জার্মান প্রেসিডেন্টকে নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত
৩ জানুয়ারি ২০১২পরিচিত এক ব্যবসায়ী বন্ধুর স্ত্রীর কাছ থেকে পাঁচ লাখ ইউরো ব্যক্তিগত ঋণ নিয়ে বাড়ি কিনেছিলেন বর্তমান জার্মান প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ, চার পার্সেন্ট সুদে, যা কিনা ব্যাংকের সুদের চেয়ে কিছুটা কম৷ ভুল্ফ তখন লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী৷ পরে সে'কথা রাজ্য বিধানসভায় উঠলে ভুল্ফ জানান, ঋণদাত্রীর স্বামী ব্যবসায়ী এগন গের্কেন্স'এর সঙ্গে তাঁর কোনো ব্যবসায়িক সম্পর্ক নেই৷ পরে দেখা যায়, গের্কেন্স স্বয়ং ঐ ঋণের কাগজপত্র লেখালিখির ব্যবস্থা করেছিলেন৷
ভুল্ফ'এর বাড়ি কেনার ঋণ নিয়ে খবর ফলাও হবার পর আরো জানা যায় যে, ভুল্ফ ঐ ব্যক্তিগত ঋণ ব্যাংকের ঋণে পরিণত করেছেন বটে, কিন্তু যেদিন সে'কথা ঘোষণা করেছেন, ঋণের কাগজপত্র জমা দিয়েছেন তার ক'দিন পরে৷ তাছাড়া ঐ ব্যাংকটির সঙ্গে পোর্শে মোটর কোম্পানির সম্পর্ক আছে, যে স্পোর্টস কার নির্মাতা কোম্পানির আর্থিক সংকট কাটাতে ভুল্ফ সাহায্য করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়৷
এবার কেলেঙ্কারির তৃতীয় পর্যায়: জার্মানির সর্বাধিক প্রচারিত ট্যাবলয়েড পত্রিকা ‘বিল্ড' যখন গত ডিসেম্বরে ভু্ল্ফ'এর ঐ গৃহঋণ নিয়ে খোঁজখবর করছে, তখন ভুল্ফ নাকি বিল্ড পত্রিকার মুখ্য সম্পাদকের মোবাইলে টেলিফোন করে মেসেজ রেখে হুমকি দেন, যে বিল্ড ভুল্ফএর ঋণ নিয়ে চর্চ্চা বন্ধ না করলে ভু্ল্ফ পত্রিকাটির সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করবেন, এমনকি যে সব সাংবাদিকরা ভুল্ফ'এর ঋণ নিয়ে গবেষণায় লিপ্ত, তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করা হতে পারে৷ যেদিন ভুল্ফ এই মেসেজ রাখেন, তার পরদিনই বিল্ড'এ ভুল্ফ'এর ঋণের খবর ছাপা হয়৷ এর দুদিন পর অবশ্য মুখ্য সম্পাদক ডিকমানকে ফোন করে ভুল্ফ তাঁর মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন৷ গত ২২শে ডিসেম্বর এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট ভুল্ফ স্বীকার করেছিলেন যে, ঋণের ব্যাপারে তথ্য তাঁর আগেই জানানো উচিত ছিল৷
বিল্ড'এর মালিক হল আক্সেল স্প্রিঙ্গার প্রকাশনী৷ ভুল্ফ নাকি তার মুখ্য অধিকর্তা মাথিয়াস ডোপনার'কেও টেলিফোন করেছিলেন, কিন্তু ডোপনার তাঁকে সরাসরি বলেন, পত্রিকার পূর্ণ সম্পাদকীয় স্বাধীনতা রয়েছে৷
বস্তুত ব্যাপারটা এখন রাজনীতিক-ব্যবসায়ী-ব্যাংকগুলির মধ্যে অশুভ যোগাযোগের পর্যায় ছাড়িয়ে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপের প্রচেষ্টা বলে বিবেচিত ও সমালোচিত হচ্ছে, বিশেষ করে জার্মান মিডিয়ার তরফ থেকে৷
প্রতিবেদন: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক