বছরে ১৩ লাখ শিশু হারিয়ে যায়
১০ মে ২০১৩প্রতি ঘণ্টায় একটি শিশুর শৈশব নিলাম হয়ে যায় ভারতে৷ ২০১১ সালে ৯০ হাজার হারিয়ে যাওয়া শিশুর খোঁজ পাওয়া যায়নি৷ তাই হারানো শিশুদের খোঁজ খবর করার জন্য কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো সিবিআই-এর অধীনে এক বিশেষ সেল গঠনের সুপারিশ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন৷ বলা হয়েছে, পাচারকারীদের সহজ শিকার হয় যেসব শিশু, তাদের এবং তাদের পরিবারের সুরক্ষায় স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিসকে আরো বেশি সক্রিয় ও দায়বদ্ধ হতে হবে৷
সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, সবথেকে লাভজনক অপরাধমূলক ব্যবসাগুলির মধ্যে অন্যতম শিশু পাচার৷ মাদক এবং অস্ত্রশস্ত্র পাচারের মতোই এটা লাভজনক৷ কী কাজে লাগানো হয় পাচার করা শিশুদের? বেগার শ্রমিক হিসেবে, খেত মজুর হিসেবে, কার্পেট ও পোশাক শিল্পে, বাড়ির কাজে এবং যৌন সম্ভোগের কাজে৷ এছাড়াও আরো অনেক কাজে ব্যবহার করা হয় পাচার করা শিশুদের৷ যেমন, ভিক্ষাবৃত্তি, অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিক্রি, শিশু পর্নোগ্রাফি৷
এরা পাচারকারীদের সহজ শিকার হয় মূলত আর্থ-সামাজিক কারণে৷ স্রেফ দারিদ্র নয়, আছে বাল্য বিবাহ, বন্যা, সাইক্লোনের মতো প্রাকতিক বিপর্যয়, সাংসারিক হিংসা ও অত্যাচার এবং বেকারি৷ আড়কাঠিরা গরিব মা বাবাকে টাকার টোপ দিয়ে গ্রামাঞ্চল থেকে নিয়ে যায় শহরে৷ তারপর হাত বদল হবার পর কারোর জায়গা হয় যৌন পল্লিতে, কারোর জায়গা হয় বেগার শিশু শ্রমিকের অমানবিক জীবন সংগ্রামে৷
অনেকে মনে করেন, শিশু পাচার বন্ধ না হবার অন্যতম কারণ পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা৷ প্রথমত, পুলিশ নিখোঁজ শিশুর ডায়রি নিতে চায়না৷ নিলেও তার তদন্ত করে না ঠিকমতো৷ এই সমস্যা সবথেকে বেশি চোখে পড়ে জনজাতি এলাকায় যেখানে বালক-বালিকা অনুপাতের ফারাক গোটা দেশের তুলনায় কম৷ তাই গরু ছাগলের মতো বালিকাদের বেচাকেনা সেখানে সহজ৷ ঐসব এলাকা থেকে বালিকাদের পাচার করা হয় সেই সব রাজ্যে, যেখানে লিঙ্গ-অনুপাতের বৈষম্য বেশি৷ যেমন, হরিয়ানা, রাজস্থান, পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্র ও দিল্লি৷ চাকরির লোভ দেখিয়ে যেসব সংস্থা শিশুদের নিয়ে এসে বিভিন্ন কাজে লাগায়, তাদের ওপর কড়া নজর রাখার সুপারিশ করেছে শিশু অধিকার সুরক্ষা সংক্রান্ত জাতীয় কমিশন৷ কমিশনের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ শিশুদের শিক্ষার অধিকার বাস্তবায়নের৷ প্রতিটি শিশু যদি স্কুলে নাম লেখায়, তাহলে তাদের ওপর নজর রাখার কাজটা সহজ হয়৷ নিখোঁজ হওয়া মাত্র রিপোর্টও করা যায়৷
হারিয়ে যাওয়া শিশুদের খুঁজে বের করে তাঁদের পরিবারের হাতে তুলে দেবার আর একটা বিজ্ঞানসম্মত উপায় হলো, জাতীয় ডিএনএ ডেটা ব্যাংক গঠন৷ তাতে থাকবে হারানো শিশুর মা-বাবা, দাবিহীন মৃতদেহ এবং অপরাধীদের ডিএনএ ডেটা৷