কুমেরুর বরফ গলছে
১৮ জুন ২০১৩আইস শেল্ফ বা ‘বরফের তাক' সৃষ্টি হয় যখন কোনো হিমবাহ কি অন্য ধরনের বরফের প্রবাহ উপকূলে পৌঁছে সাগরের পানির উপর এসে পড়ে৷ আইস শেল্ফ শুধুমাত্র দক্ষিণ মেরু, গ্রিনল্যান্ড আর ক্যানাডায় পাওয়া যায়৷ এ ধরনের আইস শেল্ফ একশো থেকে এক হাজার মিটার ঘনত্বের হতে পারে৷
বিশ্বের উষ্ণায়নের ফলে সাগরের পানির তাপমাত্রাও বেড়েছে এবং তার ফলে কুমেরুর আইস শেল্ফগুলি তলা থেকে গলে যাচ্ছে, ‘সায়েন্স' জার্নালে প্রকাশিত সমীক্ষাটিতে বলা হয়েছে৷ ‘‘তলা থেকে'' – এটাই হল লক্ষণীয়৷ আইস শেল্ফের তলা থেকেও যে বরফ গলে, তা বিজ্ঞানীদের অনেক দিন ধরেই জানা৷ পরিভাষায় একে বলা হয় ‘বেসাল মেল্ট', অর্থাৎ ‘ভিত থেকে গলা'৷ তবে বিজ্ঞানীরা ধরে নিচ্ছিলেন যে, আইস শেল্ফ থেকে আইসবার্গ বা হিমশৈল ভেঙে যাওয়ার ফলেই আইস শেল্ফের তলা থেকেও বরফ গলে৷
গোড়ায় নয়, তলায় গলদ
এবার পুরো ব্যাপারটি ব্যাপকভাবে অনুসন্ধান করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, আইস শেল্ফের যতো বরফ গলছে, তার বৃহত্তর অংশটি আসছে শেল্ফের তলা থেকে৷ সেখানেই বেশি করে বরফ গলছে৷ পরিসংখ্যান বলছে: ২০০৩ থেকে ২০০৮ সাল অবধি কুমেরুর আইস শেল্ফগুলি থেকে বছরে ১,৩২৫ ট্রিলিয়ন কিলোগ্রাম বরফ খোয়া গেছে বেসাল মেল্ট বা তলা থেকে বরফ গলার কারণে৷ সে তুলনায় আইসবার্গ বা হিমশৈল হয়ে প্রতিবছর খোয়া গেছে ১,০০৮ ট্রিলিয়ন কিলোগ্রাম বরফ৷ যা স্পষ্ট প্রমাণ করছে যে, আইস শেল্ফের তলা থেকেই বেশি বরফ গলছে৷
তবে প্রকৃতিতে কোনো প্রক্রিয়া সরল নয়, সহজ নয়৷ যেমন কুমেরুর সামগ্রিক আইস শেল্ফ এলাকার দুই তৃতীয়াংশ যে তিনটি সুবৃহৎ আইস শেল্ফকে নিয়ে, তাদের সব ক'টি কিন্তু মোট বেসাল মেল্টের মাত্র ১৫ শতাংশের জন্য দায়ী৷ আবার যে আইস শেল্ফগুলিতে বেশি বেসাল মেল্ট ঘটছে, সেগুলোও গোটা দক্ষিণ মেরুতে ছড়ানো৷
ধাঁধা ওখানেই শেষ নয়৷ কুমেরুর উপরিভাগের আস্তরণ যে গতিতে বরফ হারাচ্ছে, আইস শেল্ফগুলি থেকে বরফ গলছে তার দ্বিগুণ গতিতে৷ অবশ্য এ ধাঁধাঁর উত্তরটা সহজ: আইস শেল্ফের উপর ও নীচ, দু'দিক থেকেই বরফ গলার সম্ভাবনা রয়েছে৷ আবার আইস শেল্ফের বরফ গলার মানেই যে শেল্ফটা ছোট হয়ে আসছে, এমন নয়৷ কেননা কুমেরুর মূল অংশ থেকে হিমরাশি এসে সেই ঘাটতি আবার পূরণ করে দিতে পারে৷
জরিপে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এ সব কিছু বিবেচনা করলেও বলতে হয় যে, কুমেরুর কয়েকটি অংশে আইস শেল্ফগুলি বড় তাড়াতাড়ি গলছে৷ এবং তার ফলে কুমেরুর হিমবাহগুলি, এমনকি গোটা মহাদেশটার ধারাপ্রকৃতি বদলে যাচ্ছে৷ মুশকিল শুধু এই যে, পৃথিবীর মোট পানযোগ্য পানির ৬০ শতাংশই রক্ষিত আছে কুমেরুর ঐ বরফের আস্তরণের ভিতরে৷
এসি/ডিজি (এএফপি)