সংসদে ফিরছে তিন তালাকবিরোধী আইন
১৩ জুন ২০১৯এ মাসের মাঝামাঝিতে বসতে যাচ্ছে দেশটির সপ্তদশ সংসদ অধিবেশন। শুরুতেই আটকে থাকা তিন তালাক বিলটি আবারো তুলতে চান ক্ষমতাসীনরা৷ সবশেষ, এ বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি নিয়ে অধ্যাদেশ এনছিল সরকার। লোকসভায় পাশ হলেও, বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় রাজ্যসভায় আটকে গেছে বিলটি৷ এদিকে, অধিবেশন শুরুর ৪৫ দিনের মধ্যে বিল পাশ না হলে, অধ্যাদেশটি বাতিল হয়ে যাবে৷ তাই এ নিয়ে বিজেপির তাড়া আছে৷ যদিও রাজ্যসভায় ক্ষমতাসীনরা সংখ্যালঘু৷
কয়েকমাসের মধ্য এই পরিস্থিতি বদলে যাতে পারে৷ বেশ কিছু রাজ্যে ক্ষমতায় আসায়, রাজ্যসভাতেও সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে বিজেপি। তবে বিরোধী দলের সমর্থন ছাড়া, এই বিল পাশ করানো কাজটা সহজ হবে না। আর এটা বুঝেই, বিরোধী নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সমর্থন চেয়েছেন সরকারের প্রতিনিধিরা৷
এদিকে, আইন প্রণয়নে বিরোধী দলের বিরোধিতার সমালোচনা করেন, আন্দোলনকর্মী অধ্যাপিকা তনবীর নাসরিন৷ তাঁর মতে, একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের নারীদের নিপীড়ন ও বঞ্চনা থেকে মুক্তি দিতে, বিলটি পাশ হলে তা হবে, তা যুগান্তকারী ঘটনা৷
ডয়চে ভেলেকে অধ্যাপিকা তনবীর নাসরীন বলেন, ‘‘তিন তালাক বিরোধী আইন সম্পর্কে বিরোধী দলগুলোর যে অবস্থান তা আসলে দ্বিচারিতা। অনেকেই বলেন, তিন তালাক খারাপ। কিন্তু, তার জন্য পুরুষের শাস্তি কাম্য নয়। এটা কেমন যুক্তি?এক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতা কোথায় গেল?শুধু ভারত নয়, গোটা বিশ্বে মহিলাদের অধিকার অর্জন করতে দীর্ঘ আন্দোলন চালাতে হয়েছে। এক্ষেত্রেও তাই। ভারতে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ আইনে তো কোনও সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক আইন নেই। তাহলে বিবাহ বিচ্ছেদের আলাদা আইন হবে কেন?''বিল পাশ করে আইনে রূপান্তর প্রসঙ্গে নাসরিনের মত, ‘‘দেশে একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মহিলাদের দীর্ঘদিনের নিপীড়ন ও বঞ্চনা থেকে মুক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও একটি রাজনৈতিক দল বা সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ওপরে নির্ভরশীল হওয়া দুঃখজনক ব্যাপার। লোকসভার বিলটি পাশ হয়েছে আগেই। এখন রাজ্যসভায় সার্বিক ঐক্যমতে বিলটি পাশ হলে তা যুগান্তকারী ঘটনা হবে। তবে, এখানেই শেষ নয়। এরপর মুসলমান মহিলাদের পৈতৃক সম্পত্তির ওপর অধিকার আদায়ের বিষয়টি সামনে আসা উচিত।''
রাজনৈতিক বিশ্লেষক দীপেন্দ্র রায়চৌধুরি মনে করছেন, তিন তালাক আইন পাশ করার পাশাপাশি আরও কিছু পদক্ষেপ নিয়ে মুসলমানদের বিশ্বাস অর্জন করতে মোদী সরকার যে চেষ্টা চালাচ্ছে,
‘‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ সবকা বিশ্বাস, এই স্লোগান তুললেই সবার বিশ্বাস অর্জন করা যাবে এমনটা নয়।
অরুণ জেটলি একসময় বলেছিলেন, যাঁরা আমাদের ভোটার, আমরা তাদেরই প্রার্থী করি। সেই কারণেই ভারতীয জনতা পার্টির প্রার্থী তালিকায় তিন তালাক বিলের সুবিধা হচ্ছে, তাৎক্ষণিক তিন তালাকের ভয় থেকে মুক্তি পেতে চাইছেন মুসলিম মহিলারা। সেক্ষেত্রে এই পদক্ষেপে মুসলিম মহিলাদের, বিশেষ করে কম বয়সী মহিলাদের সমর্থন পাওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে।
নরেন্দ্র মোদী অতীতের বিজেপির গড়পড়তা নীতি থেকে দলকে বের করে আনতে চাইছেন। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিজেপি কোনও সম্প্রদায়কে তোষণের নীতি বিলোপ করতে চাইছেন। মোদীর লক্ষ্য, দেশের দ্রুত অর্থনৈতিক বিকাশ। কোনও একটি সম্প্রদায়কে দূরে সরিয়ে রেখে সেটা সম্ভব নয়।
তাঁর মতে, ‘‘প্রস্তাবিত তিন তালাক আইন এবারও হয়তো আটকে যেতে পারে। বিরোধীরা মুসলিম স্বামীর শাস্তি বিধানের বিরোধিতা করছেন। এমনিতে হিন্দু বা অন্য কোনও সম্প্রদায়ের স্বামী একই অপরাধ করলে তার শাস্তি হবে। কিন্তু, মুসলিম স্বামীর হবে না। এই অবস্থান থেকে কংগ্রেস-সহ অন্যান্য বিরোধীরা সরে আসবে বলে মনে হয় না।''