দায় স্বীকার ও দায় এড়ানোর চেষ্টা
৬ অক্টোবর ২০২০সোমবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, নোয়াখালীতে এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় সরকার দায় এড়াতে পারে না৷ মঙ্গলবার তিনি বলেছেন, ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত কাউকে রেহাই দেয়া হবে না৷ তবে তিনি সবার প্রতি ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘‘প্রতিবাদ করার দরকার নেই৷ সরকারই ব্যবস্থা নিচ্ছে৷’’
সিলেট এমসি কলেজ হোস্টেল থেকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ পর্যন্ত ধর্ষণ ও নারীর যৌন নিপীড়নের প্রায় সব ঘটনাতেই প্রভাবশালীদের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠে আসছে৷ প্রকাশ পাচ্ছে শাসক দলের নেতা-কর্মীদের নামও৷ তাদের বহিস্কার করা হচ্ছে, আবার অনুপ্রবেশকারীও বলা হচ্ছে৷ সরকারের দায় আছে বললেও দলের দায়ের বিষয়ে কিছু বলেননি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক৷
এ প্রসঙ্গে নারী নেত্রী খুশি কবির বলেন, ‘‘এতদিন ওবায়দুল কাদের সাহেব কোনো কথা বলেননি৷ কিন্তু এবার যখন তার এলাকা নোয়াখালীতে এক নারীকে বর্বরোচিত নির্যাতনের ঘটনা ঘটলো তখন তিনি কথা বলছেন৷ আসলে তিনি তার এলাকার লোকজনকে শান্ত করার কৌশল নিয়েছেন৷ এর আগে দেশে কি এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি? তখন তো তিনি কথা বলেননি৷ আসলে এটা দায় এড়ানোর একটি কৌশল৷’’
‘‘তারা বলেন আগের সরকারের আমলেও এরকম হয়েছে৷ আমরা তো বলিনি যে হয়নি৷ তাই বলে এই সরকারের আমলে ওই অপরাধগুলো বৈধ হয়ে গেল?,’’ প্রশ্ন এই নারী নেত্রীর৷
বিশ্লেষকরা বলছেন, অপরাধীরা এক দিনে হয়নি৷ তারা দলীয় ক্ষমতার জোরে এবং পুলিশের সহযোগিতায় তৈরি হয়েছে৷ পুলিশ নির্যাতিতদের পক্ষে কাজ করে না, কাজ করে ক্ষমতাবনদের পক্ষে৷ ফলে অনেক নির্যাতন, ধর্ষণের ঘটনা জানাই যায় না৷বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমের ভূমিকার কারণে যেগুলো জানা যায়, সেগুলো নিয়েই একটু তৎপরতা দেখা যায় বলে তারা মনে করেন৷
মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপব ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘কোভিড মহামারির সঙ্গে বাংলাদেশে ধর্ষণের মহামারি শুরু হয়ে গেছে৷ আর এই মহামারি ঠেকাতে সরকারের কোনো অগ্রাধিকারমূলক ব্যবস্থা আমরা দেখছি না৷ এখানে প্রধানমন্ত্রী না বললে কিছু হয় না৷ তাই ওবায়দুল কাদের সাহেব যা-ই বলুন না কেন আমরা তার ওপর আস্থা রাখতে পারছি না৷’’
ড. মিজান বলেন, ‘‘এত কথা বলে লাভ কী? রাজনৈতিক দলগুলো কি পরিশুদ্ধ হওয়াার কোনো উদ্যোগ নিয়েছে?’’
মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান আরো বলেন,যারা বিবৃতি দিয়ে বলেন ধর্ষক বা অপরাধীরা অনুপ্রবেশকারী, তারা কিন্তু শিকার করে নিচ্ছেন যে রাজনৈতিক পরিচয়েই তারা অপরাধ করেছেন৷ এখন তার দায় অন্যদলের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছেন৷
তাই তিনি মনে করেন, ‘‘এখন যে নতুন ধরনের বিবৃতি দিয়ে শাস্তির কথা বলা হচ্ছে, সরকারে দায়ের কথা বলা হচ্ছে, এটাও দায় এড়ানোর কৌশল৷ আসলে কাজে না দেখানো পর্যন্ত তাদের কথায় আস্থা রাখা যায় না৷’’