পথশিশুদের ঠিকানা পালটাবে না?
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯অবশেষে এই শিশুটি আরেকটি শিশুকে জন্ম দেয়৷ এ ঘটনাটি ঘটে প্রায় চার বছর আগে৷ সেই মা বর্তমানে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে৷ আর মা ও সন্তান বড় হচ্ছে অন্য শিশুদের সঙ্গে৷ ঢাকার বছিলায় ‘লিডো পিস হোম'-এ দেখা মেলে এই মা ও ছেলের৷
এই কিশোরী মা পথশিশু, বিশেষ করে মেয়েশিশুদের পরিণতির একটি উদাহরণ মাত্র৷ হোমে থাকার কারণে তার ছেলে পথশিশু পদবি পায়নি৷ কিন্তু ধর্ষণের শিকার এই কিশোরী পথে থাকলে মা হতে গিয়ে হয় মারা যেত, নয়তো ছেলে নিয়ে পথেই জীবন পার করত৷
কিশোরীটির কপাল ভালো, সে বাংলাদেশের লোকাল এডুকেশন অ্যান্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (লিডো)-র উদ্ধারকারী দলের চোখে পড়ে৷ কিন্তু লাখ লাখ পথশিশু সরকার এবং বেসরকারি সংগঠনের নজরের বাইরেই রয়ে গেছে৷ কত শিশু নজরের বাইরে তার সঠিক পরিসংখ্যানও সরকারের কাছে নেই৷ বহু আগের পরিসংখ্যানের সঙ্গে যোগ-বিয়োগ করে সরকারি-বেসরকারি পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, দেশে পথশিশুর সংখ্যা ২০ লাখ বা তারও বেশি৷
জাতিসংঘ শিশু তহবিল-ইউনিসেফ বলছে, যেসব শিশুর জন্য রাস্তা বসবাসের স্থান অথবা জীবিকার উপায় হয়ে গেছে, তাদের পথশিশু বলা হয়৷ আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটি পথশিশুদের তিনটি ভাগে ভাগ করেছে৷ এই শিশুরা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পথে একাএকা বসবাস করতে পারে৷ পথে কর্মরত শিশু বা যেসব শিশু জীবিকার জন্য তাদের দিনের বেশির ভাগ সময়ই রাস্তায় ব্যয় করে, তারাও পথশিশু৷ রাস্তায় বসবাসরত পরিবারের শিশু বা যেসব শিশু তাদের পরিবারের সঙ্গে রাস্তায় বসবাস করে, তারাও পথশিশু৷
এই পথশিশুদের নিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, দাতাগোষ্ঠী এবং স্থানীয় ব্যক্তিদের সহায়তায় বেসরকারি সংগঠন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়িত করেছে৷ তবে এই শিশুদের পুনর্বাসনে পূর্ণাঙ্গ কোনো কার্যক্রম নেওয়া হয়নি৷ অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পথ থেকে এই শিশুদের ঠিকানা পাল্টানোর নির্দেশ দেন৷ তারপর মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় তৎপর হয়েছে৷ কোনো শিশু পথে থাকবে না, তা জানিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী৷ ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় অন্যান্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জন্য দুটি কমিটি গঠন করে মাঠে নামে পথশিশুদের পুনর্বাসনে৷ কমলাপুর এবং কারওয়ানবাজারে পাইলটিং কার্যক্রম শুরু করে৷
পথশিশুদের পরিস্থিতি নাজুক বলেই দেশের প্রধানমন্ত্রীকে এদের জন্য কিছু করার নির্দেশ দিতে হয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বক্তব্যে পথশিশুরা জায়গা পেতে শুরু করে৷
২০১৬ সালের ২৮ এপ্রিল মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি কমলাপুরে পথশিশুদের জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্রের উদ্বোধন করে বলেন, ‘‘শিশুর ঠিকানা পথ নয়, সরকার সব শিশুর আশ্রয়ের ব্যবস্থা করবে৷ এই শিশুদের পরিবার খুঁজে বের করে পরিবারের হাতে শিশুদের হস্তান্তর করবে৷''
সরকারের তৎপরতা বাড়ানোর পর তিন বছরের বেশি সময় পার হয়েছে৷ সেই অর্থে পথ থেকে শিশুদের অদৃশ্য হওয়া বা দেখা না যাওয়ার কথা ছিল৷ তবে বাস্তবতা ভিন্ন৷
রাজধানীর আড়ং সিগনাল দিয়ে যে যাত্রীরা যাতায়াত করেন, তাঁরা জানেন বাস্তবতা কাকে বলে৷ এই সিগনালে রাত ১১টার সময়ও দেখা মেলে শিশুদের৷ একটি মোটরবাইকেল যে উচ্চতা কোনো কোনো শিশুর সেই উচ্চতাও নেই, মোটরবাইকেলের চাকা সমান হতে পারে৷ কিন্তু তারাই বাটি হাতে ভিক্ষা চাইতে নেমে গেছে পথে৷ অনেকে মুরগির পালক দিয়ে বানানো ঝাড়ু হাতে গাড়ির কাচ মোছার কাজ করে৷ উচ্চতার জন্য গাড়ির সামনের কাচের নাগাল পাওয়া এই শিশুদের জন্য কঠিন কাজ৷ এমনও দেখা যায়, শিশু নিজেই ভালোভাবে হাঁটতে পারে না, অথচ তার কোলে আরেক শিশু৷ সুর করে তারা ভিক্ষা চায়৷ সিগন্যালের গাড়ি চলা শুরু হলে চালকেরা এই শিশুদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন৷ ছোট ছোট অবৈধ লেগুনা পরিবহনের পেছনে বাদুরঝোলা হয়ে শিশুদের ঝুলতে দেখা যায় রাত ১০ টা ১১টা পর্যন্ত৷ এই শিশুদের দায়িত্ব যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া তোলা৷ পথশিশুদের মধ্যে কেউ কেউ হয়ত রাতে বস্তিতে ঘুমানোর সুযোগ পাচ্ছে৷ আর একদলকে রেলস্টেশন, বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন জায়গায় খোলা আকাশের নীচে ঘুমাতে হচ্ছে৷
২০১৭ সালের জুলাই মাসে জাতীয় সংসদেও জায়গা করে নেয় পথশিশুরা৷ নির্বাচিত প্রশ্নোত্তরপর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই শিশুদের নিয়ে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কথা জানান৷ প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় পথশিশু পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হয়েছে৷ এতে শিশুরা প্রশিক্ষণ, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা, উন্মুক্ত স্কুল, বিনোদনসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হবে৷ এর বাইরে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি পরিচালিত ছয়টি শিশু বিকাশ কেন্দ্রে দুস্থ ও পথশিশুদের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে৷ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় থাকা শিশু হেল্প লাইন ১০৯৮-এর মাধ্যমে এক লাখের বেশি শিশুকে প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া হয়েছে৷ ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত শহুরে শিশুদের বাল্যবিবাহ থেকে মুক্ত থাকা, শারীরিক নির্যাতন প্রতিরোধসহ বিভিন্ন শর্তে ১৫ কোটি ১২ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে৷ বেসরকারি সংগঠন ‘অপরাজেয় বাংলাদেশ'-এর সহায়তায় ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সালের মে মাস পর্যন্ত ৩০ হাজার ৬৬৫ জনকে ড্রপ ইন সেন্টারে সামাজিক সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে৷ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ১১টি জেলা শহরে শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা সুবিধা পাচ্ছে৷
অর্থাৎ, মোটাদাগে সরকারি বা দৃশ্যমান পর্যায়ে পথশিশুদের নিয়ে কার্যক্রম বলতে গেলে এইটুকুই৷ এর পরে কাজের তালিকায় হয়তো আর কিছু যোগ হয়েছে৷ তবে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে পথশিশুদের নিয়ে কর্মরত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাই বলছেন, যে কার্যক্রম তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল৷
পথের শিশুরা কেমন আছে? এর উত্তরে সরকারের কাছে যে তথ্য আছে, সে অনুযায়ী, পথের শিশুরা ভালো নেই৷
পথশিশু পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরুর আগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আট নম্বর ওয়ার্ডে ২০১৫ সালের ২৭ থেকে ২৮ ডিসেম্বর মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি ভিত্তি জরিপ করা হয় পথশিশুদের পরিস্থিতি অনুধাবনের জন্য৷ কমলাপুর রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন এলাকার মোট ৭০ জন পথশিশুর সংগৃহীত উপাত্তের মধ্যে ছেলে শিশুর সংখ্যাই বেশি ছিল৷ পথশিশুদের মধ্যে শতকরা ১৪ দশমিক ২৯ ভাগের শিশুর বয়স ছিল ০ থেকে ৫ বছর৷ শতকরা ৫২ দশিক ৮৫ ভাগ শিশুর বয়স ছিল ৬ থেকে ১০ বছর৷ শতকরা ৩২ দশমিক ৮৬ ভাগের বয়স ছিল ১১ থেকে অনূর্ধ্ব ১৮ বছর৷ এদের শতকরা ৭০ ভাগ শিশু রাতে রাস্তায় ঘুমায়৷
জরিপ মতে, শতকরা প্রায় ৪৩ ভাগ শিশুই নিজেদের খাদ্য নিজেরা কাজের মাধ্যমে সংগ্রহ করে৷ শতকরা ৬০ ভাগ শিশু মাদক গ্রহণ করে৷ ৭৭ ভাগের বেশি শিশুর স্যানিটেশন ব্যবস্থা নেই৷ প্রায় ৯ ভাগ শিশু যৌন হয়রানির শিকার৷ তবে প্রায় ৯২ ভাগ শিশুই যৌন হয়রানির কথা স্বীকার করেনি বা গোপন করেছে৷ পথে থাকতে গিয়ে শতকরা ৫৭ দশমিক ১৪ ভাগ শিশু পুলিশি বাধার শিকার হয়েছে৷
এ তো গেল কাগজে-কলমে জরিপের কথা৷ আসলেই শিশুরা পথে কেমন থাকে? তাদের অভিজ্ঞতা কেমন? কারওয়ানবাজারে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পুনর্বাসন কেন্দ্রের ১৪ বছরের এক কিশোরের হাত এবং বুকে ব্লেডের অনেকগুলো কাটা দাগ৷ প্রথমে বলতে লজ্জা পেলেও পরে জানালো, সে যখন নিজের জীবনের পরিণতির কথা ভাবত, তখন নিজেই নিজের গায়ে ব্লেড দিয়ে কাটাকাটি করত৷ তার ভাষায়, ‘‘জিদ উঠত, তখন নিজেই ব্লেড দিয়ে শরীর কাটতাম৷'' এই কিশোর সৎ মায়ের অত্যাচারে বাড়ি থেকে পালিয়ে পথে নামে৷ গাঁজা, ইয়াবাসহ বিভিন্ন নেশার সঙ্গে পরিচিত হয়৷ একসময় এই নেশার টাকা সংগ্রহ করতেই চুরি করা শুরু করে৷ পুলিশের হাতে ধরা খেয়ে বহুবার মার খেয়েছে৷ অবশেষে পুনর্বাসন কেন্দ্রের কর্মীরা কেন্দ্রে নিয়ে আসেন৷ তবে এখানে আসার পরও নেশার টানে পথে চলে গিয়েছিল৷ আবার ফিরেও এসেছে৷ এখন সে নিজেই বলে, ‘‘‘রাস্তায় যা করছি, তার সবই ছিল ভুল৷'' এখন এই কিশোর পুনর্বাসন কেন্দ্রে হস্তশিল্প বানানো, মোবাইল রিপেয়ারিংয়ের কাজ শিখছে৷ চোখে-মুখে লাজুক হাসির ঝলকানি৷
এই কেন্দ্রটিতে প্রতিদিন গড়ে ৮০ থেকে ৯০ জন রাতে থাকা, তিন বেলা খাওয়া, গোসল করাসহ বিভিন্ন সুবিধা পাচ্ছে৷ কেন্দ্রের দরজা খোলা থাকে, যখন যে শিশুর ইচ্ছা সে কেন্দ্রে আসতে পারে, আবার চলেও যেতে পারে৷ এ পর্যন্ত ১৫জন শিশুকে স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়েছে৷ ১৫জন শিশুকে হস্তশিল্প বানানো শেখানো হচ্ছে৷ মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় ২০১৬ সাল থেকে গত বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে কার্যক্রমের আওতায় এসেছে মোট ৬ হাজার ৬৪৫জন৷ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে ১৬১জন শিশুকে৷
পুনর্বাসন কেন্দ্রটিতে এই কিশোরের সঙ্গে যিনি পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন, তিনি হলেন মো.মামুন বকাউল৷ ২৩ বছর বয়সি এই যুবক সরকারের পুনর্বাসন কেন্দ্রটিতে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মরত৷ তিনিও ছিলেন পথশিশু৷ অপরাজেয় বাংলাদেশ-এর একটি শেল্টার হোমে বেড়ে ওঠেন৷ এই যুবকের ব্যক্তিগত মতামত, ‘‘সরকার বর্তমানে মাত্র দুইটি পুনর্বাসন কেন্দ্র পরিচালনা করছে৷ বিমানবন্দরের যে পথশিশু, তিন বেলা খাবার বা অন্যান্য সুবিধা নেওয়ার জন্য সে কারওয়ানবাজারে আসবে না৷ এই ধরনের কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়াতে হবে, শিশুরা পথে নামার পর কোনো বিপদে পড়ার আগেই যাতে তাদের পাশে দাঁড়ানো যায়৷ আর বাবা-মায়ের বহুবিবাহ, পারিবারিক অশান্তি, বাবা-মায়ের তালাকসহ বিভিন্ন কারণে শিশুরা পরিবার থেকে ছিটকে এসে পথে আশ্রয় নেয়৷ তাই এই শিশুদের পরিবারে পুনর্বাসনের জন্য শিশুর অভিভাবকদের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিতে হবে৷
মামুন নিজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বললেন, ‘‘রাতে পল্টনে ঘুমাতে গেলেই আনসার সদস্যরা এসে এমন মাইর দিত যা এখনো মনে আছে৷''
পথশিশুদের নিয়ে আরো কিছু কার্যক্রমের কথা জানা যায়৷ বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে ২০১৪ সালের মার্চ মাস থেকে এনজিও বা বেসরকারি সংগঠনের প্রতিনিধিদের তত্ত্বাবধানে ১০টাকার বিনিময়ে শ্রমজীবী পথশিশুরা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ পাচ্ছে৷ তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক বছরেই জমানো টাকার পরিমাণ কমেছে ১৪ লাখ ২০ হাজার টাকা৷ ২০১৮ সালে মাত্র ১২৩টি নতুন ব্যাংক হিসাব খোলা হয়৷ পাঁচ হাজারের কম শ্রমজীবী পথশিশু এ লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে৷ অর্থাৎ উদ্যোগে ভাটা পড়া শুরু হয়েছে৷
১৯৯৫ সাল থেকে পথশিশুদের পুনর্বাসনে কাজ করছে অপরাজেয় বাংলাদেশ৷ এ সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানু বলেন, ‘‘ছোট ছোট প্রকল্প দিয়ে পথশিশুদের পুনর্বাসন করা সম্ভব নয়৷ সরকারি বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগের পাশাপাশি পথশিশুদের পুর্নবাসনের দায়িত্ব আসলে সরকারকেই নিতে হবে৷ তবে এখন পর্যন্ত এখন পর্যন্ত উদ্যোগ খুবই সীমিত৷ দেশে শিশুদের নিয়ে কাজ করছে অনেক সংগঠন, কিন্তু শুধু পথশিশুদের নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা এনজিও বা সংগঠনের সংখ্যা ১০/১২টির পর আর নাম বলা সম্ভব হবে না৷ অথচ নানা কারণেই পথশিশুদের সংখ্যা বাড়ছে৷ আর এই শিশুদের উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে রেখে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব নয়, তা সবাই বুঝতে পারছে৷ আর পথশিশুদের পাশে থাকলে সুফল পাওয়া যায় তার প্রমাণও আছে৷ অপরাজেয় বাংলাদেশের শেল্টারহোমে থাকা পথশিশুরা বড় হয়ে বর্তমানে বিভিন্ন পেশায় কর্মরত৷ ওয়াহিদা বানুর ভাষায়, ‘‘শুধু চিকিৎসক হতে পারেনি, এ ছাড়া প্রায় সব পেশাতেই আছেন তাঁরা৷''
সানিয়া মির্জা, জেসমিন আক্তার, স্বপ্না আক্তার, আরজু রহমান, রাসেল ইসলাম রুমেল, আবুল কাশেম, রুবেল ও নিজাম হোসেনের পরিচয় ছিল পথশিশু হিসেবে৷ তাদের পথ থেকেই কুড়িয়ে আনা হয়েছিল৷ বর্তমানে লিডোর পিস হোমে থাকা এই শিশুরাই লন্ডনে আগামী এপ্রিলে প্রথমবারের মতো আয়োজিত স্ট্রিট চিলড্রেন ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপে খেলার জন্য বাংলাদেশ থেকে নির্বাচিত হচ্ছে এবং প্রস্তুতি নিচ্ছে৷
অর্থাৎ, এই শিশুদের দিকে নজর বাড়ালে শুধু ঠিকানা বদল নয়, ওদের পুরো জীবনটাকেই পাল্টে দেওয়া সম্ভব৷ লিডোর আট ক্রিকেটারের একজন নিজাম হোসেন বর্তমানে পড়ছে নবম শ্রেণিতে৷ সে এখন সংস্থা পরিচালিত মোবাইল স্কুলের দায়িত্বে আছে, সে অন্য পথশিশুদের পড়ানোর দায়িত্ব নিয়েছে৷
সময় এসেছে নিজামদের পাশে দাঁড়ানোর৷ এরাই একসময় অন্যদের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেবে৷ তখন আর খুব বেশি কষ্ট করতে হবে না কাউকে৷
মানসুরা হোসাইনের লেখার সঙ্গে কি আপনি একমত? লিখুন নীচের ঘরে৷