নাৎসি আমলের অবিচার
১৬ মার্চ ২০১২আইন কী ভাবে কথা বলে? আইনের চোখ কী সত্যিই বাঁধা? নাহ! সব সময়ে নয়৷ আইনের আছে নিজস্ব পদ্ধতিও৷ যাকে বলে সুবিচার পদ্ধতি৷ তা নাহলে, সেই ১৯৩৯ সালের নাৎসি বিভীষিকার জমানায় ধর্মে ইহুদি এক বেচারি হান্স সাখস'কে নাৎসি কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে টেনে নিয়ে যাওয়ার সময়, তাঁর বিপুল আর ঐতিহাসিক পোস্টারের যে সংগ্রহ কেড়ে নিয়েছিল নাৎসিরা, আজ দীর্ঘ ৮৩ বছর পর সেসবের অধিকার কী করেই বা ফিরে পেতেন পুত্র পেটার সাখস? যদি আইন না থাকতো?
আইন এভাবেই কথা বলে৷ আর সে কারণেই, কথায় বলে, ওপরওয়ালার দরবারে দেরি হতে পারে, তবে অন্ধকার নেই৷ অর্থাৎ, সুবিচার মিলবেই৷ সময় লাগতে পারে, কিন্তু!
সময় লাগতেই পারে৷ তবে তাই বলে এতটা? ব্যাপারটা বিশদে বললে বোঝা যাবে৷ ১৯৩৯ সালে নাৎসি জার্মানিতে বসবাসকারী ইহুদি এক যুবক নাম তাঁর হান্স সাখস, যাঁর ছিল প্রায় ১২,৫০০ অমূল্য সব পোস্টারের এক বিপুল সংগ্রহ৷ তাঁকেই গ্রেপ্তার করে নাৎসিরা৷ কারণ, তিনি ধর্মে ইহুদি৷ তাঁর সেই বিপুল পোস্টারের সংগ্রহ কেড়ে নিয়ে পাঠানো হয় তাঁকে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে৷ মৃত্যুই হয়তো ছিল হান্স'এর নিয়তি৷ কোনো কারণে তিনি বেঁচে যান৷ পাড়ি জমান অ্যামেরিকায়৷ সেখানেই বাকি জীবন অতিবাহিত করেন তিনি৷ কিন্তু, সেই অসামান্য পোস্টারগুলোর কথা তিনি আমৃত্যু ভোলেন নি৷ পুত্র ও পরিবারের কাছে সারাজীবন ধরে গল্প করে গেছেন সেগুলোর৷
এরপরের ইতিহাস বেশ অন্যরকম৷ ২০০৫ সালে হান্সের পুত্র পেটার সাখস জানতে পারেন, তাঁর পিতার সংগ্রহের পোস্টারের কিছু কিছু নমুনা নাকি বার্লিন মিউজিয়ামের সংগ্রহে রয়েছে৷ সব নেই, তবে হান্স'এর সংগ্রহের ৪৫২৯ টি পোস্টারের কথা জানা গেছে৷ জানতে পারা মাত্র তিনি আদালতে আর্জি জানান, পোস্টারগুলো ফিরে চেয়ে৷ বার্লিন মিউজিয়াম প্রথমে জানায়, তারা সেগুলোর মালিক এবং সেগুলো কিছুতেই ফেরত দেবেনা৷ আদালতের চাপানউতোর চলেছে সাত বছর৷ অবশেষে আদালতের রায়ে জিতে গেছেন পেটার সাখস৷ পোস্টারগুলো ফিরিয়ে দিতে আদালতের নির্দেশে রাজিও হতে হয়েছে বার্লিন মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষকে৷
অতএব স্বস্তি৷ পোস্টারগুলো ফিরে পেতে চলেছেন শীঘ্রই অ্যামেরিকা নিবাসী, জন্মসূত্রে জার্মান-ইহুদি পেটার সাখস৷ বলেছেন, ‘‘এগুলোর অমূল্য মূল্য আমার কাছে৷ শুধুমাত্র গবেষক বা অন্যদের জন্যও নয়, সেই আমলের সমাজচিত্রের স্পষ্ট উদাহরণ এই পোস্টারগুলো যে বা যারা দেখতে চাইবেন, তাকেই আমি দেখাবো৷''
কী আছে পোস্টারগুলোতে? তৎকালীন সময়ের ছোটখাটো বিজ্ঞাপন থেকে সভা সমাবেশ, নানান পণ্যের বিজ্ঞাপনী চিত্র, সমাজের ছোটখাটো ঘটনার দলিল, এসবকিছুই৷ তবে পেটারের দাবি অনেক বেশি যুক্তিসংগত৷ কারণ, এই সামান্য পোস্টারগুলোতে আসলে তাঁর পিতার স্পর্শ লেগে রয়েছে৷ আর সেটা ফিরে পাওয়ার দাবি তো পুত্র করতেই পারেন৷ তার ওপর যেখানে এতবড় একটা মানবিকতার ইতিহাসও তার সঙ্গে জড়িয়ে গেছে!
প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ