গ্যাস পাইপলাইন নিয়ে জার্মানি ও অ্যামেরিকার সমঝোতার ইঙ্গিত
২১ জুলাই ২০২১একদিকে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের বেড়ে চলা সংঘাত, অন্যদিকে সে দেশ থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে সরাসরি গ্যাস আমদানির তোড়জোড় – এমন বৈপরিত্য সামলাতে জার্মানি হিমসিম খাচ্ছে৷ বিশেষ করে ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকে সে দেশের মধ্য দিয়ে পশ্চিম ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের কতটা লাভ হবে, সেই বিষয়টিও ‘নর্ড স্ট্রিম ২’ নামের প্রকল্পের উপর কালো ছায়া ফেলেছে৷ সে ক্ষেত্রে ইউক্রেন আর ‘ট্রানজিট ফি’ বাবদ কোনো অর্থ পাবে না৷
ডনাল্ড ট্রাম্পের আমল থেকেই দলমতনির্বিশেষে অ্যামেরিকার রাজনীতিকরা এই প্রকল্প বর্জন করার জন্য জার্মানির উপর চাপ দিয়ে আসছিল৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানি এমনকি খোদ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের দলের মধ্যেও এই প্রকল্পের বিরোধীর সংখ্যা কম নয়৷ ম্যার্কেল নিজে এই প্রকল্পকে বাণিজ্যিক হিসেবে গণ্য করে প্রকল্পের কাজ শেষ করার উপর জোর দিয়ে আসছেন৷ এবার অ্যামেরিকার সঙ্গে রফার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে ওঠায় বাল্টিক সাগরের নীচ দিয়ে গ্যাস পাইপলাইনের চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজ শেষ হতে পারে৷ উল্লেখ্য, প্রায় ১,১০০ কোটি ডলার মূল্যের এই পাইপলাইনের প্রায় ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে৷
জার্মান চ্যান্সেলর হিসেবে শেষ ওয়াশিংটন সফরে ম্যার্কেল মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বিতর্কিত এই প্রকল্প নিয়ে একটা রফার চেষ্টা শুরু করেছিলেন৷ এবার সেই বোঝাপড়া সম্পর্কে আরও খবর জানা যাচ্ছে৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র রয়টার্স, এপি ইত্যাদি সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছে, যে রাশিয়া যদি ইউক্রেন বা পূর্ব ইউরোপের কোনো দেশের ক্ষতি করার চেষ্টা করে, সে ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি মস্কোর বিরুদ্ধে যৌথ পদক্ষেপ নিতে পারবে৷ বাইডেন প্রশাসন প্রয়োজনে সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা চাপানোর অধিকারও ছাড়বে না৷ এক দ্বিপাক্ষিক চুক্তির আওতায় এই বোঝাপড়া চূড়ান্ত রূপ পাবে৷ সেইসঙ্গে জার্মানি একশো কোটি ডলার অংকের নতুন এক তহবিলে অর্থ দিয়ে ইউক্রেনকে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির পথে অগ্রসর হতে সাহায্য করবে৷
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, ওয়াশিংটন এখনো এই পাইপলাইন প্রকল্পকে জার্মানি ও ইউরোপের জন্য খারাপ চুক্তি হিসেবে বিবেচনা করছে৷ তবে নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে সেই প্রকল্প বন্ধ করার সম্ভাবনা কম৷ তার চেয়ে হাতিয়ার হিসেবে রাশিয়ার জ্বালানি প্রয়োগের সম্ভাবনা বন্ধ করার প্রতি মনোযোগ দিচ্ছে বাইডেন প্রশাসন৷ প্রাইস অবশ্য জার্মানির সঙ্গে সম্ভাব্য দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেন নি৷ জার্মানি কিছু প্রস্তাব পেশ করেছে বলে তিনি স্বীকার করেন৷ মার্কিন সংসদে ডেমোক্র্যাটিক ও রিপাব্লিকান দলের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে বোঝাপড়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাইডেন প্রশাসন৷ সব পক্ষ রাজি হলে এমনকি বুধবারই জার্মানির সঙ্গে চুক্তির বিষটয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হতে পারে বলে কিছু সূত্র মনে করছে৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, এপি)