পুর্ননির্বাচিত হলে যা করবেন ম্যার্কেল
১২ জুলাই ২০১৭আঙ্গেলা ম্যার্কেলের রক্ষণশীল খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দল (সিডিইউ) আসন্ন নির্বাচনে জয়লাভ করলে পরিমিতহারে কর কমানো এবং নবীন পরিবারগুলোকে বাড়তি অর্থ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে৷ গতসপ্তাহে ঘোষিত নির্বাচনি ইস্তাহারে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি৷ নির্বাচনকে ঘিরে যখন প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো নানা নতুন ‘আইডিয়া' তৈরি করছিল, তখন সিডিইউ তাদের ইস্তাহার ঘোষণা করে যদিও দলটির উপর তেমন একটা চাপ নেই বলেই সাম্প্রতিক জরিপগুলো জানাচ্ছে৷ এতে দেখা যাচ্ছে, চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের চতুর্থবার ক্ষমতায় থেকে যাওয়াতে বাধা সৃষ্টির মতো প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে এখনো কেউ তৈরি হতে পারেননি৷
বার্লিনে সিডিইউ-এর কার্যালয়ে এক সংবাদসম্মেলনে দলের পক্ষে নির্বাচনি ইস্তাহার প্রকাশ করেন ম্যার্কেল৷ এ সময় তাঁর পাশে ছিলেন দলের বাভেরিয়া অংশ সিএসইউ-র প্রধান হর্স্ট সেহোফার, যার সঙ্গে শরণার্থী ইস্যুতে ম্যার্কেলের মতবিরোধের কথা সবাই জানেন৷ তবে ইস্তাহার ঘোষণার সময় শেফার ম্যার্কেলের প্রতি সমর্থনের কথা নানাভাবে প্রকাশ করেন তিনি৷ আর ম্যার্কেল বলেন, ‘‘জার্মানির জন্য আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে: সবার জন্য সমৃদ্ধি এবং নিরাপত্তা৷''
সিডিইউ-এর ইস্তাহারে উল্লেখযোগ্য বিষয়:
- ২০২৫ সাল নাগাদ বেকারত্বের হার তিন শতাংশের নীচে নামিয়ে আনা, অর্থাৎ বর্তমানের বেকারত্বের হার সাড়ে শতাংশ থেকে প্রায় অর্ধেক বা ২৫ লাখ বেকারের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা৷ বিরোধী দলগুলো অবশ্য বারংবার দাবি করে এসেছে, সাড়ে পাঁচ শতাংশ বেকারত্বের যে হার সরকার প্রকাশ করছে, তা সঠিক নয়৷ কেননা বেশ কয়েক লাখ মানুষ তথাকথিত ‘মিনি জব' করছেন, যারা সরকারের উপর নির্ভরশীল৷ এমন মানুষদেরও বেকারের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করতে আগ্রহী বিরোধীরা৷
- সর্বোচ্চ ইনকাম ট্যাক্স ব্র্যাকেট বছরে ৬০ হাজার ইউরো করতে চায় ম্যার্কেলের দল, বর্তমানে যা ৫২,০০০ ইউরো৷ তবে এই বৃদ্ধি ম্যার্কেলের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী দল সামাজিক গণতন্ত্রী দলের (এসপিডি) চেয়ে পরিমিত৷ সেদল টপ ইনকাম ট্যাক্স ব্র্যাকেট বছরে ৭৬,০০০ ইউরো এবং রেট ৪২ শতাংশ থেকে ৪৫ শতাংশ করতে আগ্রহী৷ সিডিইউ চায় শুধুমাত্র ‘সুপার রিচ', অর্থাৎ যাদের একক বাৎসরিক আয় ২৩২,০০০ ইউরো, তাদের ৪৫ শতাংশ ট্যাক্স রেটের আওতায় আনতে৷
- সাবেক পূর্ব জার্মানির উন্নয়নে সব চাকুরিজীবীর দেয়া ‘সলিডারিটি ফি' ২০২০ সাল থেকে ক্রমান্বয়ে তুলে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সিডিইউ৷ দুই জার্মানির পুনরেকত্রিকরণের পর দেশটির পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই ফি ব্যবহার করা হচ্ছে৷ যদিও এর বিরুদ্ধে দীর্ঘকাল ধরে প্রতিবাদ করছে করদাতাদের অধিকারসংক্রান্ত বিভিন্ন গোষ্ঠী৷ এসপিডি-র মতো সিডিইউ-ও এই ফি তুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে৷ তবে ঠিক কবে থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু হবে তা জানায়নি কোন দল৷
- শিশু ভাতা বৃদ্ধি৷ অভিভাবকদের দেয়া শিশু ভাতা বর্তমানের মাসি ১৯২ ইউরো থেকে বাড়িয়ে ২১৭ ইউরো করতে আগ্রহী সিডিইউ৷ পাশাপাশি নির্ভরশীল সন্তান যাদের রয়েছে তাদের ট্যাক্স লাঘবের পরিমাণ ৭,৩৫৬ ইউরো থেকে ৮,৮২০ ইউরো করতে চায় দলটি৷
- প্রথমবার সম্পত্তি কেনা পরিবারকে সহায়তা৷ যেসব পরিবার প্রথমবারের মতো সম্পত্তি কিনবেন তাদের সন্তানপ্রতি বছরে ১,২০০ ইউরো বাড়তি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সিডিইউ৷
- আরো ১৫,০০০ নতুন পুলিশ নিয়োগ করতে চায় দলটি৷ রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় পুলিশের জন্য এই নিয়োগ প্রযোজ্য হবে৷
- দ্বৈত নাগরিকত্ব নীতিতে আংশিক ছাড়৷ অভিবাসীদের দ্বৈত নাগরিকত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে সিডিইউ-এর মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে মতবিরোধ ছিল৷ তবে নির্বাচনি ইস্তাহারে ঘোষণা দেয়া হয়েছে যে, প্রথম প্রজন্মের অভিবাসী এবং তাদের সন্তানরা চাইলে জার্মানি এবং যে দেশ থেকে তারা এসেছেন, সেদেশের নাগরিকত্ব রাখতে পারবেন৷ তবে পরবর্তী প্রজন্মগুলো শুধু একটি দেশের নাগরিকত্ব পাবে৷
বলাবাহুল্য, সিডিইউ-এর প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো এই ইস্তাহারে মোটেই মুগ্ধ নয়৷ চ্যান্সেলর পদে ম্যার্কেলের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী মার্টিন শুলৎস, যিনি বছরের শুরুতে আসন্ন নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন, এই ইস্তাহারকে ‘দুর্বলচিত্তের' বলে আখ্যা দিয়েছেন৷ সাম্প্রতিক মতামতভিত্তিক জরিপগুলো অবশ্য এই দু'জনের মধ্যে কঠিন প্রতিযোগিতা হবে এমন ইঙ্গিত আর দিচ্ছে না৷ তাই জয়ের পাল্লা অনেকটাই ম্যার্কেলের দিকে৷
বেন নাইট/এআই