নারী অধিকার
৩ জুন ২০১৩‘কেএমজি ইথিওপিয়া' নারী উন্নয়নমূলক এক প্রতিষ্ঠান৷ ‘কেএমজি' অর্থ হলো ‘মেয়েরা কামবাটির জন্য এক সঙ্গে কাজ করে'৷ এটি ইতিমধ্যে বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছে৷ সম্প্রতি বোগালেথকে নারী উন্নয়নে অবদানের জন্য ব্রাসেলসে ‘কিং বোদুয়াঁ আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট পুরস্কার' দিয়ে সম্মানিত করা হলো৷
একসময় আমি নিজেই নিজেকে বলেছি, ‘‘আমি তো গরু নই৷ আমার সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করতে দেব না৷'' এইভাবেই বোগালেথ তাঁর স্বদেশ ইথিওপিয়ার পরিস্থিতি সম্পর্কে বর্ণনা করছিলেন৷ তাঁর ভাষায় ‘‘মেয়েদের সেখানে এমনভাবে বড় করা হয়, যেখানে তাদের সবসময় ‘না' ‘না' শুনতে হয়৷ এভাবে হেঁটো না, ওভাবে হেসো না, এভাবে বসো না, ওভাবে কাপড় পরো না৷ এসব শুনতে শুনতেই আমরা বড় হয়েছি৷ কিন্তু স্বাধীনতাই সবকিছু৷ স্বাধীনতা ছাড়া তুমি কিছুই চিন্তা করতে পারো না৷''
স্বাধীনতার জন্য লড়াই
এই স্বাধীনতার জন্য বোগালেথকে, যাকে বোগে বলে ডাকা হয়, অনেক লড়াই করতে হয়েছে৷ সমাজের অনুশাসনের বিরুদ্ধে গোপনে স্কুলে ভর্তি হন তিনি৷ প্রতিভা ও অধ্যাবসায়ের গুণে এগিয়ে যান৷ বোগেই তাঁর অঞ্চলের প্রথম মেয়ে, যিনি রাজধানী আদ্দিস আবাবায় হাইস্কুলের বেড়া ডিঙাতে সক্ষম হন৷ এরপর বৃত্তি নিয়ে যাত্রা ইসরাইলে৷ তারপর অ্যামেরিকায়৷ সেখানে ডক্টরেটের থিসিস লেখেন এপিডেমিওলজি বা মহামারি সংক্রান্ত বিদ্যায়৷ কিন্তু স্বদেশকে তিনি ভুলে যাননি৷ ১৯৯৭ সালে তিনি ফিরে আসেন তিনি ইথিওপিয়ায়৷
বিয়ের আগে প্রস্তুত করা
বোগালেথ জানান, ‘‘আমি দেখেছি, মেয়েদের অবস্থাটা সেখানে কীরকম? সেখানে বিয়ের আগে মেয়েদের যৌনাঙ্গচ্ছেদের উত্সব পালন করা হয়৷ যা ঘটে তা ভাষায় বর্ণনা করার মতো নয়৷ বিভীষিকাময়৷ কিন্তু মেয়ে বিয়ের উপযুক্ত হওয়ায় বেশ গর্ববোধ করে মায়েরা৷''
বোগালেথ গেবরে জানেন, কোন বিষয়ে তিনি কথা বলছেন৷ ১২ বছর বয়সে নিজের যৌনাঙ্গচ্ছেদের সময় রক্তপাত হয়ে প্রায় মরেই যাচ্ছিলেন স্বাধীনচেতা এই নারী৷ এই ধরনের নিদারুণ অদৃষ্টের হাত থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মেয়েদের রক্ষা করতে চান বোগো৷
আর তাই তো বোনের সঙ্গে মিলে কেএমজি সংস্থাটি গড়ে তোলেন তিনি৷ উদ্যোগ নেন মেয়েদের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধে৷ দুই বোন নিজের এলাকা কাম্বাটিতে ৫০০০ ডলার পুঁজি নিয়ে যাত্রা শুরু করেন৷ কুয়া ও সেতু তৈরির প্রকল্প গড়ে তোলেন৷ এর ফলে গ্রামবাসীদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হন দুই বোন৷ আয়োজন করেন বিভিন্ন সভা সমিতি ও আলোচনা অনুষ্ঠানের৷
নির্দেশ নয় বোঝানো
এই প্রসঙ্গে বোগালেথে জানান, ‘‘তোমরা এটা ভুল করছো' কিংবা ‘ওটা খারাপ' এই ধরনের নির্দেশ দিতে আমরা চাইনি৷ তার চেয়ে মেয়েদের যৌনাঙ্গচ্ছেদের মারাত্মক ফলাফল সম্পর্কে মানুষকে বোঝাতে চেয়েছি আমরা৷ আমাদের কথা শুনে অনেকেই মাথা নেড়ে সায় দিয়েছেন৷ কেউ কেউ কেঁদেছেন৷ অবশেষে ২০০২ সালে যৌনাঙ্গচ্ছেদ না করা প্রথম মেয়েটির বিয়ে হয় প্রকাশ্যে৷''
সেই সময়ে হাজার হাজার মানুষ ঐ দম্পতিকে দেখতে এসেছিলেন৷ এরপর অল্পবয়সী মেয়েরা এক ধরনের পরিচয়-পত্র বহন করতে শুরু করে, যাতে লেখা থাকে ‘‘আমি যৌনাঙ্গচ্ছেদ করতে দেব না৷ আমাকে দেখে তোমরাও শেখ৷'' এই ঘটনার পর জাতিসংঘের শিশুবিযয়ক সংস্থা ইউনিসেফের এক জরিপে দেখা গেছে কেজিএম-এলাকার প্রায় সব মানুষই মেয়েদের যৌনাঙ্গচ্ছেদের বিরুদ্ধে মতামত দিয়েছেন৷
নারী পুরুষের সমানাধিকারের দাবি
ইতোমধ্যে বোগে এইচআইভি/এইডস, নারী পুরুষের সমানাধিকার ইত্যাদি বিষয়গুলির দিকেও মনোযোগ দিয়েছেন৷ দুই বোনের ছোট্ট এক প্রকল্প থেকে একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে এখন এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানা পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছে৷
কীভাবে এত সব অর্জন করতে পারলেন বোগালেথ? এই প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, কার কাছে কৃতজ্ঞ তিনি৷ তাঁর কথায় স্পষ্ট হলো সেটাই, ‘‘আমার মায়ের কাছে কৃতজ্ঞ আমি৷ তিনি আমাকে গোপনে স্কুলে যেতে অনুমতি দিয়েছিলেন৷ তিনি চেয়েছিলেন, মেয়েরা তাঁর চেয়ে ভালোভাবে জীবন কাটাক৷ আমার স্বাধীনতার জন্য আমি তাঁর কাছে অসীম ঋণী৷''