কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে জ্বালানি ও খরচ সাশ্রয়
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩বার্লিনের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে অভিনব হিটিং ব্যবস্থা চালু আছে৷ ছাদে আছে সোলার প্যানেল৷ আরও আছে পাইপ, যেগুলো বিভিন্ন অ্যাপার্টমেন্ট থেকে আসা গরম হাওয়ায় পূর্ণ৷ আরও আছে এমন এক ব্যবস্থা, যা ভূমির ১০০ মিটার নিচ থেকে জিওথার্মাল এনার্জি পাম্প করে উপরে তোলে৷ এটি একটি টেকসই ব্যবস্থা - তবে অনেক জটিল৷
জটিল এই ব্যবস্থা সক্রিয় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই সফটওয়্যার৷ গ্রিন ফিউশন এআই এনার্জি ম্যানেজমেন্টের পাউল হোক বলছেন, ‘‘জ্বালানি কতখানি ব্যবহৃত হবে, তা আগে থেকে অনুমান করা হয়৷ এছাড়া কখন জ্বালানির ব্যবহার হচ্ছে, এবং কীভাবে সবচেয়ে ভালো ও কার্যকর উপায়ে জ্বালানি ব্যবহার করা যায়, তাও এখানে বিবেচনা করা হয়৷ নবায়নযোগ্য জ্বালানি হলে ভালো হয়৷ এভাবে গরম পানিতে গোসল করতে পেরেও খরচ ও কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমানো যায়৷’’
আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে জ্বালানির সম্ভাব্য ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা নেয় এই স্মার্ট ব্যবস্থা৷
পাউল হোক বলেন, ‘‘বর্তমানে যে হিটিং ব্যবস্থা আছে, সেটি বাইরের বর্তমান তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে কাজ করে৷ ভবিষ্যতের তাপমাত্রা জানার উপায় এই ব্যবস্থার নেই৷ কিন্তু আমাদের এআই সিস্টেম মানুষকে ভবিষ্যৎ দেখার সুযোগ করে দেয়৷ যেমন আমি জানি, আজ দুপুর ১২টায় সূর্যের আলো পাব, যা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে রাখতে পারবো৷ ভবিষ্যতে যখন আলো থাকবে না, সেদিন ঐ বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবো৷ ফলে কাজ থেকে ঘরে ফিরে সেদিন গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পারবো৷’’
ফ্রাঙ্কফুর্টে একটি ডাটা সেন্টারে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সহায়তা করছে এআই৷ সেখানকার হাজার হাজার কম্পিউটার অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় থাকে৷ তাই নিয়মিত সেগুলো ঠাণ্ডা করার প্রয়োজন হয়৷ সেজন্য নিচ থেকে পানি পাম্প করে উপরে সার্ভার পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়৷ আরও বেশি গরম হলে পানি ছাদ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়৷ এরপর আবার বেসমেন্টে পানি নিয়ে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু করতে হয়৷ এতে অনেক জ্বালানি খরচ হয়৷
এআই প্রযুক্তি সরবরাহকারী টোমাস ভেবার বলেন, ‘‘যখন বাইরে অনেক ঠাণ্ডা থাকে তখন শুধু কুলিং টাওয়ার নয়, পাম্পও কম কাজ করে৷ অর্থাৎ, একটা আরেকটার উপর নির্ভরশীল৷ আমাদের এআই ব্যবস্থা এই বিষয়টি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সমন্বয় করে৷ ফলে জ্বালানি কম খরচ করে ডাটা সেন্টারের কম্পিউটার ঠিক রাখা যায়৷’’
এআই এর কারণে বার্লিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পার্কে যখন প্রয়োজন হয় তখন হিটিং ব্যবস্থা চালু হয়৷ বিষয়টি পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে৷
ডাব্লিউআইএসটিএ বিজনেস লোকেশনসের লুকাস বেকার বলেন, ‘‘বছর দুই আগে, বছর শেষে হাতে মিটার রিডিং পাওয়ার আগ পর্যন্ত কোন ভবনে কত জ্বালানি ব্যবহার হচ্ছে, তা জানা সম্ভব ছিল না৷ এছাড়া জ্বালানি কখন বেশি ব্যবহৃত হয়েছে, তা বছর শেষে পাওয়া রিডিংয়ে দেখা যায় না৷’’
এআই-এর কারণে এখন, যখন যেখানে প্রয়োজন, শুধু তখন সেখানে গরমের ব্যবস্থা করা যায়৷
লুকাস বেকার বলেন, ‘‘কর্মীরা এখন তার নির্ধারিত কাজের জায়গা কখন গরম করতে হবে, তা ঠিক করে দিতে পারেন৷ যেমন সকাল ছয়টা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত অফিস করলে শুধু সেই সময়টুকু হিটিং ব্যবস্থা চালু রাখার ব্যবস্থা করা যায়৷ ছুটির সময় সেটা বন্ধও রাখা যায়৷ আমাদের এআই ব্যবস্থার কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছে৷''
এআই ব্যবস্থার কারণে হিটিং ব্যবস্থার কাজ কমে যায়৷ এতে জ্বালানির সাশ্রয় হয়৷
এই ব্যবস্থার উদ্ভাবকরা খরচের বিষয়টি প্রকাশ করতে চাননি৷ তবে তাদের দাবি, ব্যবহারের মাত্র এক বছরের মধ্যেই খরচ উঠে আসবে৷
মিলটো শ্মিড্ট/জেডএইচ
গত নভেম্বরের ছবিঘর দেখুন...