নাৎসি জমানার কালো অধ্যায় স্মরণ করছে জার্মানি
৯ নভেম্বর ২০১১আচমকা দেশের কোনো বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষকে চিহ্নিত করে যদি একে একে তাদের সব অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়, এমনকি নাগরিক হিসেবে তাদের পরিচয়ও অস্বীকার করা হয় এবং শেষ পর্যন্ত তাদের তুলে নিয়ে গিয়ে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়, তখন সমাজের বাকি অংশের কী করা উচিত? নাৎসি জার্মানিতে ইহুদিদের উপর বেড়ে চলা নিপীড়নের বিরুদ্ধে বৃহত্তর সমাজ যথেষ্ট প্রতিরোধ দেখাতে পারে নি, যার ফলে প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষকে প্রাণ দিতে হয়৷ ১৯৩৩ সালের ১০ই মে বার্লিনে আজকের হুমবল্ট বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের সামনে বই পোড়ানোর মতো প্রতীকি ঘটনার মধ্য দিয়ে ইহুদি বিদ্বেষ মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল৷ বার্লিন সহ ২১টি শহরে এভাবে জার্মানির ‘জাতিসত্ত্বার শুদ্ধিকরণ যজ্ঞ'-এর মধ্য দিয়ে নাৎসিদের আসল রূপ স্পষ্ট হয়ে যায়৷ চরম জাতীয়তাবাদী ও ফ্যাসিবাদী মতাদর্শই পরে ভয়ংকর আকার ধারণ করে৷
১৯৩৮ সালের ৯ই নভেম্বর রাতে গোটা দেশে ইহুদিদের মালিকানায় থাকা প্রায় ৭,৫০০ দোকান, দপ্তর ইত্যাদি সম্পত্তিও ধ্বংস করা হয়েছিল৷ বাদ যায় নি সিনাগগ বা ইহুদি উপাসনাস্থলও৷ প্রায় ১,২০০ সিনাগগে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তছনছ করা হয়েছি ইহুদি কবরস্থানও৷ নাৎসি প্রচারণা যন্ত্র এই তাণ্ডবলীলাকে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত রোষের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তুলে ধরলেও এর পেছনে ছিল নাৎসি এসএস এবং এসএ বাহিনীর সুপরিকল্পিত সাংগঠনিক উদ্যোগ৷
ঐতিহাসিকদের মতে, এসময়ে প্রায় ১,৩০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল৷ তারপর শুরু হয়ে গিয়েছিল কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে বড় আকারের নিধনযজ্ঞ৷ কারখানায় বড় আকারে উৎপাদনের মতো নিপুণভাবে চলতো মানুষকে গ্যাস চেম্বারে পুরে দেওয়ার প্রক্রিয়া৷
চলতি বছরেও গোটা দেশ জুড়ে স্মরণ করা হচ্ছে জার্মানির ইতিহাসের কালো অধ্যায়ের এই দিনটিকে৷ ভবিষ্যতের সমাজে কোনো অবস্থায়ই যাতে নাৎসিদের সর্বনাশা মতাদর্শ বা অন্য যে কোনো সংকীর্ণতার বহিঃপ্রকাশ না ঘটে, তার প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে – এবিষয়ে স্পষ্ট ঐকমত্য রয়েছে৷ বুধবার সন্ধ্যায় স্পায়ার শহরে ধ্বংস হয়ে যাওয়া সিনাগগের জায়গায় নতুন সিনাগগের উদ্বোধন সেই সচেতনতা জিইয়ে রাখবে বলে আশা করছে জার্মান সমাজ৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ