বাজেটের লক্ষ্য প্রবৃদ্ধি
১১ জুলাই ২০১৪১০ই জুলাই বিজেপি-জোট সরকারের প্রথম বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি৷ সেই বাজেটে দেশের আর্থিক প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে দ্বিমুখী নীতি গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে৷ বলা বাহুল্য, গত দু'বছরে ভারতে বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি ছিল পাঁচ শতাংশের নীচে৷ তার সঙ্গে ভরতুকির বোঝা বেড়েছে ৪ দশমিক ১ শতাংশ৷ তাই আগামী ৩-৪ বছরে প্রবৃদ্ধির হার বাড়িয়ে ৭ থেকে ৮ শতাংশ করার আশা ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী৷
তাঁর পেশ করা বাজেটে রাজস্বের পরিমাণ বাড়িয়ে এবং রাজকোষ ঘাটতি কমিয়ে এনে মুদ্রাস্ফীতিতে রাশ টানার কথা বলা হয়েছে৷ সেই লক্ষ্যে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নিকে হাতিয়ার করতে প্রতিরক্ষা এবং বিমা ক্ষেত্রে বিদেশি পুঁজির পরিমাণ ২৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪৯ শতাংশ৷ কর্মসংস্থানের জন্য বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি, বলেন অর্থমন্ত্রী জেটলি৷ ‘কর্পোরেট কালচার' ফিরিয়ে আনতে কর-কাঠামোয় স্বচ্ছতা এনে একটা ইতিবাচক সংশোধনের কথা বলা হয়েছে৷ পরিকাঠামোর উন্নতিতে বরাদ্দ করা হয়েছে ৩৭ হাজার কোটি টাকা৷ প্রতিবছর ৮,৫০০ কিলোমিটার সড়ক তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে মোদীর৷ মহাত্মা গান্ধী গ্রামীণ রোজগার গ্যারান্টি স্কিমে পরিবর্তন করা না হলেও, সংশোধন করার কথা বলা হয়েছে৷ দেশে নতুন ৯টি বিমানবন্দর তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে বাজেটে৷ এছাড়া কৃষিজীবীদের ঋণদানের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৪,০০০ কোটি টাকা আর সেচ সুবিধা বাড়াতে ১,০০০ কোটি টাকা৷
অন্যদিকে সামাজিক ক্ষেত্রে তেমন বড় রকম পরিবর্তনের ইঙ্গিত নেই বাজেটে৷ গরিবি কমিয়ে আনার কথা বলা হলেও গরিবমুখী কোনো দিশা নির্দেশ নেই৷ তবে গ্রামাঞ্চলে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎসরবরাহের আশ্বাস রয়েছে বাজেটে৷ আয়করে ছাড়ের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে৷ সিনিয়ার সিটিজেনদের জন্য বিশেষ আর্থিক প্রকল্প, মহিলাদের সুরক্ষা এবং ‘‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও'' প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা৷
বাজেট ভাষণে নতুন কোনো অর্থনৈতিক দর্শন বা ‘আইডিয়া' দেখা যায়নি বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা৷ স্বাভাবিকভাবেই, শেয়ার বাজারের সূচক বেশ পড়ে যায় বাজেট পেস করার পর৷ কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মধুসূদন দত্ত এই বাজেটের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক সম্পর্কে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মোদী সরকারের প্রথম বাজেটে নতুন দিশা কিছু নেই৷ সাবেক মনমোহন সিং সরকারের বাজেটের ধারাবাহিকতাই মোটামুটি বজায় রাখা হয়েছে এতে৷ আগের সরকারের মতোই ভরতুকি কমানোর দৃষ্টিগ্রাহ্য কোনো সমাধানসূত্র চোখে পড়েনি৷ তবে জমি জট, নীতি পঙ্গুত্ব ইত্যাদি যেসব কারণে সাবেক সরকার বিনিয়োগের অনুকূল বাতাবরণ গড়ে তুলতে পারেনি, মোদী সরকার সেটা করতে পারবে কিনা – সেটাই এখন দেখার বিষয়৷''
মোদী সরকারের বাজেটের সমালোচনা করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেন, এই বাজেটে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি বা এফডিআই ছাড়া আর কোনো কথা নেই৷ আগে খুচরো ব্যবসায় এফডিআই ছিল, এখন তা খুলে দেয়া হয়েছে প্রতিরক্ষা, বিমা এবং ব্যাংকিং ক্ষেত্রে৷ গরিবদের জন্য ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো হয়নি৷ এতে সাধারণ মানুষের ওপর তার প্রতিকূল প্রভাব পড়বে৷
তাঁর কথায়, ‘‘এই বাজেটে ভিশন, মিশন ও অ্যাকশনের কোনো কথা নেই৷''