শিশুদের জন্য এভারেস্ট জয়
৭ জুন ২০১৩মারিয়া দা কঁসেইসাঁও ছিলেন এমিরেটস এয়ারলাইনস-এর ফ্লাইট অ্যাটেনড্যান্ট৷ আট বছর আগের কথা৷ মারিয়া তখন থাকতেন মেঘলোক আর স্বপ্নজগতে: ফার্স্ট ক্লাস ফ্লাইট, ফাইভ স্টার হোটেল৷ হঠাৎ একদিন ঢাকায় একটি ‘স্টপওভার' কঠিন বাস্তব সম্পর্কে তাঁর চোখ খুলে দেয়৷
‘‘আমি যে দারিদ্র্য দেখি, তা উপেক্ষা করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না, উপেক্ষা করে এয়ার হোস্টেসের দৈনন্দিন রুটিনে ফিরে আসা সম্ভব ছিল না,'' ডয়চে ভেলেকে বলেছেন মারিয়া৷ তখন থেকেই মারিয়ার ‘ঢাকা প্রোজেক্ট'-এর শুরু৷ আজ অবধি সেই প্রকল্প থেকে বাংলাদেশের প্রায় ছ'শো দরিদ্র ছেলে-মেয়েকে সাহায্য করা সম্ভব হয়েছে: শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অন্ন, বস্ত্র, সমাজকল্যাণ, সর্বক্ষেত্রেই সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে মারিয়ার ‘ঢাকা প্রকল্প'৷
দাতব্য প্রকল্প দাতাদের উপর নির্ভর৷ মারিয়ার প্রকল্পের জন্য অনুদান আসে প্রধানত দুবাই থেকে, আবার তাঁর স্বদেশ পর্তুগাল থেকেও অনেকে দান করেন৷ মারিয়া শুধু শিশুদের কথাই ভাবেননি, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য একটি প্রকল্প শুরু করেছেন, যার নাম ‘‘ক্যাটালিস্ট''৷ ধারণাটা সহজ: ছোটদের সাহায্য করতে গেলে আগে অভিভাবকদের সাহায্য করা প্রয়োজন৷
আট বছর আগে মারিয়া ঢাকার রাস্তায় এই সব ছেলে-মেয়েদের দেখেন, যাদের ‘‘কোনো অধিকার নেই'', যাদের মানুষ ভুলে গেছে, যারা উপেক্ষিত, অবহেলিত৷ একজন বিদেশি এসে তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করছে: বাংলাদেশের সকলেই যে তা-তে বিশেষ খুশি হয়েছেন, এমন নয়৷ নানারকম সরকারি বিধিনিষেধ, আমলাতন্ত্রের কথা বললেন মারিয়া, যে কারণে তিনি আজও তাঁর প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে বাধা পান৷ ‘‘ওদের দেশে আমি স্বাগত নই৷ ওরা আমাকে ভিসা দিতে চায় না,'' বলেছেন মারিয়া৷ গতবছর তাঁর বিরুদ্ধে মানুষ পাচারের অভিযোগও ওঠে৷
তবুও মারিয়া তাঁর কাজ চালিয়ে গেছেন৷ এবং তা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট সত্ত্বেও, যদিও সেই সংকটে অন্যান্য দাতব্য প্রতিষ্ঠানের মতোই তাঁর প্রকল্পেও অনুদানের পরিমাণ কমে গেছে৷ শেষমেষ মারিয়া তাঁর ঢাকা প্রকল্প ঢেলে সাজাতে বাধ্য হন, নতুন নাম রাখেন ‘মারিয়া ক্রিস্টিনা ফাউন্ডেশন' – নিজের নামে নয়, তাঁর পালিকা মাতার নামে৷
ফাউন্ডেশনটির কাজের ধরন অভিনব: মূল লক্ষ্য হলো অভিভাবকরা৷ মেধাবী ছেলে-মেয়েদের বৃত্তি পাবার সম্ভাবনা থাকলে সেই প্রক্রিয়ায় এভাবে সাহায্য করে মারিয়ার ফাউন্ডেশন৷ এমনকি ব্রিটিশ কাউন্সিলের সঙ্গে আয়োজন করেছেন মারিয়া, যা-তে ঐ অভিভাবকরা ইংরিজি শিখে দুবাইয়ে কাজ করতে পারেন৷ কপর্দকশূ্ন্য অবস্থায় এই মানুষগুলো আমিরাতে আসেন: তাদের দেখাশোনার পূর্ণ দায়িত্ব নেয় মারিয়ার ফাউন্ডেশন৷ এভাবে প্রায় ছ'শো দুঃস্থ শিশুকে সাহায্য করা সম্ভব হয়েছে৷
মারিয়ার আসল দায়িত্ব হলো তাঁর ফাউন্ডেশনের জন্য অর্থসংগ্রহ৷ সেজন্য চাই ‘মিডিয়া ভিজিবিলিটি' – মারিয়া তা-তেও পিছপা নন৷ তাঁর মাথায় আইডিয়া আসে: একটা ভালো কাজে এভারেস্টে চড়লে কেমন হয়? যেমন কথা, তেমনি কাজ৷ দুবাইতে এক মাস হাড়ভাঙা ট্রেনিং নেওয়ার পর মারিয়া দা কঁসেইসাঁও সত্যিই বিশ্বের সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করেন, প্রথম পর্তুগিজ মহিলা হিসেবে৷
তাঁর পরের ‘পাগলামো' হলো ‘সাত-সাত-সাত', অর্থাৎ সাতদিনে সাতটি মহাদেশে সাতবারের ম্যারাথন দৌড়৷ তিনি সে অসাধ্যসাধন করবেন তাঁর প্রকল্পের কল্যাণে, বাংলাদেশের সেই সব পথের শিশুদের কল্যাণে, যাদের ভাগ্য তাঁর নিজের ভাগ্যই বদলে দিয়েছে৷