1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘দেশ চালাতে না পারলে উপদেষ্টাদের স্টেপডাউন করা উচিত'

হারুন উর রশীদ স্বপন
২৩ অক্টোবর ২০২৪

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফসল বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। অথচ নানা দাবিতে নিয়মিত চলছে ‘ছাত্রদের' আন্দেলন।

https://p.dw.com/p/4m9Pb
রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে কথা বলছেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: PID Bangladesh

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর ফারুক মনে করেন, ‘‘উপদেষ্টারা (সরকার) যদি সরকার চালাতে না পারে, তাদের স্টেপ ডাউন করা উচিত।''

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, "যে উদ্দেশ্যে আমরা বিপ্লব করেছি, সরকার সেটা বাস্তবায়নে সাহস পাচ্ছে না । সেখানে আমরা চাপ দিচ্ছি। সরকার যদি সেটা না পারে, প্রয়োজনে সরকার পরিবর্তন হবে, উপদেষ্টাদের পরিবর্তন করা হবে।”

এখনো যত আন্দোলন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনএখন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছে। তারা তাকে পদত্যাগের জন্য বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে। রাষ্ট্রপতি শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র দেখেননি বলায় তার পদত্যাগের আন্দোলন শুরু হয় সোমবার থেকে। মঙ্গলবার শহীদ মিনারে সমাবেশ ও বঙ্গভবন ঘেরাও করা হয়। বঙ্গভবন ঘোরাও করতে গিয়ে মঙ্গলবার রাতে আন্দোলনকারীরা পুলিশের ব্যারিবেড ভেঙে বঙ্গভবনের ঢোকারও চেষ্টা করে। এতে সংঘর্ষে আন্দোলনকারী ও পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

‘আমরা এক দফা দাবি নিয়ে মাঠে আছি’

এর আগে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর তখনকার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের পদত্যাগের দাবিতে সুপ্রিম কোর্ট ঘেরাও করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা। তারা প্রধান বিচারপতিসহ বিচারপতিদের বাসভবন ঘেরাওয়েরও হুমকি দেয়। তাদের ঘোরাওয়ের মুখেই ১০ আগস্ট তিনি পদত্যাগে বাধ্য হন। পদত্যাগ করেন আপিল বিভাগের আরো পাঁচ বিচারপতি। ১৬ অক্টোবর তারা আবার সুপ্রিমকোর্ট ঘেরাও করে ‘ফ্যাসিবাদের সহযোগী' হিসেবে আখ্যায়িত করা বিচারপতিদের পদত্যাগ দাবি করলে ওই দিনই ১২ বিচারপতিকে চায়ের দাওয়াত দিয়ে বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ।

এর বাইরেও ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র'রা আরো আন্দোলনে যুক্ত হচ্ছে। গত ২০ আগস্ট তারা সচিবালয়ে ঢুকে শিক্ষা উপদেষ্টাকে ঘেরাও করে এইচএসসি পরীক্ষায় ছয় বিষয়ে পরীক্ষা না দিয়ে ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে ফল প্রকাশের দাবি আদায় করে নেয়। ফল প্রকাশের পর এখন যারা ফেল করেছেন, তারা অটোপাসের দাবিতে আন্দোলনে আছেন। বুধবার সচিবালয়ে ঢুকে তারা ভাংচুর ও ঘেরাও করলে পুলিশ ৫৪ জনকে আটক করে। এর আগে ১৩ অক্টোবর তারা ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করে বোর্ড অফিস ভাংচুর করে। তারা চেয়ারম্যানকে তার অফিসে সাত ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। এর প্রতিবাদে চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার পদত্যাগ করেছেন।

চলমান পরিস্থিতি নিয়ে ‘বৈষম্যবিরোধীরা' যা বলছেন

সর্বশেষ রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের আল্টিমেটাম নিয়ে প্রশ্ন করলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, "আমরা এক দফা দাবি নিয়ে মাঠে আছি। এই একদফা দাবি পুরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকবো। এই এক দফার মধ্যে আছে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন, ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। কিন্তু বাকি দুইটি দাবি আদায়ে আমরা মাঠে আছি।”

তাহলে সরকার কি তাদের দাবি পূরণ করছে না? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "সরকার যেটা করতে সাহস পাচ্ছে না সেটা করার জন্য আমরা সরকারকে চাপ দিচ্ছি। এজন্য আমরা রাজপথে আছি। এখন সরকার যদি না পারে, প্রয়োজনে এই সরকার চেঞ্জ করা হবে, উপদেষ্টাদের পরিবর্তন করা হবে। কিন্তু আমাদের এক দফা দাবি পুর্ণাঙ্গতা পেতে হবে।”

‘সরকারই যদি তাদের ( ছাত্র) মাঠে নামায়, তাহলে এটা দুঃখজনক’

আর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী সাংবাদিক আশরাফ কায়সার বলেন, "আপনি যে পরিস্থিতিটা এখন দেখছেন, সেটা হলো বিপ্লব বেহাত হয়ে গেলে যা হয়। তার খেসারত দিচ্ছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। তারা যাদের উপদেষ্টা করেছে, সংবিধানের যে পদ্ধতিতে তারা শপথ নিয়েছে, তার সবকিছুর খেসারত এখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা দিচ্ছে।  তাদের ৫ থেকে ৮ আগস্ট আরো সক্রিয় থাকা উচিত ছিল। যারা উপদেষ্টা হয়েছেন, তারা ছাত্রদের মনের ভাষা বুঝতে পারছে না। অথবা তারা বেষম্যবিরোধীরা যা চায়, তা করতে চাচ্ছে না। ফলে তাদের বার বার ঘেরাওয়ের দিকে যেতে হচ্ছে।” উপদেষ্টা পরিষদের ছাত্রদের মধ্য থেকেও দুইজন উপদেষ্টা আছেন।

তার কথা, "এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। তবে এই অস্থিরতা বেশি দিন থাকবে না।   তারা যে ভুলটি করেছে, তা ঠিক করতে উপদেষ্টা পরিষদে তাদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। অথবা রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে তাদের জাতীয় সরকারের দিকে যেতে হবে।”

‘আমাদের কাছে ভালো লাগছে না'

প্রশ্ন উঠেছে যে উপদেষ্টারা কি সক্ষমতার পরিচয় দিতে পারছেন না? নাকি তারা যেটা করতে চান, সেটা বাস্তবায়নের জন্য আগে বৈষম্য বিরোধীদের মাঠে নামাচ্ছেন? এর জবাবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর ফারুক বলেন, "তাদের উদ্দেশ্য কী তা আমি জানি না। কিন্তু যা হচ্ছে তাতে আমার ভালো লাগছে না।  তাদের ( বৈষম্যবিরোধী) সঙ্গে উপদেষ্টারা বৈঠক করতে পারেন।  সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার বৈঠক করতে পারেন। ভালোর জন্য বৈঠক করার মধ্যে খারাপ কিছু দেখিনা। কিন্তু তাদের দিয়ে আন্দোলন করিয়ে বা ভয়ভীতি দেখিয়ে কিছু করা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।”

তার কথা, "সরকারই যদি তাদের ( ছাত্র) মাঠে নামায়, তাহলে এটা হতাশার, দুঃখজনক। তারা যদি নিজেরা সরকার চালাতে না পারে তাদের স্টেপ ডাউন করা উচিত। তারা পাবলিক মানি ব্যবহার করে এখন লাক্সারিয়াস জীবন যাপন করছেন। সাধারণ মানুষকে তো স্বস্তি দিতে হবে। এখনো কেন এত আন্দোলন- এত ঘেরাও?”

" যারা এখন সরকারে আছেন তাদের যোগ্যতা  নিয়ে এরইমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। তাদের সমন্বয়হীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তারা কি বিপ্লবের চেতনা বুঝতে পারছেন? তারা কি ছাত্র-জনতার আন্দোলনের স্পিরিটের সাথে একমত? এই প্রশ্নও এখন উঠছে,” বলেন তিনি।

সুপ্রিম কোর্টের আরেকজন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন," অনেকে বলছেন এখানে  এখন একটা প্যারালাল গভর্নমেন্ট চলছে। ছাত্ররা এটা গভর্নমেন্ট আর সংবিধান অনুযায়ী যারা শপথ নিয়েছেন, তারা একটি গভর্নমেন্ট। এখন যারা সরকারে আছেন, তারা দেশ চালাবেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে বড় বড় ঘটনায় প্যারালাল গভর্নমেন্ট, ছাত্র সমন্বয়করা কথা বলছেন। তারা এমনভাবে কথা বলছেন যে,  যা দেশের অনেক চিন্তাশীল মানুষকে আহত করছে। তারা  ৭২-এর সংবিধানকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছেন, ৭ মার্চকে গুরুত্বহীন মনে করছেন। তাদের ভূমিকা নিয়ে তাই প্রশ্ন উঠছে।”

"তারা যখন যেটা চায়, সেটা নিয়ে মাঠে নামে আর সরকার তাদের দাবি পুরণ করে। তারা সুপ্রিম কোর্ট ঘেরাও করে বিচারকদের পদত্যাগে বাধ্য করে। এভাবে তো চলতে পারে না। এভাবে চললে সরকারের প্রতি আস্থাহীনতা তৈরি হয়। সরকার কারা চালায়, তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়,” বলে তিনি।