ঈদের আগে-পরে দুর্ঘটনা বাড়ার কারণ
৬ জুন ২০১৯বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি ২০১৬ সাল থেকে ঈদের আগে ও পরে মোট ১৩ দিনের সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য প্রকাশ করে আসছে। তাদের হিসেবে ২০১৬ সালে ঈদুল ফিতরের আগে পরে ১৩ দিনে ১২১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৮৬ জন নিহত হন। আহত হন ৭৪৬ জন। ২০১৭ সালে একই সময়ে সারাদেশে ২০৫টি দুর্ঘটনায় ২৭৪ জন প্রাণ হারান। আহত হন ৮৪৮ জন। আর ২০১৮ সালে ২৭৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩৯ জন নিহত এবং ১ হাজার ২৬৫ জন আহত হওয়ার তথ্য দেন তারা।
এবার ২০১৯ সালে ঈদুল ফিতরের দিনই সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে সংবাদ মাধ্যম। যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানায় তারা এবারও ঈদের আগে পরে ১৩ দিনের সড়ক দুর্ঘটনার হিসাব প্রকাশ করবে। এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাতে পরিস্থিতির এবারো তেমন কোনো উন্নতি হয়েছে বলে মনে হয় না। তারা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ওপর ভিত্তি করে এই হিসাব তৈরি করে।
১৫ ভাগ দুর্ঘটনা ঈদের সময়
বুয়েটের এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিউট( এআরআই)-এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান,‘ বছরে সারাদেশে যত সড়ক দুঘর্টনা ও প্রাণহানি হয় তার ১৪-১৫ শতাংশ হয় দুই ঈদের আগে পরে ১৩ থেকে ১৫ দিনে । এর প্রধান কারণ এই সময়ে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি যাত্রী চলাচল করায় সড়কের গতি ও যানবাহনে বিশৃঙ্খলা বেড়ে যায়। আর ঈদ শেষে ফেরার সময় দুর্ঘটনা বেশি হয়। কারণ ফেরার সময় তাড়াহুড়ো বেশি থাকে।'
এআরআই-এর সাবেক পরিচালক(২০১৮) অধ্যাপক ড. মোয়াজ্জেম হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘ ঈদের সময় বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার এবং মৃত্যু দুই থেকে চার গুণ বেড়ে যায়। আর এটা কোনোভাবেই কমানো যাচ্ছে না। কারণ এসময় অবৈধ যানবাহন এবং অদক্ষ ও বেআইনি চালক বেড়ে যায়। চাহিদা বাড়ায় ট্রিপ বাড়ে। যার সুযোগ নেয় তারা।'
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন,‘ যাত্রীদের অসতর্কতা ও সড়ক মহাড়কের ত্রুটিও এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।'
দুর্ঘটনা বাড়ার ৫ কারণ
এআরআই-এর সাবেক এই দুই অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব ঈদের সময় সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওযার প্রধান পাঁচটি কারণ চিহ্নিত করেন।
১.যাত্রী বৃদ্ধির ফলে ট্রিপ বাড়া
২. বেশি ট্রিপ দিতে বেপরোয়া গতি
৩.সড়কে অবৈধ চালক এবং যানবাহন বাড়া
৪. সড়কের ত্রুটি
৫.যাত্রীদের তাড়াহুড়ো
অধ্যাপক মিজানুর রহমান মনে করেন,‘ সড়কে মুভমেন্ট যত বাড়বে দুর্ঘটনার প্রোবাবিলিটি তত বাড়ে। যা ঈদের সময় হয়।'
অধ্যাপক মোয়াজ্জেম বলেন,‘ এই সময়ে অনেক আনফিট যানবাহন রাস্তায় নামে। আর বাড়তি চালকের যোগান দিকে লাইসেন্স নেই এমন ব্যক্তি বা হেলপারদের দিয়ে গাড়ি চালানো হয়।'
মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান,‘ দুর্ঘটনার দিকে খেয়াল করলে দেখা যাবে চলাচল অনুপযোগী এবং মহাসড়কে চলাচল নিষিদ্ধ থ্রি হুইলার, হিউম্যান হলারে দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। ঈদের সময় এগুলো মহাসড়কে নেমে পড়ে। '
দুর্ঘটনা কমানো যায় কিভাবে
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা এমনিতেই বেশি। বছরে গড়ে সাড়ে পাঁচ হজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। আর এর ৬ ভাগের একভাগ নিহত হয় দুই ঈদের সময়। তাই এই সময়টিকে আলাদাভাবে বিবেচনা করা দরকার।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন,‘ ঈদের সময় যানবাহন এবং সড়কের একটা আলাদা ব্যবস্থাপনা চালু করতে হবে। এবার খোয়াল করবেন ঈদে লম্বা ছুটি। তাই যাওয়ার সময় চাপ কিছুটা কম। আসার সময় চাপ কম হবে কারণ ছুটি আছে। এখন ঈদের সময় যদি ছুটি তিনদিনই হয়, আগে পরে না থাকে তাহলে সড়ক ও যানবাহনে চাপ বাড়ে, তাড়াহুড়ো বেশি থাকে। এই বিষয়টি মাথায় রেখে ঈদের ব্যবস্থাপনার দিকে সরকারকে নজর দিতে হবে।'
তিনি আরো বলেন,‘ এবার সড়ক পরিস্থিতি কিছুটা ভালো। বেশ কিছু সড়ক মহাসড়ক দুই লেন ও চার লেন হয়েছে। ফলে সড়কে ডিভাইডার হয়েছে। এতে যানবাহনের মুখোমুখি সংঘর্ষ কমে যায়। আর মুখোমুখি সংঘর্ষ কমলে মৃত্যুও কমে। এছাড়া ওভারপাস, আন্ডারপাস হয়েছে নতুন, ফুটপাতও বেড়েছে।'
আর অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান মনে করেন,‘ এই সময় যাত্রীসহ সব পক্ষকে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। তাড়াহুড়ো করা যাবে না। হাইওয়ে পুলিশকে অনেক বেশি কার্যকর ও তৎপর হতে হবে। এটা করা গেলে ঈদের আগে পরে সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা যাবে।'