ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইরানের হামলার জবাব দিলো পাকিস্তান
১৮ জানুয়ারি ২০২৪মাত্র দুই দিন আগে মঙ্গলবার রাতে ইরান পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে হামলা চালিয়েছিল। হামলার পর ইরানের সরকারি মিডিয়া বলেছিল, বেলুচিস্তানের জঙ্গি সংগঠন জৈশ আল-আদলের ঘাঁটি লক্ষ্য করে তারা হামলা চালিয়েছে এবং জঙ্গি সংগঠনটির দুটি শিবির ধ্বংস হয়েছে।
হামলায় দুই শিশু নিহত হওয়ার খবর দিয়েছিল পাকিস্তান, বলেছিল, ইরানের ‘উসকানিহীন ওই হামলা অগ্রহণযোগ্য'।
বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, "আজ সকালে ইরানের সিস্তান-ও-বেলুচিস্তান প্রদেশে সন্ত্রাসীদের আস্তানা লক্ষ্য করে অত্যন্ত সমন্বিত এবং বিশেষভাবে নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুলভাবে সামরিক হামলা চালানো হয়েছে। হামলায় বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে।”
পাকিস্তান ইরানের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্পূর্ণভাবে সম্মান করে- এমন দাবি করে ওই বিবৃতিতে আরো বলা হয়, "আজকের এই কর্মকাণ্ডের একমাত্র উদ্দেশ ছিল পাকিস্তানের নিজস্ব নিরাপত্তা এবং জাতীয় স্বার্থ, যা সর্বাগ্রে এবং এ বিষয়ে কোনো আপস করা যায় না।”
বৃহস্পতিবারের হামলার বিষয়ে ইরানের বক্তব্য
ইরানের সরকারি সংবাদ সংস্থা ইরনা (আইআরএনএ) দেশটির অশান্ত দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বিস্ফোরণের খবর দিয়েছে।
সিস্তান-বালুচিস্তান প্রদেশের একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ইরনা জানায়, "সারাভান শহর জুড়ে বেশ কয়েকটি এলাকায় বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া গেছে।”
ইরানি সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, একটি বিস্ফোরণে অন্তত তিনজন নারী ও চারজন শিশু নিহত হয়েছে। তাদের কেউই ইরানের নাগরিক নন।
ইরানের মেহর নিউজ এজেন্সির খবরে বলা হয়েছে, হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
তেহরান এ বিষয়ে ইসলামাবাদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে বলে খবর দিয়েছে ইরানের তাসনিম নিউজ এজেন্সি।
পাকিস্তানে ইরানের হামলার ক্ষয়ক্ষতি
গত মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় ইরান। পরে ইরানের সরকারি মিডিয়া জানায়, বেলুচিস্তানের জঙ্গি সংগঠন জৈশ আল-আদলের ঘাঁটি লক্ষ্য করে তারা হামলা চালিয়েছে এবং জঙ্গি সংগঠনটির দুটি শিবির ধ্বংস হয়েছে।
ইরানি মিডিয়ায় জৈশ আল-আদলকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘বিদেশি জঙ্গি সংগঠন' বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ‘উসকানিহীন ওই হামলায়' দুই শিশু নিহত এবং তিনজন আহত হওয়ার কথা জানানো হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মুমতাজ জহরা বালোচ বলেন, উসকানিহীন এই আকাশসীমা লঙ্ঘন অগ্রহণযোগ্য।
"অবৈধ এই কর্মকাণ্ডের জবাব দেওয়ার অধিকার পাকিস্তানের রয়েছে। ইরান সরকারের জন্য এটি একটি বার্তা, যা জানিয়ে দেওয়া হলো।”
পরদিন বুধবার ইরান থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নেয় পাকিস্তান। সেইসঙ্গে পাকিস্তানে নিযুক্ত ইরানি রাষ্ট্রদূতে ফিরে না আসার কথাও বলে।
শুধু রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহারই নয় বরং একটি যৌথ সীমান্ত বাণিজ্য কমিটির পূর্ব ঘোষিত বৈঠকও বাতিল করে পাকিস্তান। ইরানের চাবাহার থেকে পাকিস্তানের একটি বাণিজ্যিক প্রতিনিধি দলকেও ডেকে পাঠানো হয়।
দুই প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান ও ইরানের সম্পর্কে উত্তেজনা অবশ্য নতুন নয়। তবে মঙ্গলবারের ওই হামলা গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর আন্তঃসীমান্ত অনুপ্রবেশ ছিল।
যদিও ইরান জোর দিয়ে বলেছে, তারা শুধুমাত্র জঙ্গি ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামে অংশ নেওয়া ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরাব্দোল্লাহিয়ান একই দাবি করে বলেছেন, যাদের উপর হামলা হয়েছে ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে।
শুধু পাকিস্তানে নয়, বরং একদিন আগেই আরোদুই প্রতিবেশী সিরিয়া ও ইরাকে হামলা চালিয়েছে ইরান।
ইরান গত সোমবার প্রতিবেশী ইরাকে ‘ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদর দফতরে' ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।
গাজা যুদ্ধ ঘিরে মধ্যপ্রাচ্য এবং আশেপাশের অঞ্চলগুলোতে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।
তার মধ্যে ইরান ও পাকিস্তানের নতুন এই দ্বন্দ্ব আরো খারাপ দিকে মোড় নিতে পারে বলে মনে করেন উইলসন সেন্টার্স সাউথ এশিয়া ইন্সটিটিউটের পরিচালক মিখায়েল কুগেলম্যান।
তেহরান-ইসলামাবাদ উত্তেজনা হ্রাসে মধ্যস্থতা করতে বেইজিং এগিয়ে আসতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, "ইরান ও পাকিস্তান উভয় দেশের সঙ্গেই চীনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এবং চলমান সংকট যেন হাতের বাইরে বেরিয়ে না যায় বেইজিং নিশ্চয়ই তা চাইবে, নিজেদের স্বার্থেই চাইবে।”
পাকিস্তানের পাশাপাশি ইরাকও ইরান থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
এসএনএল/এসিবি (এএপি, এপি, ডিপিএ, রয়টার্স, বিবিসি)