1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাড়ি ফিরতে না পেরে আত্মহত্যা বাঙালি শ্রমিকের

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
১২ মে ২০২০

কেরালার এর্নাকুলামে কাজ করতে গিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের এক শ্রমিক। বাড়ি ফিরতে না পেরে হতাশার শিকার হলেন তিনি।

https://p.dw.com/p/3c4tN
ছবি: Pete Pattisson

বাড়ি আর ফেরা হলো না মুর্শিদাবাদের পরিযায়ী শ্রমিক আসিফ আলি মন্ডলের। বাড়ি ফিরলো তাঁর প্রাণহীন দেহ।  দীর্ঘ ৪৮ দিন ধরে তাঁর বাড়ি ফেরার ছটফটানি দিন দু'য়েক আগে শেষ হয়ে গিয়েছে। আত্মহত্যা করেছেন ১৭ বছরের এই গরিব শ্রমিক।  কাজের খোঁজে মুর্শিদাবাদ থেকে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে তিনি গিয়েছিলেন দক্ষিণ ভারতের কেরালায়। ইটভাটায় কাজ করতে। দুই পয়সা বেশি রোজগার করতে। লকডাউনের ফলে বাড়ি ফেরা হয়নি। ইটভাটা বন্ধ করে মালিক চলে গিয়েছেন। বকেয়া পয়সাও দেননি। জমানো সামান্য টাকা শেষ হয়ে গিয়েছিল তাঁর। বাড়ি ফেরার তাড়নায় দুই বার ট্রেনের টিকিট কেটেছিলেন তিনি। সেই ট্রেন বাতিল হয়েছে। এর্নাকুলাম থেকে একটা শ্রমিকএক্সপ্রেস ট্রেন বহরমপুর এসেছে। অনেক চেষ্টা করেও তাতে ঠাঁই হয়নি। বাড়ি ফেরার ছটফটানি আরও বেড়েছে। আর তাতে জুটেছে হতাশা। শেষ পর্যন্ত উদ্বেগ, ভাবনার বোঝা, নিরাশা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন ওই যুবক।

তাঁর সঙ্গী ও একই ইটভাটায় কাজ করা সরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, কয়েক দিন ধরেই চিন্তায়, ভাবনায় পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলেন আসিফ। তবে তিনি যে এইরকম কাজ করে ফেলবেন, তা ভাবা যায়নি। হতাশায় ডুবে থাকা আসিফ আমবাগানে গিয়ে গলায় দড়ি দেন। তার আগের দিন রাতেও মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন তিনি। তখনও বাড়ি থেকে দূরে থাকার কষ্ট ও ফিরতে চাওয়ার ইচ্ছে নিয়েই কথা হয়েছিলো। তাঁর কাকা জানিয়েছেন, আসিফ ছিলো বাড়ির বড় ছেলে। কেরালায় মজুরি বেশি পাওয়া যায় বলে এত দূরে গিয়ে ইটভাটায় কাজ করছিলেন। লকডাউন যে দিন হলো, তার কয়েকদিন পরেই তাঁর ফেরার কথা ছিলো।

এখন ফিরছে আসিফের প্রাণহীন দেহ। সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''তা হলে কি এটাই মানতে হবে, জীবিত ব্যক্তির থেকে মৃতের দাম বেশি? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের কাছে পশ্চিমবঙ্গের বাইরে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকরা মূল্যহীন। তঁদের ফেরানো হচ্ছে না। মরদেহ ফিরলে পরিবার অন্তত একবার শেষ দেখা দেখতে পারে। কেরালা সরকার তাই মরদেহ পাঠানোর ব্যবস্থা করছে।'' লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা ও বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, ''মুখ্যমন্ত্রী একবার তাঁর অর্থমন্ত্রীর কাছ থেকে জানুন, পরিযায়ী শ্রমিকদের টাকা কীভাবে বাংলার অর্থনীতিকে মজবুত করেছে। তাঁদের বিপদের দিনে এখন কী করে মুখ্যমন্ত্রী মুখ ফেরাতে পারেন? তিনি একবার নিজেকে জিজ্ঞাসা করে দেখুন।''

হতে পারে, এ সবই রাজনৈতিক কোলাহল। কিন্তু এর পিছনে একটা সত্যও থেকে যাচ্ছে। তা হলো, ভিন রাজ্যে আটকে পড়া রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের হাল এবং তাঁদের ফেরানো নিয়ে রাজ্য সরকারের গয়ংগচ্ছ মনোভাব, বিরোধীরা যাকে বলছে অনীহা। রাজ্যের বাইরে যাওয়া শ্রমিকদের সংখ্যা প্রচুর। তা হলে প্রথমে কেন মাত্র দুইটি ট্রেনের ব্যবস্থা করা হলো? তারপর প্রবল সমালোচিত হওয়ার পর মাত্র দশটি ট্রেনের ব্যবস্থা করা হলো? একটা ট্রেনে এক হাজার ২০০ শ্রমিককে ফেরানো যাচ্ছে। তাহলে মোট ১৪ হাজার ৪০০ শ্রমিককে রাজ্যে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাকি হাজার হাজার শ্রমিক ঘরে ফেরার জন্য মরিয়া। তাঁদের কী হবে? এর কোনও জবাব রাজ্য সরকার অন্তত দিচ্ছে না।

হৃদয়বিদারক ঘটনা হলো, যে আসিফ ঘরে ফিরতে না পেরে নিজেকে শেষ করে দিলেন, তাঁর মরদেহ আজ ঘরে ফিরছে। তাঁর স্বজন ছাড়া কেই বা আর এই যন্ত্রণা মর্মে মর্মে অনুভব করবেন? সরকারি খাতায় তো আসিফ এরপর একটা সংখ্যায় পরিণত হবেন। সেখানে উল্লেখ থাকবে, পশ্চিমবঙ্গের একজন শ্রমিক কেরালার এর্নাকুলাম জেলায় আত্মহত্যা করেছেন। কেন করেছেন, তার ইতিহাস হারিয়ে যাবে। যেমন যায় আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে।

 

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড় ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷