বেকায়দায় তৃণমূল সরকার
২২ মার্চ ২০১৭নারদা স্টিং অপারেশন ভিডিও মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট৷ সেই রায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা৷ কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সেই আর্জি শুধু খারিজই করল না, কলকাতা হাইকোর্টের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলায় তিরস্কার করল পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে৷ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা করে সেই অভিযোগ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হলো রাজ্য সরকার৷
এভাবে অপদস্থ হওয়ার পরও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বললেন, এই রায় সদর্থক৷ হাইকোর্ট এফআইআর করার জন্য সিবিআই-কে ৭২ ঘণ্টার যে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল, সুপ্রিম কোর্ট তা বাড়িয়ে এক মাস করেছে৷ এই ছাড়টুকুই এখন খুব বড় করে দেখাতে চাইছে তৃণমূল৷ মুখ্যমন্ত্রী এবং দলের অন্যান্য নেতা-মন্ত্রীরা স্বস্তি প্রকাশ করে বলছেন, অন্তত কিছুটা সময় পাওয়া গেল৷ কাজেই এই রায়ে তাঁরা ‘খুশি’৷
বিরোধী পক্ষের আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য যার প্রেক্ষিতে বলেছেন, ‘‘রাজ্য সরকার তিরস্কৃত হলো৷ সব আর্জি প্রত্যাহার করতে হলো৷ কলকাতা হাইকোর্টের দেওয়া সিবিআই তদন্তের নির্দেশই বহাল রইল৷ এর মধ্যে খুশির কী কারণ ওঁরা খুজে পাচ্ছেন কে জানে!’’
কংগ্রেস বিধায়ক, রাজ্য বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান সুপ্রিম কোর্টের এই রায় ঘোষণার পরেই নারদ কাণ্ডে জড়িত সব নেতা-মন্ত্রীদের পদত্যাগ দাবি করেছেন৷ আর বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ শাখা নতুন করে উজ্জীবিত৷ বুধবার তারা কলকাতার কলেজ স্কোয়্যার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মহামিছিল করছে অভিযুক্ত নেতাদের পদত্যাগের দাবিতে৷ বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, মমতা ব্যানার্জির সরকার ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে৷
রাজ্য বিজেপির এই নতুন উদ্যমে রাস্তায় নামার কারণ, মঙ্গলবারই দক্ষিণ ভারতের কোয়েম্বাটোরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ, অর্থাৎ আরএসএস-এর তিন দিনের এক সম্মেলনের শেষদিনে আলোচনা হল, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকার ইসলামি মৌলবাদকে প্রশ্রয় দিয়ে, জিহাদিদের আশ্রয় দিয়ে কার্যত সেখানকার হিন্দুদের জীবন বিপন্ন করছে৷ সেটা আটকাতে হবে৷ অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ উত্তর প্রদেশ বিধানসভা ভোটে বিপুল জয়ের পর ঠারে ঠোরে যে বুঝিয়েছেন, এবার বিজেপির লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গ – তাতেই কার্যত অনুমোদন দিল তাদের অভিভাবক সংগঠন, হিন্দুত্ববাদী আরএসএস৷ আর এই দিনই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রে বাংলাদেশ সরকারের একটি সতর্কতামূলক রিপোর্টের কথা জানা গেছে৷ তাতে বলা হয়েছে, অন্তত ২০০০ সশস্ত্র ‘হুজি’ এবং ‘জেএমবি’ জঙ্গি পূর্ব সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকে পড়েছে৷ ফলে আরএসএস-এর বিপন্নতার তত্ত্বই আরও জোরদার হয়েছে৷
তবে তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের হাত পেতে টাকা নেওয়ার ছবি যার গোপন ক্যামেরায় উঠেছিল, নারদ নিউজের সেই স্যামুয়েল ম্যাথুর ভূমিকা যে খুব পরিচ্ছন্ন এবং স্পষ্ট, তা কিন্তু মনে করছে না ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই৷ বরং আগামী এক মাসে দু'টি মৌলিক প্রশ্নের উত্তর খুঁজবেন গোয়েন্দারা৷ কেন, কার নির্দেশে, অথবা স্বার্থে ম্যাথু এই স্টিং অপারেশন চালালেন? ম্যাথুকে টাকার জোগান কে দিয়েছিল? এ ব্যাপারে ম্যাথুকে জেরা করে যে তথ্য পাওয়া গেছে, তা সম্পূর্ণত বিশ্বাসযোগ্য নয় বলেই মনে হয়েছে সিবিআই অফিসারদের৷ ওদিকে তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, এই অভিযোগে কেরালার একটি পুলিশ স্টেশনে এফআইআর দায়ের করেছেন ম্যাথু৷