1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মৌলিক অধিকারও নেই যাদের

১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

পথশিশু কারা, কেন তারা পথশিশু হয়, কী আছে তাদের জীবনে– এমন প্রশ্নের তেমন কোনো উত্তর নেই আমাদের কাছে৷ তবে পথশিশু বোধহয় তারা, যাদের ন্যূনতম মৌলিক অধিকার নেই৷ খোলা আকাশের নীচে যাদের দিন-রাত কেটে যায় নিরাপত্তাহীনতায়৷ 

https://p.dw.com/p/3DV2O
Bangladesch | Rohingya-Flüchtlingslager rund um Cox's Bazar
ছবি: DW/ P. Vishwanathan

২০১১ সালে একদিন রাতে বাসায় ফিরছি৷ মগবাজার সিগনালে রিকশা দাঁড়াতেই এক রাজপুত্রসম শিশু চিপস নিয়ে এলো৷ আমি সেই শিশুর চটপটে চোখ আর হাসিমাখা মুখ দেখেই পাঁচ প্যাকেট চিপস কিনে নিলাম৷ সিগনালে অনেকক্ষণ থাকার ফলে গল্পও করলাম৷ তার নাম রাব্বি, কামরাঙ্গিচরে থাকে৷ মা এখানে একটা হোটেলে মসলা বাটার কাজ করে৷ তাই সে বাইরে চিপস বিক্রি করে সময় কাটায়৷ বাড়তি ১০টা টাকা হাতে দিলাম, ফিরিয়ে দিলো৷ গুণে গুণে চিপসের ভাংতি ফেরত দিয়ে বললো, বাড়তি টাকা নেব কেন৷ রাব্বির গুণমুগ্ধ হয়ে গেলাম৷ প্রায়ই দেখা হয়, চিপস কিনি, কথা হয়৷ নাগরিক ব্লগের উদ্যোগে আমরা প্রতিবছর পথশিশুদের ঈদের পোশাক দিতাম৷ সেই সময় আলাদা করে রাব্বির জন্যও জামা সরিয়ে রাখতাম৷ দেখা হলে ঈদের জামা দিতাম৷ ওর মা জানিয়েছিলেন, শিগগির স্কুলে দেবেন রাব্বিকে৷

এরপর আবাস ও কর্মস্থল বদলের কারণে মগবাজার দিয়ে যাওয়া হয় না৷ রাব্বির সঙ্গেও যোগাযোগ কমতে থাকলো৷ ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হাতিরঝিলে আমার সিএনজি অটোরিকশা এসে জ্যামে দাঁড়িয়েছে৷ এক গাদা ছেলে-মেয়ে ঘিরে ধরেছে৷ কেউ বাদাম বিক্রি করতে চায়, কেউ ভিক্ষা চায়, কেউ কিছু খেতে চায়৷ একদম পেছনের একটি ছেলের দিকে তাকিয়ে ‘রাব্বি' বলে চিৎকার দিয়ে উঠলাম৷ সবাই তাকে ঠেলে সামনে দিয়ে বললো, ‘‘রাব্বিরে আপনে চিনেন?'' রাব্বি আমার বিস্মিত চোখের দিকে তাকিয়ে ঠেলে ছুটে বের হয়ে গেল৷ আর শুধু বলে গেল, ‘‘আমার নাম রাব্বি না৷''

ও চলে যেতেই আরেক ছেলে বললো, ‘‘ঐ রাব্বি, এখন নিশা করে৷'' এই তথ্য দিয়ে আমাকে সমৃদ্ধ করে ১০টি টাকা চাইলো ছেলেটি৷ জিজ্ঞাসা করলাম, ‘‘রাব্বির মা কোথায়৷'' সেই ছেলেটিই জানালো, মা আরেকটি বিয়ে করে চলে গেছে৷ আগে কামরাঙ্গিচর বস্তিতে থাকলেও এখন মগবাজার ফ্লাইওভারের নীচে থাকে রাব্বি৷ ভিক্ষা করে, নেশা করে৷

চোখের সামনে নক্ষত্রপতন দেখলাম৷ ৫ বছর আগে যে ছেলের মূল্যবোধ আমাকে বিমোহিত করেছিল৷ পাঁচবছর পর সেই ছেলের আমূল বদলে যাওয়া ততটাই বিস্মিত করেছে৷

রাব্বির মতো প্রতিনিয়ত অসংখ্য শিশু এভাবে নেশার আড়ালে হারিয়ে যায় শুধুমাত্র খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা মৌলিক চাহিদা পূরণের অভাবে৷

ফাতেমা আবেদীন নাজলা
ফাতেমা আবেদীন নাজলা, ডয়চে ভেলেছবি: privat

২০১৫ সালে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘সোশ্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক এনহ্যান্সমেন্ট প্রোগাম' (সিপ) ‘পথশিশুদের অমানবিক জীবন ও বিভিন্ন সমস্যা' শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়,  অর্থের অভাবে পথশিশুদের ৭৫ ভাগ ডাক্তারের কাছে যেতে পারে না৷ অসুস্থ হলে তাদের প্রায় ৫৪ ভাগের দেখাশুনার জন্য কেউ নেই৷ পথশিশুদের প্রায় ৪০ ভাগ প্রতিদিন গোসল করতে পারে না৷ আর ৩৫ ভাগ শিশু খোলা জায়গায় পায়খানা করে৷ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেড়ে ওঠে তারা৷

এরপরের বছর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও ঢাকা আহছানিয়া মিশন আয়োজিত এক সেমিনারে উপস্থাপিত প্রবন্ধে বলা হয়,  সুবিধাবঞ্চিত পথশিশু আছে সাড়ে ১১ লাখ৷ এর মধ্যে সাড়ে পাঁচ লাখই মাদকাসক্ত৷

তবে এসব জরিপের সঙ্গে যে গবেষণাটি তারা যুক্ত করেনি, সেটি হচ্ছে, এই শিশুদের কারোরই অভিবাবক নেই৷ এদের জন্মদাতা পিতা-মাতা রয়েছে৷ কিন্তু আগলে রাখার মতো অভিবাবক তাদের নেই৷

অভিবাববক, স্নেহ ও খুব সাধারণ কিছু চাহিদার অভাবই তাদের পথশিশু করেছে৷ বাংলাদেশে নাকি ১১ লাখ পথশিশু রয়েছে, যার সিংহভাগের আবাস ঢাকা শহরে

কতদিন মাঝরাতে বাড়ি ফেরার পথে মাঝরাস্তায় আইল্যান্ডের ওপর ঘুমিয়ে থাকা নিস্পাপ শিশু-মুখ দেখে ভেতরে ভেতরে গুমড়ে মরেছি৷ ব্যক্তি উদ্যোগে হয়ত একজন-দুজন শিশুকে পুনর্বাসন করা সম্ভব আমাদের পক্ষে৷ অনেকেই সেটি করে থাকেন৷ কিন্তু এই ১০ লাখ শিশুকে সুস্থ স্বাভাবিক ও ন্যূনতম চাহিদা পূরণ হওয়া জীবন দিতে হলে রাষ্ট্রীয় পৃ্ষ্ঠপোষকতা ও উদ্যোগের বিকল্প নেই৷ দিনশেষে আমরা সবাই চাই, রাব্বিরা যেন নেশা না করে৷ মায়ের স্নেহের ছায়ায় বড় হওয়ার অধিকার যেন ওর থেকে কেউ কেড়ে না নেয়৷

আপনিও কি মনে করেন, পথশিশুদের জন্য তেমন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা নেই? লিখুন নীচের ঘরে৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য