পেনাল্টির স্নায়ুযুদ্ধ
২৯ জুন ২০১৪এ যুদ্ধে হেরে গিয়ে বহু নায়ককে মুহূর্তে খলনায়কে পরিণত হতে দেখেছে বিশ্বকাপ৷ যুদ্ধজয়ের কৌশল খুঁজতে গবেষণাও কম হয়নি৷ তারই কিছু নমুনা ডয়চে ভেলের পাঠকদের জন্য৷
আমাকে দেখ
একটু ঝুঁকে বার বার দুই পায়ের ভার বদলানো এবং গোল লাইনে অস্থির নাচানাচি গোলরক্ষকদের সাধারণ দুটি কৌশল৷ এর লক্ষ্য একটাই, স্ট্রাইকারের মনোযোগ স্থির হতে না দেয়া৷ এর সঙ্গে ভালো কাজ দেখাতে পারে চোখ ধাঁধানো জ্বলজ্বলে জার্সি৷
হাতে অতিরিক্ত বড় আকারের গ্লাভসও স্ট্রাইকারের দৃষ্টি বিভ্রম ঘটাতে পারে৷ মনে হতে পারে গোলরক্ষক যেন এক অতিকায় দানব, আর তাঁর পেছনে গোলপোস্ট যেন ছোট হয়ে আসছে৷
লালে লাল
গবেষকরা বলেন, লাল রং বিপদ ও রাগের সঙ্গে সম্পর্কিত৷ ফলে স্নায়ু যখন উত্তেজিত থাকে, লাল রং মানুষের সব মনোযোগ কেড়ে নিতে চায়৷ তাই লাল হতে পারে গোলরক্ষকদের জার্সির আদর্শ রং৷
ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা এক গবেষণায় দেখতে পেয়েছেন, লাল জার্সি গায়ে থাকলে পেনাল্টি শুটআউটে একজন কিপারকে মাত্র ৫৪ শতাংশ গোল হজম করতে হয়েছে৷ হলুদের ক্ষেত্রে এই হার ৬৯ শতাংশ, নীল জার্সিতে ৭২ শতাংশ, আর সবুজ জার্সির ক্ষেত্রে ৭৫ শতাংশ৷
শত্রু তুমি, বন্ধু তুমি
গোলরক্ষকদের জন্য এটি একটি ‘ক্লাসিক' কৌশল৷ শুটআউটের বাঁশি বাজার আগে এগিয়ে যাও এবং খেলোয়াড়ি মেজাজে স্ট্রাইকারের সঙ্গে বন্ধুসুলভ করমর্দন কর৷ এরপর মাটি থেকে বল তুলে একটি স্ট্রোক বা দুটো ছোট্ট চাপড়৷ একটু তেরছা করে জায়গামতো বল বসিয়ে ফিরে এসো গোল পোস্টে৷ তাহলেই পুরো নিয়ন্ত্রণ এখন তোমার হাতে৷
এরপর বল আবার মনমতো কায়দায় বসিয়ে লক্ষ্যভেদের জন্য মনোযোগ কেন্দ্রিভূত করা স্ট্রাইকারের জন্য হয়ে ওঠে অনেক কঠিন৷
মধ্যরেখার একটু দূরে
নেদারল্যান্ডসের এক গবেষণায় দেখা গেছে, গোলরক্ষক যদি গোললাইনের ঠিক মাঝখান থেকে সামান্য একটু (চার ইঞ্চির বেশি নয়) সরে অবস্থান নেন, স্ট্রাইকারের শট নির্বাচনের ক্ষেত্রে তা প্রভাব ফেলে৷
কিপারের পাশে গোল পোস্টের যে অংশটি বড়, ১০ শতাংশ সম্ভাবনা থাকে যে স্ট্রাইকার সেই পাশ দিয়েই গোল করতে চাইবেন৷ আর আগে থেকে বুঝতে পারলে কিপারের কাজ হয়ে উঠবে অনেকটা সহজ৷
হোমওয়ার্ক
স্নায়ুযুদ্ধে এগিয়ে থাকতে হোমওয়ার্কের বিকল্প নেই৷ কিপারের জানা থাকতে হবে স্ট্রাইকারের স্টাইল৷ আর স্ট্রাইকার খুঁজবে কিপারের দুর্বলতা৷
২০০৬ সালের বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে পেনাল্টি শুটআউটে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের মুখোমুখি হওয়ার আগে কোচের দেয়া এক টুকরো চিরকুট জার্মানির গোলরক্ষক ইয়েন্স লেমান গুঁজে নিয়েছিলেন তাঁর মোজার মধ্যে৷ সেখানে লেখা ছিল – কোন খেলোয়াড় কোন অ্যাঙ্গেল থেকে কীভাবে শট নিতে পছন্দ করেন৷ তাতে ফল পেয়েছিলেন দারুণ৷
সেই শুটআউটে জার্মানি জিতে যায় ৪-২ গোলে৷ আর মোজায় গোঁজা তোবড়ানো সেই চিরকুট পরে নিলামে বিক্রি হয় সাড়ে ১৩ লাখ ডলারে৷
সময়ের দাম
পেনাল্টি শুটআউটে স্ট্রাইকারের জন্য সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ গবেষকরা বলছেন, বাঁশি বাজার পর ৩ সেকেন্ডের মধ্যে শট নিলে স্ট্রাইকারকে অবাক হয়ে দেখতে হতে পারে, কী চমৎকারভাবে সেটি আটকে দিল গোলকিপার! আর স্ট্রাইকার যদি একটু ধৈর্য্য ধরেন, শট নেন অন্তত ১৩ সেকেন্ড পর, এই অপেক্ষা টলিয়ে দিতে পারে গোলরক্ষকের মনোসংযোগ৷
জেকে/ডিজি (এএফপি, এপি)