্য বলছিলেন৷ কিন্তু বাবুনগরী বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করছিলেন৷ আর বলছিলেন অবস্থান করলে রাতে সেনাবাহিনী নামবে৷ এটা তিনি বার বার বলছিলেন৷ এরপর তিনি মাওলানা শফীকে না জানিয়ে রাতে অবস্থানের সিন্ধান্ত ঘোষণা করেন৷ তার কারণেই এত হতাহতের ঘটনা ঘটে৷’’
এই বিষয়ে চেষ্টা করেও জুনাইদ বাবুনগরীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি৷ তবে হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী দাবি করেন, ‘‘সলিমুল্লাহ সাহেবের এই বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা৷ আমারও তখন দায়িত্বে ছিলাম৷ আমরা তো জানি না৷ উনি জানলেন কীভাবে?’’
তিনি আরো দাবি করেন, ‘‘এটা বাবুনগরী সাহেবের ইমেজ ক্ষুন্ন করা এবং মূর্তি ও ভাস্কর্যবিরোধী আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র৷ একটি মহলের মদতে তিনি এসব করছেন৷'' তিনি আহমদ শফীর মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলাকেও মিথ্যা অভিহিত করে দাবী করেন, ‘‘যাদের আসামি করা হয়েছে তারা সবাই নির্দোষ৷’’
তার কথা, এসব করে মূর্তির বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান থেকে সরানো যাবে না৷ এটা তাদের ঈমানী দায়িত্ব৷