বাজেট অধিবেশন উত্তাল
৮ জুলাই ২০১৪নতুন মোদী সরকারের প্রথম বাজেট অধিবেশনে প্রথম দিন থেকেই উভয়কক্ষ উত্তাল হয়ে ওঠে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ইস্যু নিয়ে৷ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি যেমন কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, আরজেডি, আম আদমী পার্টি এবং বামদল, একযোগে আগ্রাসী ভূমিকা নেয়৷ স্লোগান দেয়, স্পিকারের মঞ্চের সামনে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ জানাতে থাকে৷ কংগ্রেস নেতা ও প্রাক্তন মন্ত্রী বীরাপ্পা মইলির অভিযোগ মোদী সরকার মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিপুল জনমত নিয়ে সরকার গঠন করে সেই প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থ হয়েছে৷ বারংবার বাধা দিতে থাকায় অধিবেশন সারাদিনের মতো মুলতুবি ঘোষণা করেন স্পিকার সুমিত্রা মহাজন৷
উল্লেখ্য, সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় বিজেপি-জোট সরকারের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্টতা থাকলেও উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় নেই৷ বিল পাশ করাতে তাই সরকারকে বেগ পেতে হবে৷ রাজ্যসভার অনুমোদনে পথ আটকাতে পারে কংগ্রেস ও অন্য বিরোধীদল৷ সেই বাধা অতিক্রম করা হবে মোদী সরকারের পক্ষে এক চ্যালেঞ্জ৷ তবে জয়ললিতার এআইএডিএমকে দলকে পাশে টানতে পারে সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে৷ মহিলাদের সম্পর্কে তৃণমূল সাংসদ তাপস পালের কুৎসিত মন্তব্যের বিরুদ্ধে সংসদ চত্বরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে বাম মহিলা সংগঠনের কর্মী ও সমর্থকেরা৷
৮ই জুলাই রেল বাজেটের পর ৯ই জুলাই প্রকাশিত হবে দেশের অর্থনৈতিক সমীক্ষা এবং ১০ই জুলাই সাধারণ বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি৷ সাধারণ বাজেটে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সরকার কী কী ব্যবস্থা নিতে পারে, তাই নিয়ে চলছে কর্পোরেট মহলে জল্পনা৷ অর্থনীতিকদের মতে, সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার হবে লাগাম ছাড়া দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির রাশ টানা৷ সেটা করার উপায় কী? রাজকোষ ঘাটতি কমানো, বেহাল অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করা, প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ তথা আর্থিক সংস্কার, ভরতুকির ছাঁটাই করা কিংবা ঢেলে সাজানো ইত্যাদি৷
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভরতুকি ছাঁটাই করা খুব সহজ হবে না, বিশেষ করে খাদ্যা ও সারে৷ ভরতুকি ছাঁটাই করলে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আরো বাড়বে৷ কাজেই ভরতুকি হ্রাস ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বিপ্রতীপ জায়গায় রয়েছে৷ ইতিধ্যেই জ্বালানির দাম এক প্রস্ত বাড়ানো হয়েছে৷ এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বৃষ্টিপাতের ঘাটতি এবং ইরাকে অস্থিরতার দরণ আন্তর্জাতিক পেট্রোপণ্য আমদানিতে সমস্যা৷ বৃষ্টির ঘাটতি পূরণে চাষীদের সেচের জন্য বেশি করে পাম্প চালাতে হবে৷ জ্বালানি খরচ বাড়বে চাষীদের৷ তাই অর্থমন্ত্রী যেটা করতে পারেন, তা হলো, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের পথ সহজ ও সুগম করা৷
অন্যদিকে, ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্নর সি. রঙ্গরাজন কমিটির রিপোর্টে দারিদ্র্যের যে পরিবর্তিত সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে, তা অনুসারে ভারতে প্রতি ১০ জনের মধ্যে তিনজন গরিব৷ এই সংজ্ঞা অনুসারে শহরাঞ্চলে যে সব পরিবার দৈনিক গড়ে ৪৭ টাকা এবং গ্রামাঞ্চলে ৩২ টাকা ব্যয় করে থাকে, তাঁরা গরিবদের পর্যায়ে পড়ে৷ সেই হিসেবে ভারতে ১২০ কোটি মানুষের মধ্যে গরিবের সংখ্যা ৩৬ কোটি ৩০ লাখ, এর মধ্যে ১০ কোটি শহরাঞ্চলে৷ সংসদের বর্তমান বাজেট অধিবেশনে এই রিপোর্ট নিয়ে ব্যপক বিতর্ক হবে৷