‘বাংলাদেশ থেকে ১০০ জিহাদি যেত সিরিয়ায়’
৯ অক্টোবর ২০১৪বাংলাদেশের গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে এই তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘‘লন্ডন থেকে ঢাকায় আসা সামিউন আটক হওয়ার আগে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে জিহাদি রিক্রুটের জন্য একাধিক বৈঠক করেছে৷ তাঁর কাছ থেকে যেসব তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাতে নিশ্চিত যে সে নিজে জঙ্গি সংগঠন আইএস বা আইসিস-এর সদস্য এবং ঢাকায় আসার আগে এক বছর আইএস-এর হয়ে সিরিয়ায় লড়াই করেছে৷''
তিনি জানান, ‘‘গ্রেপ্তারের পর তাকে প্রথম দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে৷ এছাড়া তার সম্পর্কে আরো তথ্য-সংগ্রহ করা হচ্ছে৷ কারণ এরপর তাকে আবারো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেয়া হবে৷ প্রথম দফার রিমান্ডে সামিউন স্বীকার করে যে, প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ থেকে অন্তত ১০০ জন জিহাদি সিরিয়ায় পাঠানোর টার্গেট ছিল তার৷''
বাংলাদেশের গোয়েন্দা সূত্রগুলোর সন্দেহ, এরই মধ্যে হয়ত বাংলাদেশ থেকে বেশ কিছু জিহাদি সিরিয়ায় গেছে৷ মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা অনুসন্ধান করে দেখছি বাংলাদেশ থেকে কোনো জঙ্গি সিরিয়ায় আদৌ গেছে কিনা৷ তবে এখনও পর্যন্ত কেউ গেছে বলে আমাদের হাতে কোনো প্রমাণ নেই৷''
তিনি বলেন, ‘‘ইরাক ও সিরিয়া ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএস বাংলাদেশে তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করার চেষ্টা করছে৷ আর এই নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করতে তারা পুরনো জঙ্গি সংগঠন, বিশেষ করে জেএমবি-র সহায়তা নিচ্ছে৷'' তবে গোয়েন্দারা দাবি করছেন যে, তাঁরা আইএস-এর প্রাথমিক চেষ্টা ভণ্ডুল করে দিতে পেরেছেন৷
আইএস-এর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বা যোগাযোগ তৈরির চেষ্টা করছে এ রকম সন্দেহে গত দেড় মাসে বাংলাদেশে অন্তত ১৪ জন সন্দেহভাজন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ এদের মধ্যে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবি-র শীর্ষ পর্যায়ের নেতাও আছে৷
গত ২৮শে অক্টোবর বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক সামিউন ওরফে ইবনে হামদানকে ঢাকায় গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আইএস-এর সরাসরি তত্পরতা স্পষ্ট হয়৷ সামিউনকে আটকের পর তাঁর ব্রিটিশ পাসপোর্ট এবং ছয়টি মোবাইল ফোন থেকে আইএস-এর বাংলাদেশে তত্পরতার তথ্য পাওয়া যায়৷
মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘সামিউনের মোবাইল ফোন, অর্থাৎ তার করা এসএমএস থেকে বাংলাদেশের জঙ্গিদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যোগাযোগের প্রমাণ মিলেছে৷ জানা গেছে, বাংলাদেশে আইএস নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার প্রাথমিক পরিকল্পনার তথ্য৷''
সামিউনের মূল বাড়ি বাংলাদেশের হবিগঞ্জে৷ তবে সেখানে তার পরিবারের কেউ থাকেন না৷ তার বাবা-মাসহ সবাই লন্ডনে আছেন দীর্ঘদিন ধরে৷ সামিউন ঢাকায় আসার পর গুলশানের আজাদ মসজিদ ও সিলেটের হযরত শাহজালাল মাজার মসজিদে বৈঠক করে৷ বৈঠকে জেএমবি ও আনসারউল্লাহ ‘বাংলা টিম'-সহ অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরাও উপস্থিত ছিল৷
গত ১৮ই সেপ্টেম্বর আশুলিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয় জেএমবি-র আমির আবদুল্লাহ আল তাসনীম ওরফে নাহিদসহ সাতজনকে৷ তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মো. আসিফ আদনান ও মো. ফজলে এলাহি তানজিলকে৷ এরা সবাই আইএস-এর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল এবং তুরস্ক হয়ে সিরিয়ায় গিয়ে আইএস-এর সঙ্গে যুক্ত পরিকল্পনা করছিল৷ আসিফ এবং তানজিল ব্রিটিশ নাগরিক সামিউনের সঙ্গে প্রথম যোগাযোগ স্থাপন করে৷ ফেসবুকে প্রথম তার পরিচয় হয় আসিফের সঙ্গে৷ এরপর তানজিল আসিফের মাধ্যমে তার সঙ্গে পরিচিত হয়৷ এরপর সামিউন ঢাকায় আসার সিদ্ধান্ত নেয় বলে খবর৷
মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘বাংলাদেশে আইএস-এর অনুসারীদের তত্পরতা আমাদের নজরদারিতে আছে৷ কোণঠাসা হয়ে যাওয়া জঙ্গি সংগঠনগুলোর সদস্যরা ইরাক এবং সিরিয়ার ঘটনায় এখন নতুন করে আইএস-এর দিকে ঝুঁকছে৷ তারা উদ্বুদ্ধ হচ্ছে৷''