প্রাণিজগতের ক্ষতি করছে জলবায়ু পরিবর্তন
১৯ জুলাই ২০১৭ইয়োহানেস লাং আইসল্যান্ডের এক বৃদ্ধের কাছে মাদি শিয়ালের ডাক নকল করতে শিখেছিলেন৷ সেই ডাক শুনলে সুমেরু অঞ্চলের শিয়ালশাবকরা তাদের বাসা থেকে বেরিয়ে আসে, অবশ্যই এখানে তাদের অস্তিত্ব থাকলে৷
বেশ বড় বাসা বলে মনে হচ্ছে৷ আর্কটিক শিয়াল যে এখানে বসবাস করে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ চারিদিকে হাড়গোড় আর পালক ছড়িয়ে রয়েছে৷ একটা বড় শিয়াল ধরতে পারলে তা হবে লটারিতে জ্যাকপট জেতার মতো ঘটনা৷ এখানে যে কিছু শিয়াল রয়েছে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ শাবকের কণ্ঠ শোনা গেছে৷ এর অর্থ, তাদের বাবা-মাও রয়েছে৷ মায়ের মতো ডাক শুনে প্রথমে তারা জবাব দিল৷ তারপর সত্যি কয়েকটা শাবক বাসা থেকে বেরিয়ে এলো৷ এবার এক বড় আর্কটিক শিয়াল ধরে তার শরীরে ট্রান্সমিটার বসানো হবে বড় চ্যালেঞ্জ৷
গ্রিনল্যান্ডের পূর্ব উপকূলে মানবহীন ট্রাইল দ্বীপে চলছে এই কর্মকাণ্ড৷ সুমেরু অঞ্চলের সংক্ষিপ্ত গ্রীষ্মে জার্মান ও ফরাসি বিজ্ঞানীরা সেখানকার প্রাণিজগতের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেন৷ প্রথমেই তাঁদের আত্মরক্ষার ব্যবস্থা করতে হয়৷ তাঁবুর ক্যাম্পের বাইরে বৈদ্যুতিক বেড়া ও আগ্নেয়াস্ত্র প্রস্তুত রাখতে হয়৷ তা না হলেই ক্ষুধার্থ পোলার ভালুক হামলা চালাতে পারে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রে ভাসমান বরফ গলতে থাকায় সেখান থেকে তাদের পাকা জমিতে চলে আসতে হয়৷
কিন্তু গবেষকদের মূল আগ্রহ ছোট লেমিং-কে ঘিরে৷ প্রায় ৩০ বছর আগে বেনোয়া সিটলার এই গবেষণা প্রকল্প শুরু করেছিলেন৷ তিনি লক্ষ্য করেছিলেন, বছরে বছরে লেমিং-দের সংখ্যা কমে চলেছে৷ ফ্রাইবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেনোয়া সিটলার বলেন, ‘‘সাধারণত বছরে নয় মাস বরফের চাদর সুরক্ষা দিত৷ এখন প্রথম বরফ পড়তে অনেক দেরি হয়৷ বরফ তাড়াতাড়ি গলেও যায়৷ অর্থাৎ বরফের চাদরের নীচে নিরাপদে বংশবৃদ্ধির সময় প্রায় এক মাস কমে গেছে৷ তাই আগের তুলনায় লেমিং-দের অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে গেছে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই বরফ কমে চলেছে৷''
এর নাটকীয় প্রভাব দেখা যাচ্ছে৷ কারণ গ্রিনল্যান্ডের ইকোলজিতে লেমিং-দের কেন্দ্রীয় ভূমিকা রয়েছে৷ কারণ তারা শিয়াল বা আর্কটিক পেঁচার মূল খাদ্য৷ ফলে লেমিং কমে যাওয়ায় তাদের খাদ্যে টান পড়ছে৷ গবেষকরা তাই প্রতি বছর লেমিং ও তাগের বাসার গণনা করেন৷ বেনোয়া এক শীতকালীন বাসার হদিশ পেয়ে খুশি৷
আগে যেখানে প্রায় ৪,০০০ বাসার সন্ধান পাওয়া যেত, আজ সেখানে ৪০০টি পেলেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়৷ প্রতি গ্রীষ্মে বেনোয়া সিটলার তুন্দ্রার মধ্য দিয়ে প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার পাড়ি দেন এবং চারিদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রমাণ সংগ্রহ করেন৷
ইয়োহানেস লাং কামানে বারুদ ভরছেন৷ স্কুয়া পাখির দিকে লক্ষ্য করে কামান দাগবেন তিনি৷ শুধু প্রজননের জন্য তারা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে প্রতি বছর এখানে উড়ে আসে৷ একমাত্র বাসার মধ্যে তাদের ধরা যায়৷ তারপর তারা হামলা চালাতে কাছে চলে আসে৷ প্রশ্ন হলো, লেমিং-এর সংখ্যা কমে যাওয়ায় এই পাখিরাই বা কী খায়? সেটা জানতে তাদের শরীরেও ট্রান্সমিটার বসানো হবে৷
এই কামানের জাল পাখিদের ক্ষতি করে না৷ কিন্তু খুব দ্রুত কাজ সারতে হয়৷ পাখিটির মাপ নেওয়া হচ্ছে৷ তার পায়ে এখনো গত বছরের ডেটা লগার লাগানো রয়েছে৷ গবেষকরা সেটি সংগ্রহ করে তাদের রুট সম্পর্কে আরো জানতে চান৷ ইয়োহানেস লাং বলেন, ‘‘এই অংশ অত্যন্ত মূল্যবান, এখানে তথ্য ভরা আছে৷ এক বছর ধরে এটি লাগানো ছিল৷ এই দলের বেশিরভাগ পাখি শীতের সময়ে নামিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা অথবা ভারত মহাসাগরের মাদাগাস্কার দ্বীপে হাইবারনেট করে৷ লগ দেখে আমরা সেটা জানতে পারি৷ কিছু পাখি আবার ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ, অর্থাৎ দক্ষিণ অ্যামেরিকায় চলে যায়৷ আমরা জানতে চাই, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাদের প্রতিক্রিয়া কী হবে? কারণ পাখিরা হাইবারনেশনের জন্য নির্দিষ্ট স্থান বেছে নেয়৷ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাদের শীতকালীন বাসস্থান ধ্বংস হয়ে গেলে তাদের সমস্যা হবে৷''
পয়ে নতুন ডেটা লগার লাগানোর পর পাখিটি উড়ে যেতে পারে৷ গবেষকরা অনেক কিছুই জানতে পারেননি৷ তবে এটা স্পষ্ট, যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবকিছু ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে৷ এমনকি স্যান্ডারলিং-এর মতো ছোট পাখিরাও চাপের মুখে পড়ছে৷ তারা এখানে মাটিতে সবার অলক্ষ্যে বংশবৃদ্ধি করতো৷ কারণ এখন শিয়াল ও সিগাল পাখি লেমিং খেতে না পেয়ে এখন স্যান্ডারলিং শিশু শিকার করছে৷ এ এমনই এক দুষ্টচক্র৷
একহার্ট ব্রাউন/এসবি