1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শ্রমিকদের পশ্চিমবঙ্গে ফেরাতে মাত্র দুইটি ট্রেন

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
৮ মে ২০২০

পরিযায়ী শ্রমিকদের পশ্চিমবঙ্গে ফেরানো নিয়ে প্রবল বিতর্কের মধ্যে পড়লেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য সরকার মাত্র দুইটি ট্রেনে করে রাজস্থান ও কেরল থেকে শ্রমিকদের এনেছেন।

https://p.dw.com/p/3bw7t
ছবি: picture-alliance/AP/C. Anand

 বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে আছেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে কাজের খোঁজে যাওয়া হাজার হাজার শ্রমিক। কেউ মহারাষ্ট্রে, কেউ কর্ণাটকে, কেউ গুজরাটে। কেরালা সহ ভারতের অন্য রাজ্যগুলিতেও কমবেশি প্রচুর বাঙালি শ্রমিক আছেন। করোনার ফলে লকডাউন হয়ে যাওয়ায় অশেষ দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁদের। কিন্তু তাঁদের ঘরে ফেরাতে রাজ্য সরকার মাত্র দুইটি ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে। সূত্রের খবর, বিরোধীরা প্রবল সমালোচনা করার পর রাজ্য সরকার ঠিক করেছে, ভিন রাজ্যের শ্রমিকদের বাসে করে রাজ্যে ফেরার অনুমতি দেওয়া হবে। করোনা ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে এতদিন বাস ঢোকার অনুমতিও দেওয়া হচ্ছিলো না। ওড়িশা সীমান্তেও প্রচুর শ্রমিক এ জন্য আটকে গিয়েছিলেন। উত্তর প্রদেশ, বিহারের মতো রাজ্য ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ট্রেন বোঝাই করে পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়েছে ও ফেরাচ্ছে।

এমনিতেই করোনার ফলে লকডাউন হয়ে যাওয়ায় পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্গতির শেষ ছিলো না। কেউ পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরতে গিয়ে রাস্তায় মারা গিয়েছেন। শুক্রবার ট্রেনের তলায়পিষ্ট হয়ে মারা গিয়েছেন ১৬ জন শ্রমিক। তাঁরা ৪৫ কিলোমিটার হেঁটে ক্লান্ত হয়ে অচেতনভাবে ঘুমোচ্ছিলেন। অভুক্ত, অনেক জায়গায় নিরাশ্রয় শ্রমিকদের ঘরে ফেরার জন্য অবশেষে  ট্রেন চালাতে রাজি হয়েছে রেলমন্ত্রক। শর্ত হলো, রাজ্য সরকারকে বলতে হবে, কোন রাজ্য থেকে তাঁরা শ্রমিকদের নিয়ে আসার জন্য ট্রেন চান। আর শ্রমিকদের ট্রেনে উঠতে দেওয়া, তাঁদের খাবার ও জলের ব্যবস্থা করা, তাঁদের কাছ থেকে টিকিটের টাকা আদায় করা সবই করতে হবে রাজ্য সরকারকে। আর ট্রেনে ৯০০ জন শ্রমিক থাকতে হবে। এই অবস্থায় রেলমন্ত্রকের কাছ থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার মাত্র দুইটি ট্রেন চেয়েছিলো। ইতিমধ্যে বেঙ্গালুরুতে বাঙালি শ্রমিক, রোগী, তাঁদের আত্মীয় ও ছাত্ররা বাড়ি ফেরার দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।

লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরী জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার মাত্র দুইটি ট্রেন চেয়েছিলো। একটা রাজস্থান থেকে শ্রমিকদের নিয়ে রাজ্যে পৌঁছেছে। অন্যটি এর্নাকুলাম থেকে রাজ্যে গিয়েছে। তিনি রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের সঙ্গে কথা বলেছেন। রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার না চাইলে তাঁরা নিজে থেকে ট্রেন দিতে পারেন না। অধীর এরপর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ফোন করেন। তিনিও কংগ্রেস নেতাকে জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যকেই নিয়ম মেনে ট্রেন চাইতে হবে। না হলে, তাঁদের কিছু করার নেই। 

রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''লকডাউনের শুরু থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমন একটা ভাব দেখাচ্ছিলেন, যেন তিনি পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে খুব চিন্তিত। সে সবই যে আসলে রাজনীতি তা আরেকবার প্রমাণ করে দিলেন। যখন রাজ্যের শ্রমিকদের আনার ব্যবস্থা করলো কেন্দ্র, তখন তিনি ট্রেনই চেয়ে উঠতে পারলেন না। তিনি কি আদৌ জানেন, রাজ্যের কত শ্রমিক কোন রাজ্যে আছেন?'' অধীরের প্রশ্ন, ''কেন কর্ণাটক থেকে ট্রেনে করে শ্রমিকদের আনার ব্যবস্থা করবেন না মুখ্যমন্ত্রী? বাসে করে রাজ্যে ফিরতে ভাড়া লাগবে। সেই অর্থ কি তিনি দেবেন? দিল্লি পরিযায়ী শ্রমিকদের পাঁচ হাজার টাকা দিচ্ছে। কর্ণাটক দিচ্ছে তিন হাজার। পশ্চিমবঙ্গ কেন একটা পয়সাও দিচ্ছে না?''

তৃণমূল জানিয়েছে, এ সবই রাজনৈতিক প্রচার। রাজ্য সরকার ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে। দরকার হলে আরও করবে। পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে নিরাপদে ফেরানো হবে। কিন্তু তাঁদের এই আশ্বাসের পরেও বিতর্ক থামছে না। সমালোচনাও নয়।