কী করবে বাংলাদেশ?
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইসলামিক স্টেট (আইএস বা আইসিস) বিরোধী অভিযানে অংশ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে পাঁচটি আরব রাষ্ট্রসহ ৫৪টি দেশ৷ এই জোটে অংশগ্রহণের জন্য নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বাংলাদেশকেও৷ তবে বাংলাদেশ তার জঙ্গিবিরোধী অবস্থান পরিষ্কার করলেও বৈঠকে অংশ নেয়নি৷
আইএস-কে মোকাবিলায় বহুজাতিক জোট গঠনের পরিকল্পনার রূপরেখা দুই সপ্তাহ আগে ঘোষণা করেছেন বারাক ওবামা৷ জাতিসংঘ অধিবেশনে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুনও আইএস নিয়ে তাঁর উত্কণ্ঠা প্রকাশ করেছেন৷
বুধবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলোর সর্বসম্মতিতে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল এলাকা দখল করে নেওয়া জঙ্গি দল ইসলামিক স্টেটে বিদেশি যোদ্ধাদের যোগদান নিষিদ্ধ করে শর্ত সাপেক্ষে একটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ৷
এদিকে বাংলাদেশের জঙ্গিদের আইএস সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাচ্ছেন এখানকার গোয়েন্দারা৷ বুধবার ঢাকা থেকে জঙ্গি তত্পরতায় জড়িত থাকার অভিযোগে মো. আসিফ আদনান ও মো. ফজলে এলাহী তানজিল নামে দুই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন যে, তারা জঙ্গি সংগঠন আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য এবং আইএস-এ যোগ দেয়ার পরিকল্পনা করছিল৷ এদের মধ্যে আদনান সুপ্রিম কোর্টের সাবেক এক বিচারপতির ছেলে এবং তানজিলের মা যুগ্ম সচিব৷ মনিরুল ইসলাম জানান, ‘‘তারা ‘জিহাদে' অংশ নিতে তুরস্ক ও সিরিয়া যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল৷''
এর আগে গোয়েন্দারা গত ১৯শে সেপ্টেম্বর নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবি-র ভারপ্রাপ্ত আমির আব্দুল্লাহ আল-তাসনিম ওরফে নাহিদসহ সাতজনকে আটক করেন৷ তারাও আইএস-এর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন বলে গ্রেপ্তারের পর ডয়চে ভেলেকে জানান যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম৷ বৃহস্পতিবার তিনি জানান, ‘‘বাংলাদেশের জঙ্গিরা এখন আইএস-এর জঙ্গি তত্পরতার উদ্বুদ্ধ হয়ে তাদের দিকে ঝুঁকছে৷''
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রশিদ (অব.) ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এই সময়ে আইএস-এর তত্পরতা সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান৷ বিশেষ করে ইরাক এবং সিরিয়ার ঘটনা বাংলাদেশের জঙ্গিদের ওপর প্রভাব ফেলছে এটা স্বাভাবিক৷ তাই বাংলাদেশকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে৷''
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ সরকারের জঙ্গিবিরোধী অবস্থান স্পষ্ট৷ তবে কোনো জোটে যোগ দেয়ার আগে দু'বার ভাবতে হবে৷''
তাঁর মতে, ‘‘আইএস বিরোধী জোটে বাংলাদেশ যোগ দিলে জঙ্গিদের টার্গেটে পরিণত হতে পারে বাংলাদেশ৷ আর বারাক ওবামা আইএস বিরোধী যে জোটের কথা বলছেন, সেখানে তাঁর লক্ষ্য স্পষ্ট নয়৷ তাই অস্পষ্ট কোনো বিষয়ের সঙ্গে সরাসরি জড়িত না হওয়ায়ার বাংলাদেশের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত সঠিক৷''
তিনি বলেন, ‘‘সিরিয়ায় আইএস বিরোধী অভিযানে রাশিয়া এবং ভারতের নীতি ও অবস্থান পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ৷ বাংলাদেশে এই দুই দেশের নীতিকে অনুসরণ করবে বলেই মনে হয়৷''
তবে তিনি এও মনে করেন, ‘‘বারাক ওবামা তাঁর অবস্থান যত দ্রুত স্পষ্ট করবেন তত দ্রুত আরো অনেক দেশ আইএস বিরোধী জোটে অংশ নেবে৷ আর বাংলাদেশকে তার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং জঙ্গি দমনে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা এবং তথ্য ব্যবহার করতে হবে৷''