লিবিয়ায় নির্বাচন
১০ জুলাই ২০১২লিবিয়ার জাতীয় সম্মেলনের নির্বাচনকে ফুল মার্কস দিয়েছেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা, কিছু কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটা সত্ত্বেও৷ বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা, বিশেষ করে বিক্ষুব্ধ পূর্বাঞ্চলে ভোটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, এ'সবই ঘটেছে৷ তবুও ভোটাধিকারপ্রাপ্ত লিবীয়দের ৬৫ শতাংশ ভোট দিতে গেছেন৷ জাতিসংঘ খুশি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খুশি৷ অন্যান্য যে সব পশ্চিমি দেশ মুয়াম্মার গাদ্দাফির ৪২ বছরব্যাপী শাসনের অন্তে বিদ্রোহীদের সমর্থন করেছিল, তারা সবাই খুশি৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অ্যাসেসমেন্ট টিম'এর প্রধান জার্মানির আলেক্সান্ডার গ্রাফ লামসডর্ফ একটি সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, ‘‘প্রায় সব লিবীয় যে কোনোরকম ভয়ভীতি ছাড়াই ভোট দিতে পেরেছে, সেটা লক্ষণীয়৷'' বিক্ষিপ্ত ঘটনা যা ঘটেছে, তা' থেকে গোটা নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা চলে না, বলেন লামসডর্ফ৷ কিছু ব্যালট বক্স চুরি অথবা পোড়ানো, এবং দেশের পূর্বাঞ্চলে যে কিছু বিক্ষোভকারী স্বশাসনের দাবিতে প্রতিবাদ প্রদর্শন করেছে, তার কথাই বলছিলেন তিনি৷ যদিও বিক্ষোভে দু'জন মানুষের নিহত হবার কথাও শোনা গেছে৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই পর্যবেক্ষক দল রাজধানী ত্রিপোলি এবং পূর্বাঞ্চলের মুখ্য শহর বেনগাজি সহ বেশ কিছু শহর পরিদর্শন করেছে৷ এই বেনগাজিতেই গাদ্দাফির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল৷ ইইউ'এর পর্যবেক্ষকরা কিন্তু দক্ষিণের মরুভূমি এলাকায় পা দেননি, কেননা সেখানকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি উপজাতিদের সংঘর্ষের কারণে অনিশ্চিত৷
জেলা অনুযায়ী ভোটের ফলাফল ঘোষিত হবে, এবং সব মিলিয়ে মাহমুদ জিব্রিল'এর জাতীয় শক্তিজোটের এগিয়ে থাকার কথা৷ লিবিয়ার পরিস্থিতিতে এমনকি এই সাধারণ খবরটাও অসাধারণত্ব পেতে পারে৷ কেননা জিব্রিল'এর জোটে লিবিয়ার মুসলিম ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক শাখাও আছে৷ জিব্রিল নিজে পশ্চিমে পড়াশুনো করেছেন, কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ কিংবা উদারপন্থি, এধরণের তকমা পছন্দ করেন না৷ এবং তিনি এ'ও বলেছেন যে, শরিয়া অথবা ইসলামি কানুন হল তাঁর জোটের একটি নীতি৷ কাজেই জিব্রিল যে ইতিমধ্যেই সব দলের প্রতি একটি একদলীয় জোট সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছেন, তা'তে সোৎসাহ সাড়া না জাগারই কথা৷
বলতে কি, এই নির্বাচনের ফলাফল থেকেই যে দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয়ে যাচ্ছে, এমন নয়৷ কেননা সম্মেলনের ২০০ আসনের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলিকে দেওয়া হচ্ছে মাত্র ৮০টি আসন৷ বাকি ১২০টি আসন যাবে নির্দলীয় প্রার্থীদের কাছে৷ সম্মেলনের মূল কাজ হবে একজন প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রীসভা ঠিক করা এবং একটি এ'যাবৎ অলিখিত সংবিধানের ভিত্তিতে ২০১৩ সালের সংসদীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করা৷
একটি গোটা দেশের পক্ষে এ'ধরণের একটি নবসূচনায় সমস্যার পাশাপাশি সমাধানগুলিও লুকিয়ে থাকে৷ পুবের মানুষরা অসন্তুষ্ট এই কারণে যে, তারা লিবিয়ার তিনটি অঞ্চলের মধ্যে একটি হলেও, পশ্চিমাঞ্চলের ১০২টি আসনের তুলনায় পূর্বাঞ্চলকে মাত্র ৬০টি আসন বরাদ্দ করা হয়েছে৷ যদিও রাজধানী ত্রিপোলি ঐ পশ্চিমাঞ্চলেই পড়ে, পুবের মানুষরা কিন্তু এই বাঁটোয়ারায় আদৌ সন্তুষ্ট নয়৷ কাজেই নতুন সংবিধান রচনার সময় পুবের এই অসন্তোষ সম্পর্কে কিছু একটা ব্যবস্থা নিতে হবে৷ অবশ্য তা বলে লিবিয়া যে শেষ অবধি ফেডারাল রাজ্য হওয়ার দিকে যাবে, তার সম্ভাবনা কম বলেই বিশ্লেষকদের ধারণা৷
এএসসি / ডিজি (রয়টার্স, এএফপি)