1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তিন তালাক ফৌজদারি অপরাধ, জারি অর্ডিন্যান্স

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

তিন তালাককে ফৌজদারি অপরাধ বলে ঘোষণা করে অর্ডিন্যান্স জারি করেছে কেন্দ্র৷ কিন্তু বিতর্ক থামেনি৷ বরং এর বিরোধীতা করে আসরে নেমে পড়েছে কংগ্রেসসহ অ-বিজেপি দলগুলি৷

https://p.dw.com/p/35JKC
Indien Protest gegen Triple Talaq
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/S. Purkait

তিন তালাক প্রথাকে আগেই অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছিল সুপ্রিম কোর্ট৷ এবার সেটারই আইনি রূপ দিতে এই অর্ডিন্যান্স আনলো মোদী সরকার৷ এরপর রাষ্ট্রপতি তাতে শিলমোহর দিয়েছেন এবং তা আইনে পরিণত হয়েছে৷ অর্থাৎ তিন তালাক এবার থেকে ফৌজদারি অপরাধ বলে গণ্য হবে৷ শাস্তি সর্বাধিক তিন বছরর জেল ও জরিমানা, দিতে হবে ভরণপোষণও৷ আর সেজন্য তালাকপ্রাপ্ত মহিলা বা তাঁর নিকটতম আত্মীয়পরিজনকে আবেদন করতে হবে৷ জামিনের সংস্থান আছে৷ কিন্তু জামিন পুলিশ দিতে পারবে না, দেবে ম্যাজিস্ট্রেট৷ 

‘‘বিকল্প রাস্তা বের করা হচ্ছে’’

বিজেপি সরকারের এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের পরই রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়৷ কংগ্রেস আঙুল তোলে বিজেপির দিকে৷ ছত্তিসগড়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও মিজোরাম – এই চারটি রাজ্যে আর কয়েক মাসের মধ্যেই বিধানসভা ভোট৷ পরের বছর সংসদীয় নির্বাচন৷ সেই দিকে তাকিয়েই নাকি তড়িঘড়ি এই অর্ডিন্যান্স, মুসলিম মহিলাদের ভোট টানার ফন্দি৷ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা, উত্তর প্রদেশের গত নির্বাচনে সুপ্রিম কোর্টে তিন তালাকের বিরুদ্ধে যে অবস্থান নেয় বিজেপি৷ তার ফলেই মুসলিম মহিলাদের ভোট পায় বিজেপি৷ এতে রাজ্যে বিজেপির জয়লাভের পথ প্রশস্ত হয়.

মোদী ইন্দোরে দাউদি ভোরা মুসলিম সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন কি মুসলিমদের একাংশের ভোট টানতে? প্রশ্ন উঠেছে৷ হালে মৌলবাদী হিন্দু সংগঠন আরএসএস-এর শীর্ষকর্তা মোহন ভাগবতও বলেছেন, মুসলিমদেরও ভারতে থাকার অধিকার আছে৷ পালটা তোপ দেগেছে কংগ্রেসও৷ বলেছে মোদী সরকার মুসলিম সংসার ভাঙার রাস্তা তৈরি করছে৷ বৌকে তালাক দেবার পর স্বামীকে যদি জেলে পোরা হয়, তাহলে তালাকপ্রাপ্ত মহিলা এবং তাঁর সন্তানের ভরণপোষণ কে দেবে?

এআইএমআইএম-এর সুপ্রিমো আসাউদ্দিন ওয়েইসি মনে করেন, এই অর্ডিন্যান্স মুসলিম মহিলাদের স্বার্থের পরিপন্থি৷ বিয়ে একটি সামাজিক সম্পর্ক৷ এতে আইনের নাক গলানো অনুচিত৷ তাঁর মতে, এই অর্ডিন্যান্সের বিরুদ্ধে আবার সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা প্রয়োজন৷ 

ওদিকে তিন তালাক নিয়ে যিনি সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন, সেই ইশরাত জাহান এই অর্ডিন্যান্সকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এবার মুসলিম পুরুষদের গাত্রদাহ হচ্ছে কেন, সেটা সহজেই অনুমেয়৷

হাজি সাহেব নজরুল হাফেজের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ডয়চে ভেলেকে উনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ, মানছি তিন তালাক প্রথার অপব্যবহার হচ্ছে একশ'বার৷ তালাকের অপব্যবহার রুখতে সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দেন, আমরা সেটা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছি৷ কিন্তু ভারতীয় সংবিধানে প্রত্যেকটি ধর্মের স্বাধীনতা দেওয়া আছে৷ বিশেষ করে মুসলিম পার্সোনাল আইনে সেই অধিকার দেওয়া আছে৷ সেখানে অর্ডিন্যান্স জারি করা ঠিক নয়৷ কোরা- হাদিসে বৈধ তালাক দেওয়া একটা প্রেক্ষিতে হয়৷ বিনা প্রেক্ষিতে হয় না৷ বৈধ তালাক একটা ফৌজদারি মামলায় নিয়ে যাওয়া অত্যন্ত দুঃখের বিষয়৷ এটা তো কোরানের ওপর হস্তক্ষেপ৷ মুসলিম সম্প্রদায় এর বিরোধী৷ তাহলে এর বিকল্প কী হতে পারে? উত্তরে হাজি সাহেব ডয়চে ভেলেকে বললেন, বিকল্প রাস্তা বের করা হচ্ছে৷ মুরুব্বিরা বসেছেন, সুপ্রিম কোর্ট বসেছেন৷ আমরা তাঁদের সঙ্গে একমত৷ শীর্ষ আদালত তো বলেই দিয়েছেন তাত্ক্ষণিক তিল তালাক প্রথা অসাংবিধানিক৷''

তিন তালাক একটা প্রেক্ষিতে হয়৷ অন্য ধর্মে কি ডিভোর্স হয় না? অবশ্যই হয়. সেইরকম শরিয়াত অনুযায়ী মুসলিম নারী পুরুষের মধ্যে বিয়ে হয়৷ বিশেষ কোনো কারণে যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা না হয়, জ্বলে পুড়ে ছাই হবার আগে তিন তালাক কি শ্রেয় নয়? কোরান হাদিশে তালাকের একটা পদ্ধতি আছে৷ সেই পদ্ধতি যাতে পালিত হয়, তার জন্য আমরা চেষ্টা করছি৷ বিজেপি সরকার তড়িঘড়ি যে অর্ডিন্যান্স এনেছে, সেটা কোরানের ওপর ইস্তক্ষেপ এরজন্য বিজেপিকে মূল্য দিতে হবে৷

ডয়চে ভেলের প্রশ্ন ছিল ধর্মের চেয়ে মানবিকতা কি বড় নয়? হাজি সাহেবের উত্তর, ‘‘সেটা কি স্রেফ মুসলিম নারীদের জন্য?  লক্ষ লক্ষ অ-মুসলিম বিবাহ বিচ্ছিন্না মহিলাদের ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা হচ্ছে না কেন? হালালা সম্পর্কে কথাটা সত্যি নয়৷ তালাকপ্রাপ্ত মহিলাকে অন্য পুরুষের সংগে বিয়ে করে ঘর করার পর আবার পুরানো স্বামীর সংসারে ফিরে আসতে পারবে৷ এটা আমরা বিশ্বাস করি না৷ কোনো মা-বাবাই সেটা চাইবে না৷ কোরানও তা বলে না৷ আমরা চাই মুসলিম মহিলাদের লেখাপড়া, কর্মসংস্থান ও আর্থিক স্বনির্ভরতা৷ সরকার সেটা না করে ভোটের দিকে তাকিয়ে রুটি সেঁকছে৷'' 

সিপিআই (এম-এল) নেত্রী কবিতা কৃষ্ণানের মতে, তাত্ক্ষণিক তিন তালাক দিলে যদি মুসলিম পুরুষের শাস্তি হয়, তাহলে হিন্দু পুরুষের শাস্তি হবে না কেন? তাঁরাও তো কারণে অকারণে বৌ সন্তান ছেড়ে পালিয়ে যায়৷

ভারতীয় মুসলিম মহিলা সংগঠনের নেত্রী জাকিয়া সোমান মনে করেন, সর্বসম্মতিতে সংসদে পাশ হলেই ভালো হতো৷ তবে এবার সব দলের উচিত হবে এটাকে সমর্থন করা৷

কাঠগোড়ায় তোলা হলো কংগ্রেসকেও৷ কারণ তিন তালাক সংক্রান্ত বিলটি (মুসলিম মহিলাদের বিবাহ সংক্রান্ত অধিকার সুরক্ষা বিল) বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতার জেরে সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় পাশ হলেও কংগ্রেসের দোনামনার জন্য উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় ঝুলে থাকে৷ একাধিক অধিনিয়মে আপত্তি ছিল কংগ্রেসের৷ বিশেষ করে তালাক-ই-বিদ্দতের কয়েকটি অধিনিয়ম নিয়ে৷ তাই বিরোধী দলগুলি বিলটিতে সংশোধনী এনে নতুন করে পেশ করার আর্জি জানিয়ে সংসদীয় সিলেক্ট কমিটিতে পাঠাতে বলে৷ সংশোধনী আনলেও বিলটি নানা জটিলতায় শেষ পর্যন্ত পেশ করা হয়নি৷

নাগরিক সমাজের একাংশের মতে, অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে বিলটির আইনি রূপ দেবার জন্য এত তাড়াহুড়া করার কি খুব দরকার ছিল? সংসদের শীতকালীন অধিবেশনেই তো রাজ্যসভায় পেশ করা যেত৷ মোদী সরকারের আইনমন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদ বলেছেন, কংগ্রেসকে রাজি করিয়েই বিল পাশ করাবার বহু চেষ্টা করা হয়, কিন্তু কংগ্রেস তাতে কান দেয়নি৷ নিজেদের মুসলিম ভোট ধরে রাখতেই কংগ্রেস আমাদের সমর্থন করেনি৷ সবথেকে বড় কথা কংগ্রেসের শীর্ষ নেত্রী একজন মহিলা৷ তিন তালাকের মতো এমন অমানবিক প্রথাকে কীভাবে তিনি সমর্থন করে এসেছেন?