মোদীর ‘ডানহাত’ নতুন সভাপতি
১০ জুলাই ২০১৪এর মাধ্যমে শাসকদল বিজেপির ‘মোদীকরণের বৃত্ত’ সম্পূর্ণ হলো৷ দল এবং সরকারকে হাতের মুঠোয় নিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী৷ নতুন দিল্লিতে বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠকে অমিত শাহকে বিজেপির নতুন সভাপতি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়৷ অমিত শাহ প্রধানমন্ত্রী মোদীর ডানহাত বলে পরিচিত হলেও তাঁর সাংগঠনিক তথা রাজনৈতিক যোগ্যতা নিয়ে দলে কোনো দ্বিমত নেই৷ ৪৯ বছর বয়সি অমিত শাহ দলের তৃণমূল স্তর থেকে ধাপে ধাপে উঠে অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে বিজেপির শীর্ষপদে আসীন হলেন৷ তিনি হলেন বিজেপির সর্বকনিষ্ঠ সভাপতি৷ হালের সংসদীয় নির্বাচনে দলকে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাইয়ে দেবার পেছনে এই অমিত শাহ ছিলেন নেপথ্য নায়ক, বিশেষ করে উত্তর প্রদেশে৷
উল্লেখ্য, সংসদের ৫৪৩টি আসনের মধ্যে বিজেপির ঝুলিতে গেছে ২৮২টি আসন৷ তার মধ্যে উত্তর প্রদেশের ৮০টি আসনের মধ্যে ৭২টি পায় বিজেপি৷ অমিত শাহের সাংগঠনিক এবং কৌশলগত বিচক্ষণতাই তাঁকে দলীয় নেতৃত্বের প্রথম সারিতে তুলে এনেছে৷ সমালোচকরা অবশ্য মোদীর হাতে দল ও সরকারের একাধিপত্য থাকায় প্রমাদ গুণছেন৷
বিতর্কও কম হয়নি এই অমিত শাহকে নিয়ে৷ গুজরাটে নরেন্দ্র মোদীর মুখ্যমন্ত্রীত্বকালে তিনি ছিলেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ সেই সময় পুলিশের সঙ্গে ভুয়া সংঘর্ষে সোহরাবুদ্দিন হত্যা মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তিনি ইস্তফা দিতে বাধ্য হন এবং পরে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ অমিত শাহের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, মাফিয়া ডন সোহরাবুদ্দিন মার্বেল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত তোলা আদায় করতো৷ এতে অতিষ্ট হয়ে মার্বেল ব্যবসায়ীরা গুজরাটের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে প্রচুর টাকা দেন সোহরাবুদ্দিনকে হত্যা করতে৷ পুলিশ সোহরাবুদ্দিননকে তুলে নিয়ে গিয়ে ভুয়া সংঘর্ষে মেরে ফেলে, এমনটাই অভিযোগ৷ ঐ মামলায় পরে তিনি জামিন পেলেও সুপ্রিম কোর্ট ২০১০ সালে তাঁর গুজরাটে ঢোকার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলে তিনি দিল্লিতেই থেকে যান এবং জাতীয় রাজনীতিতে দলের অবস্থান এবং ভবিষ্যত কর্মপন্থা নিয়ে নতুন চিন্তাভাবনা শুরু করেন৷ নিঃশব্দে তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ খন্ডন করার মাল মসলা সংগ্রহ করে প্রমাণ করেন, তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ভিত্তিহীন৷ তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হলে ২০১২ সালে গুজরাট বিধানসভা ভোটের আগে তাঁর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়৷
অমিত শাহ কেবল দলের নয়, সংঘপরিবারের বিশ্বাসভাজন৷ ছাত্রাবস্থায় তিনি ছিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের ছাত্র শাখা অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের সক্রিয় সদস্য৷ বিজেপিতে যোগ দিয়ে তিনি হন দলের যুব শাখা ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার সক্রিয় সদস্য৷ গুজরাটের গ্রামাঞ্চলে কংগ্রেসের প্রভাব খর্ব করতে তিনি অগ্রণী ভূমিকা নেন৷
দলের নতুন সভাপতি হিসেবে অমিত শাহের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ৷ মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, ঝাড়খন্ড ও জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভা ভোটের আর দেরি নেই৷ ভোটে দলের জনপ্রিয়তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে তাঁর ভবিষ্যত নির্বাচনি কৌশল কী হবে সেটাই এখন দেখার বিষয়৷