সমকামী বিবাহ সম্পর্কে মত বদলাবেন ম্যার্কেল?
২৭ জুন ২০১৭বার্লিনের গোর্কি থিয়েটারের ঘরোয়া পরিবেশে মঞ্চে বসে জার্মানির সর্বাধিক বিক্রীত নারী বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘ব্রিগিটে’-র দুই সম্পাদিকার প্রশ্নের উত্তর দেন ম্যার্কেল৷ নিজের বাসভবন থেকে গোর্কি থিয়েটার পায়ে হেঁটে মাত্র পাঁচ মিনিটের পথ৷
সাধারণত আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে এত খোলাখুলি কথা বলতে দেখা যায় না৷ ফুকুশিমার পর ম্যার্কেল যে রাতারাতি জার্মানিতে পরমাণু শক্তির অবসান ঘটানোর সিদ্ধান্ত নেন, সেটা ছিল তাঁর সবচেয়ে সাহসী সিদ্ধান্ত – বলেন ম্যার্কেল৷ অপরদিকে মিডিয়া যে আজ তাঁর চুলের কেয়ারির চেয়ে তাঁর রাজনীতির প্রতি বেশি মনোযোগী, তাতে সুখি ম্যার্কেল৷
ম্যার্কেল যে রসালো মন্তব্য করতে পারেন, তাঁর যে ‘সেন্স অফ হিউমার’ আছে, তাঁকে যারা ভালোভাবে চেনেন, তারা এ কথা আগেও বলেছেন৷ সোমবারের ৯০ মিনিটের টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে সাধারণ জার্মানরাও ম্যার্কেলের এই দিকটিকে দেখতে ও চিনতে শিখলেন৷ গত ১২ বছর ধরে যিনি জার্মানির চ্যান্সেলর, তাঁকে এরকম অকপটে ও খোলামনে কথা বলতে দেখার সৌভাগ্য সচরাচর এ দেশের মানুষদের হয় না৷
‘‘রাজনীতিতে রস-রসিকতা থাকাটা জরুরি৷ আমি দিনে অন্তত একবার হাসি, নয়তো এ কাজ করতে পারতাম না,’’ বলেন ম্যার্কেল৷ অপরদিকে তিনি কাউকে ‘‘তাঁর ছুটি কেড়ে নিতে দেবেন না,’’ জানান ম্যার্কেল৷
বিশ্বনেতার স্বীকারোক্তি
স্বামীর সঙ্গে কিভাবে প্রথম দেখা হয়েছিল– এ প্রশ্নের উত্তরে ম্যার্কেল বলেন, ‘‘কাজের জায়গায়৷’’ অর্থাৎ এখানে তাঁর কাছ থেকে কোনো রোম্যান্টিক আখ্যান আশা করে লাভ নেই৷ ফিট থাকার জন্য ওয়ার্কআউটের ক্ষেত্রে ম্যার্কেল স্বীকার করেন যে, জগিংয়ের চেয়ে যোগব্যায়ামই তাঁর স্বভাবের সঙ্গে মেলে৷ সাজপোশাক নিয়ে কি তিনি মাথা ঘামান? ম্যার্কেলের উত্তর, ‘‘স্বভাবতই আমি কী পরছি, তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করি, কেননা, আমি আমার সঙ্গীকে লজ্জায় ফেলতে চাই না৷’’
আরো অনেক অজানা বা কম-জানা খুঁটিনাটি তথ্যও জানান ম্যার্কেল৷ তাঁর নিজের কোনো টুইটার অ্যাকাউন্ট নেই, তাঁর মোবাইল ফোনে মাত্র ১০০টি নম্বর স্টোর করা আছে৷ এছাড়া বাড়িতে অতিথি আসার আগে নিজে ওয়াইনের গ্লাসগুলো পরীক্ষা করে দেখেন কোথাও ধুলো লেগে রয়েছে কিনা৷
ভাবলেশহীন?
আবার ট্রাম্পের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের কাহিনি উঠে পড়ে৷ বিশেষ করে সেই অস্বস্তিকর মুহূর্তটি, যখন ম্যার্কেল – ফটোগ্রাফারদের কল্যাণে আরো একবার করমর্দন করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন৷ চ্যান্সেলরের প্রস্তাবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কোনো প্রতিক্রিয়াই দেখা যায়নি৷ ম্যার্কেল যখন পরে ট্রাম্পকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করেন, তখন ট্রাম্প বলেন যে, তিনি ‘‘এর আগেই বার দুয়েক আমার সঙ্গে করমর্দন করেছেন, বলে তাঁর ধারণা, যা কিনা সত্যি,’’ গোর্কি থিয়েটারে জানান ম্যার্কেল৷
ট্রাম্প কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখানোয় ম্যার্কেলের মুখের ভাব যা হয়েছিল, সেই প্রসঙ্গ উঠলে জার্মান চ্যান্সেলর জানান, তিনি ঐ ধরনের পরিস্থিতিতে নির্বিকার থাকার চেষ্টা ‘ত্যাগ করেছেন’৷ ‘‘আমি ওটা করতে পারি না – স্কুলেও আমার ঐ সমস্যা ছিল,’’ বলেন ম্যার্কেল৷
মিত্র, অমিত্র
ম্যার্কেলকে প্রশ্ন করা হয়, তিনি রাশিয়ার পুটিন বা যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্পের চেয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ বা ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সংসর্গে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন কিনা৷ ম্যার্কেল উত্তর দেন, তিনি কারো সঙ্গেই সাক্ষাৎ করতে বা না করতে বেশি বা কম পছন্দ করেন না, বরং সকলের সঙ্গেই যোগাযোগ রেখে চলেন৷
‘‘আমার উল্টোতরফে যিনি রয়েছেন, তিনি কী ভাবছেন বা না ভাবছেন, সেটা বোঝা আমার কাজ,’’ বলেন ম্যার্কেল৷ তবে তিনি স্বীকার করেন যে, ‘উল্টোতরফের’ মানুষজনের ক্ষেত্রেও কিছু কিছু মানুষের সঙ্গ বেশি প্রীতিকর৷
‘বিবেকের সিদ্ধান্ত’
সাক্ষাৎকারের শেষে প্রেক্ষাগৃহের দর্শকদের তরফ থেকে প্রশ্নের জন্য মাত্র কয়েক মিনিট সময় ছিল৷ এই সময়ে একজন সমকামী ম্যার্কেলকে সমকামী বিবাহ সম্পর্কে প্রশ্ন করেন৷ তিনি কবে তাঁর রেজিস্টার্ড বা নথিভুক্ত জীবনসঙ্গীকে ‘আমার স্বামী’ বলে সম্বোধন করতে পারবেন? জানতে চান ঐ পুরুষ সমকামী৷
উত্তরে ম্যার্কেল বলেন যে, জার্মান সংসদের বাকি সব দল যে লিঙ্গনির্বিশেষে বিবাহের সপক্ষে, তা তাঁর অজ্ঞাত নয়৷ জার্মান ভোটারদের মধ্যেও সমকামী বিবাহের ব্যাপক সমর্থন আছে৷ রাজনৈতিক বিচারে এরপর একটি বোমা ফাটান ম্যার্কেল, সমকামী বিবাহ নিয়ে বিতর্ক ‘‘বিবেকের সিদ্ধান্তের দিকে এগোবে’’, বলে তাঁর ‘আশা’, বলেন ম্যার্কেল৷
সংসদীয় প্রক্রিয়ার পরিভাষায় এর অর্থ দাঁড়ায়, সমকামী বিবাহ নিয়ে বুন্ডেসটাগে যখন ভোট হবে, তখন কোনো পার্টি হুইপ থাকবে না – অর্থাৎ সংসদসদস্যরা তাঁদের নিজেদের বিবেক অনুযায়ী ভোট দিতে পারবেন৷ সেক্ষেত্রে আর কয়েক মাসের মধ্যেই জার্মানিতে নারী ও নারী, বা পুরুষ ও পুরুষের মধ্যে বিবাহ অনুমোদিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে৷
মিশায়েল ক্যুফনার/এসি