1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চালকদের নিয়ন্ত্রণই বড় চ্যালেঞ্জ

৫ এপ্রিল ২০১৮

রাজধানীর রাস্তায় যানবাহন অনেকটাই বেপরোয়া, নিয়ন্ত্রণহীন৷ চালকদের আচরণ কেড়ে নিচ্ছে মানুষের প্রাণ, পঙ্গু হয়ে যাচ্ছেন কেউ কেউ৷ মঙ্গলবারও রাজীব হোসেনকে হারাতে হয়েছে ডান হাত৷ তাই গণপরিবহণে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দাবি সবার৷

https://p.dw.com/p/2vY0n
Bangladesch Rajib Ahmed
ছবি: bdnews24.com

অল্প বয়সে বাবা-মাকে হারানো তিতুমীর কলেজের স্নাতকের ছাত্র রাজীব হোসেনকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিয়েছে বেপরোয়া দুই বাসচালক৷ ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রাজীবের চিকিৎসার জন্য সাত সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে৷ বোর্ডের প্রধান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. শামসুজ্জামান শাহীন৷

তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আজ সকালেই মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা রাজীবের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে পর্যালোচনায় বসেছিলেন৷ আমরা তার সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট দিয়েছিলাম৷ তাতে দেখা গেছে, তার মাথায় আঘাত রয়েছে৷ দুর্ঘটনার পর তার মাথার খুলিতে ফাটল ধরেছে৷ চোখের পেছনে মস্তিষ্কে পানি ও রক্ত জমেছে৷ এ জন্য ওষুধ দেওয়া হয়েছে৷ যদি তাতে না সারে তাহলে অপারেশন করতে হবে৷ আপাতত তার অবস্থা স্থিতিশীল৷ শুধু ড্রেসিংয়ের জন্য তাকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নেওয়া হচ্ছে৷ তাকে উন্নতমানের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়েছে৷ রাজীবের চিকিৎসার সমস্ত ব্যয় বহন করছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল৷ এছাড়া বাড়তি যেসব খরচ হচ্ছে, তা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক তাঁর নিজস্ব তহবিল থেকে দিচ্ছেন৷ রাজীবের পরিবারকে কোনো অর্থই খরচ করতে হচ্ছে না৷''

মশিউর রহমান

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজীবের চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম৷ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন রাজীবকে দেখার পর মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, রাজীব সুস্থ্য হওয়ার পর মেডিকেল বোর্ড যদি মনে করে তাহলে তার হাত পুনঃস্থাপন করা যাবে৷ এর জন্য সরকারের পক্ষ থেকেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ রাজীবের চিকিৎসার যাবতীয় খরচ বহন করবে সরকার৷ এমনকি রাজীব সুস্থ্য হলে তাকে সরকারি চাকরি দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন মন্ত্রী৷ তিনি বলেন, রাজীব মা-বাবা হারানো এতিম৷ এ কারণে সরকার তার যাবতীয় চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে৷ এছাড়া তার আরও দুই ভাইয়ের ভবিষ্যতের দিকেও খেয়াল রাখবে সরকার৷

রাজীবের খালা জাহানারা বেগম অবশ্য বৃহস্পতিবার হাসপাতালে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘গতকাল রাজীব পানি ও জুস খেয়েছিল৷ কিন্তু আজ কথাও বলছে না, কিছু খাচ্ছেও না৷ আমি অনেকবার কথা বলার চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারিনি৷''

এদিকে রাজীবের ডান হাত হারানোর ঘটনায় আটক দুই গাড়ি চালকের দু'দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত৷ গ্রেপ্তার হওয়া বাস চালকরা হলো বিআরটিসি বাসের চালক ওয়াহিদ (৩৫) ও স্বজন বাসের চালক খোরশেদ (৫০)৷

মোসলেহ উদ্দীন

রাজীবের এই ঘটনার পর দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় উঠে৷ বলা বাহুল্য, যাত্রী-পথচারীরা এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চান৷ এরপরও ‘হুশ' ফেরেনি ঢাকার সড়কে চলা বাসের চালকদের৷ বৃহস্পতিবার ফার্মগেট সিগন্যালের পাশেই দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল বেসরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা খুরশিদ আলমের সঙ্গে৷ তিনি বলেন, ‘‘রাস্তায় বের হয়ে নিরাপদে বাসায় ফেরাটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ৷'' এ সময় পাশ দিয়ে একটি বাস আরেকটি বাসকে কীভাবে ধাক্কা দিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে সেই দৃশ্য দেখিয়ে খুরশিদ বলেন, ‘‘প্রতি মুহূর্তেই এই ঝুঁকি নিয়ে আমাদের চলতে হচ্ছে৷ আমরা এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চাই৷ পুলিশ তো চাইলে সব পারে৷ তাহলে বাস চালকদের কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না?''

আসলেই কি চাইলেই পুলিশ পারে এই বাস চালকদের নিয়ন্ত্রণ করতে? ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি৷ পুলিশ এখন দু'ধরনের কাজ করছে৷ একটা এনফোর্সমেন্ট, আরেকটা হলো সচেতনতা বৃদ্ধি করা৷ প্রতিদিন শুধু বাসের বিরুদ্ধেই চার শতাধিক মামলা হচ্ছে৷ লাখ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হচ্ছে৷ কিন্তু তারপরও তাদের কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না৷''

কেন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘দু-পাঁচশ' টাকার একটা মামলা দিলে তারা কিছুই মনে করে না৷ এমনকি বাস ডাম্পিংয়ে পাঠালেও মালিকরা জরিমানা দিয়ে নিয়ে আসেন৷ ফলে বিষয়গুলো আর চালকদের গায়ে লাগছে না৷ জেল-জরিমানা করেও দেখেছি, কাজ হয় না৷ আসলে ওদের মধ্যে সচেতনতা দরকার৷ এই সচেতনতার লক্ষ্যে আমরা প্রতিটি স্কুলে ডকুমেন্টারি দেখাচ্ছি৷ পাশাপাশি বাসস্ট্যান্ডসহ জনবহুল জায়গাগুলোতেও বড় পর্যায় এ সব ডকুমেন্টারি দেখানো হচ্ছে৷ এতে যে কিছু কাজ হচ্ছে না, তা নয়৷ তবে সবার সচেতনতা দরকার৷''

ড. শামসুজ্জামান শাহীন

ফার্মগেটের পাশেই চায়ের দোকান রফিকুল ইসলামের৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানান, রাজীবের মতো দৃশ্য তারা প্রতিদিনই দেখছেন৷ কে কার আগে যাবে, কীভাবে যাবে – এই প্রবণতা চলছেই৷ পথচারীরা যেখানে দাঁড়িয়ে থাকেন তার মধ্যেই ঢুকে পড়ে বাসগুলো৷ চা বিক্রি করতে গিয়ে এমন দৃশ্য কত যে দেখতে হয় তার ইয়ত্তা নেই৷ রফিকুলের মতে, ঢাকার রাস্তায় মেয়াদউত্তীর্ণ লক্কর-ঝক্কর বাসগুলোর চালকরাই এই ধরনের দূর্ঘটনা বেশি ঘটাচ্ছে৷ তাই এগুলো দ্রুত তুলে দেয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি৷

ঢাকার রাস্তায় কীভাবে এ ধরনের বাস চলছে? বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) করছেটা কী? এর জবাবে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মশিউর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা যে কিছু করছি না, এটা ঠিক নয়৷ একটা দুর্ঘটনা তো দুর্ঘটনাই৷ আমরা প্রতিনিয়ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি৷ চালক-মালিকদের নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছি৷ আগামী বৃহস্পতিবার গোপালগঞ্জে এই প্রচারণা শুরু হবে৷ আমরা আমাদের কার্যক্রম আরো বাড়িয়ে দিয়েছি৷ পরবর্তীতে বিআরটিএ আরো কঠোর ভূমিকা রাখবে৷''

এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য জানতে চাই৷ তাই লিখুন নীচের ঘরে৷

ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি সমীর কুমার দে৷
সমীর কুমার দে ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য