গ্রিনল্যান্ডে ভাঙা বরফের চাঁই নিয়ে আশংকা
১৬ আগস্ট ২০১০ভেঙে পড়া এই বিশাল বরফ খন্ডটি ক্রমশ এগিয়ে আসছে ক্যানাডার উপকূলের দিকে৷ এই ভেসে চলা বরফ দ্বীপের ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখছেন বিজ্ঞানীরা৷ তবে তারা আশ্বস্ত করছেন যে এখনই আতংকিত হয়ে পড়ার কোন কারণ নেই৷
বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে প্রতি বছরই ভাঙছে মেরু অঞ্চলে জমে থাকা বরফের পাহাড়৷ এসব বরফের পাহাড়ের আকৃতি কয়েক মাইল থেকে শুরু করে কয়েকশ মাইল পর্যন্ত৷ উত্তর মেরুর কাছের দেশ গ্রিনল্যান্ড নামে গ্রিন হলেও তা বরফের সাদা চাদরে ঢাকা৷ উত্তর মেরুর দিকে দেশটির ওপরের অংশে দুটি বিশাল আকারের বরফের পাহাড় জমে আছে৷ তার একটির নাম পিটারম্যান গ্ল্যাসিয়ার৷ সাগরের পানির ওপর ভেসে থাকা এই গ্ল্যাসিয়ার বা বরফের পাহাড়টি হচ্ছে ৭০ কিলোমিটার লম্বা৷ কিছুদিন আগে তারই একটি বড় অংশ ভেঙে আলাদা হয়ে গিয়েছে সমুদ্রে৷
এই মাসের শুরুর দিকে নাসার উপগ্রহ থেকে পাঠানো ছবিতে ঘটনাটি লক্ষ্য করতে পেরেছিলেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা৷ তখনই তারা জানিয়ে দেন যে গ্রিনল্যান্ডের উত্তরে একটি নতুন বরফ খন্ড দেখা যাচ্ছে যেটি নিউইয়র্ক শহরের ম্যানহাটানের চেয়ে নাকি চারগুন বড়৷ যুক্তরাষ্ট্রের সবগুলো পানির কল যদি টানা ১২০ দিন খুলে রাখা হয় তাহলে যে পরিমাণ পানি পড়বে সে পরিমাণ পানি জমে আছে এই বরফ খন্ডটিতে৷ ক্যানাডার আইস সার্ভিসের বিজ্ঞানীরাও এই বরফ খন্ড ভেঙে পড়ার ওপর নজর রাখছিলেন৷ সেখানকার কর্মকর্তা ট্রুডি ওলেনবেন এই বরফ খন্ডটির আকার সম্পর্কে বলেন, ‘‘আপনি যদি এর মাঝে দাঁড়িয়ে থাকেন, তাহলে বুঝতে পারবেন না যে এটি একটি ভাসমান বরফের চাঁই৷ অথবা যদি জাহাজে থাকেন, তাহলে মনে হবে সমুদ্রের মধ্য থেকে একটি বিশাল বরফের দেওয়াল ভেসে উঠেছে৷''
বিশাল আকারের এই বরফের খন্ডটি ভেঙে পড়েছে গ্রিনল্যান্ডের উত্তরের নারিস স্ট্রেইট এলাকায়, যেটি উত্তর মেরু থেকে এক হাজার কিলোমিটার দক্ষিণে এবং গ্রিনল্যান্ডের উত্তর পশ্চিম ও ক্যানাডার উত্তর পূর্বাঞ্চলের এলেসমেয়ার দ্বীপের মিলনস্থলে৷ বরফের দ্বীপটি এখন আর্কটিক সমুদ্রে স্রোতে ভেসে চলেছে এবং ক্রমশই এগিয়ে আসছে ক্যনাডার উপকূলের দিকে৷ বিজ্ঞানীরা দেখছেন, বরফ খন্ডটির গতিপথ এখন ক্যানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ড এলাকার ল্যাব্র্যাডর উপকূলের দিকে৷ বিজ্ঞানী ট্রুডি ওলেনবেন জানালেন যে এতটুকু পথ পাড়ি দিতে এক থেকে দুই বছর লেগে যেতে পারে বরফ খন্ডটির৷ তবে বিশেষ করে বিপদে পড়তে পারে সমুদ্রে চলাচলকারী জাহাজগুলো৷ ট্রুডি ওলেনবেন'এর কথায়, ‘‘এর আগে ২০০৮ সালে এর চেয়ে ছোট একটি বরফ খন্ড ভেঙে গিয়েছিল৷ জুলাইয়ের মধ্যে তা ভাঙতে শুরু করে৷ ল্যাব্রাডর উপকূলের উত্তর বিন্দু ব্যাসিন দ্বীপ পর্যন্ত পৌঁছতে এর সময় লেগেছিল প্রায় এক বছর৷ তার আগেই এটা ভেঙে ছোট ছোট টুকরো হয়ে যায়৷ আমার মনে হয় এটাও ভেঙে যাবে, তবে সমস্যা হলো এই ভাঙা টুকরোগুলো জাহাজ চলাচলের সমুদ্র এলাকাতে ঢুকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷ এছাড়া তেল উত্তোলনের এলাকাতেও চলে আসতে পারে৷ তখন এগুলোকে ভাঙতে যেসব পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে তাতে অনেক ধরণের জটিলতা রয়েছে৷ আমি নিশ্চিত যে এই বরফ খন্ড গলতে শুরু করবে৷ তবে আমাদের দেখা অন্য যে কোনগুলোর চেয়ে এটি অনেক বড়৷''
সমুদ্রপৃষ্ঠ যেভাবে দিন দিন উষ্ণ হচ্ছে, তার কারণেই কি এই বরফের ভেঙে পড়া? বিজ্ঞানীরা অবশ্য এখনই এই ঘটনার জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করতে চাচ্ছেন না৷ কারণ সমুদ্র পৃষ্ঠ উষ্ণায়ন ছাড়াও আরও অনেক কারণ তারা সম্ভাব্য হিসেবে তালিকায় রাখছেন৷ যেমনটি বললেন ট্রুডি ওলেনবেন, ‘‘এখানে অনেক বিষয়ই জড়িত৷ এর সঙ্গে কোন একটি বিষয়কে সরাসরি সংযুক্ত করাটা কঠিন৷ জমে থাকা বরফের পাহাড়ের নীচে সমুদ্রতলের স্রোতের গতি, মহাদেশের তাপমাত্রা, গ্রিনল্যান্ডের দিকে বাতাসের গতি অনেক কিছুই রয়েছে৷ আমি সুনির্দিষ্ট কিছুকে দায়ী করতে চাচ্ছি না৷''
তবে বিজ্ঞানীরা কোন কিছুকে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে না চাইলেও প্রশ্ন কিন্তু উঠছেই৷ মেরু অঞ্চলে সমুদ্রের ওপর ভেসে থাকা এসব বরফের পাহাড়গুলো ৫৫ মিটার পর্যন্ত পুরু৷ কিন্তু এই পুরু বরফ কি এখন পাতলা হয়ে আসছে? এই প্রশ্নের উত্তর এখন না দিলেও পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা৷
প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ